যাযাদি ডেস্ক
জেলায় জেলায় ঘুরে ঘুরে খুন করা বাবু শেখ নামের এক 'সিরিয়াল কিলার'কে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে 'অনেক হত্যাকান্ডের' জট খুলে গেছে।
নাটোরের লালপুরের আব্দুলপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক আকবর আলী জানান, রোববার রাতে ২০টি খুনের দায়ে অভিযুক্ত বাবু শেখ বিচারিক হাকিম সুলতান মাহমুদের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া বাবু শেখ ওরফে আনোয়ার হোসেন ওরফে আনার ওরফে কালু (৪৫) নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের জাহের আলীর ছেলে।
পরিদর্শক আকবর জানান, 'বাবু শেখকে চংধুপইলের আনছার সদস্য সাবিনা পারভিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দোষ স্বীকার লিপিবদ্ধ করার আবেদন করা হয়।
দীর্ঘ সময় ধরে বিচারকের খাস কামরায় বাবু শেখ খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।'
এর আগে রোববার নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) এ কে এম হাফিজ আক্তার আগের রাতে নাটোর রেলস্টেশন থেকে গ্রেপ্তার হওয়া বাবু শেখের অপরাধের তথ্য তুলে ধরেন।
বাবুর অপরাধের সব তথ্য-প্রমাণ এখন পুলিশের হাতে থাকার কথা জানিয়ে ডিআইজি বলেন, 'তাকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে এই এলাকার বেশ কিছু ক্লু-লেস মার্ডারের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে সে ২০টি খুনের কথা স্বীকার করেছে। তবে আটটি খুনের সঙ্গে তার সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।'
এ সব হত্যাকান্ডের মধ্যে রয়েছে- চংধুপইলের সাবিনা পারভিন হত্যা, জয়ন্তীপুরের রেহেনা বেগম হত্যা, নাটোরের নলডাঙ্গার বাঁশিলার আমেনা বেওয়া হত্যা, খাজুরার স্কুলছাত্রী মরিয়ম খাতুন লাবনী ধর্ষণ-হত্যা, সিংড়ার বিগলগলিয়ার শেফালী খাতুন হত্যা, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার বাঁশতৈল গ্রামের রুপ বানু হত্যা, একই জেলার সখিপুর থানার তক্তারচালা গ্রামের সমলা বেওয়া হত্যা, নওগাঁ জেলা সদরে ২০০৭ সালের একটি হত্যাকান্ড।
ওই সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি হাফিজ আক্তার ও নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, বাবু শেখ সবার আড়ালে আবডালে থাকা একজন ভয়ঙ্কর ব্যক্তি। সে খুনের পাশাপাশি চুরি ও ধর্ষণ করতেও পারদর্শী।
পুলিশ সুপার লিটন বলেন, '৯ অক্টোবর রাতে নাটোরের লালপুরের চংধুপইল গ্রামের আনছার সদস্য সাবিনা পারভিন (৩২) ও বাগাতিপাড়ার জয়ন্তীপুর গ্রামের রেহেনা বেগম (৬০) নিজের ঘরে খুন হন। এ সময় তাদের ঘর থেকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন চুরি হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় দুটি হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা পুলিশের জন্য মুশকিল হয়ে পড়ে।'
তদন্তের ধারাবাহিকতায় ১৫ অক্টোবর সিংড়া থেকে রুবেল আলী (২২) নামে একজনকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর সাবিনা পারভিন হত্যার সময় চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকারের ক্রেতা নাটোর শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. লিটন খাঁকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি।
তার দেওয়া তথ্যে ১৬ অক্টোবর নাটোর রেলস্টেশন থেকে আসাদুলকে (৩৬) গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, 'জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ওই দুটি খুনের ঘটনার সঙ্গে রুবেল আলী ও বাবু শেখের সম্পৃক্ততার কথা জানান।
সেই সূত্র ধরে ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় পুলিশ বাবু শেখকে নাটোর রেলস্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করে।'
বাবু শেখের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার ভায়রা শাহীন আলীর (৩৫) কাছ থেকে নিহত সাবিনার চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।
এক সময় চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে লোকজন বাবু শেখকে গ্রামছাড়া করে। সেই থেকে সে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে অপরাধ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন।
পরিদর্শক আকবর আলী জানান, জবানবন্দি গ্রহণের পর তাকে নাটোর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।