দেশে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে পোশাক কারখানা। চালু থাকা অনেক কারখানার অবস্থাও খারাপ। পোশাক শ্রমিক ছাঁটাই, ঠিকমতো বেতন-ভাতা না দেওয়া, নির্যাতন, কালো তালিকা তৈরিসহ পোশাক শিল্পে চলছে নানা ধরনের অস্থিরতা। এ অবস্থায় রাস্তায় নামতে শুরু করেছে পোশাক শ্রমিক ও বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নগুলো।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কয়েকশ' পোশাক শ্রমিক ও শ্রমিক নেতা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ, পতাকার্ যালি ও মানববন্ধন করেছেন। রাজধানীর দক্ষিণখানের চৈতী গ্রম্নপ ও সুপারটেক্স গার্মেন্টে বেআইনিভাবে চাকরিচু্যতসহ ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা ও হামলা-হুমকি-নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ বলেন, 'শ্রমিক ঠকানো ও নির্যাতনের আইন বন্ধ করুন। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেন। ট্রেড ইউনিয়ন করলে গার্মেন্ট সেক্টরের উৎপাদন বাড়বে। গার্মেন্ট সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। যেসব কারখানায় বিভিন্ন কারণে সংকট চলছে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্যাতন করা এবং তাদের ঠকানো হচ্ছে সেসব কারখানায় শ্রমিকদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।'
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, 'এ সংকট কাটাতে হলে আমাদের সংগঠিত হতে হবে। লড়াই করতে হবে। এছাড়া আমাদের এ সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো পথ নেই।'
সংগঠনের আরেক নেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, 'সরকার ও মালিকপক্ষ উভয়ে মিলেই এ চেষ্টা চালিয়েছে যে, গার্মেন্ট শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন দেওয়া যাবে না। সরকার ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতিকে (বিজিএমইএ) উদ্দেশ করে বলতে চাই, আপনারা যদি এ পাঁয়তারা করেন, তার জবাব শ্রমিকরা দেবেন।'
এদিকে পোশাক-শ্রমিক ছাঁটাই, নির্যাতন ও কালো তালিকা করে হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। এছাড়া আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ১০২ ও ১৯০ নম্বর ধারায় অনুস্বাক্ষরের দাবিতে পতাকার্ যালি করেছে জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন।
তারা বলেন, বাংলাদেশ নিম্ন আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছে। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও গড় আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। জিডিপি বৃদ্ধির হালে সবচেয়ে বেশি অবদান তৈরি পোশাক শিল্পসহ দেশের শ্রমিকদের। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশনের ১০২ ও ১৯০ অনুস্বাক্ষর এখনো করেনি সরকার। ফলে পোশাক শিল্পসহ সব শ্রমিক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। যৌন নির্যাতনের শিকারও হচ্ছেন নারী পোশাক শ্রমিকরা। আইএলও কনভেনশনের এ দুই ধারায় অনুস্বাক্ষর ও নারী পোশাক শ্রমিকদের যৌন নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান তারা।