বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সরকার নিজেদের উন্নয়নের রোল মডেল বললেও তারা হলো গণতন্ত্রহীনতার রোল মডেল। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের রোল মডেল। এ সরকার একদলীয় শাসনের রোল মডেল। ভোটের অধিকার হরণ করার রোল মডেল, ভোট চুরির রোল মডেল, বিনা ভোটে সরকার গঠন করার রোল মডেল। পৃথিবীর কোথাও এ রকম রোল মডেল পাবেন না।
শনিবার বিকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
২০১৯ সালকে সরকারের মরণকাল দাবি করে মওদুদ আহমদ বলেন, গত দশ মাসে যত ঘটনা ঘটেছে সবগুলোর সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগ জড়িত। যুবলীগ-ছাত্রলীগের তান্ডবে মানুষ অতিষ্ঠ। এ যুবলীগ-ছাত্রলীগের ঘটনা আগে আমরা জানতাম না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী ভিসির সঙ্গে ৮৬ কোটি টাকার টেন্ডার ভাগাভাগি করতে গেছে। এরপর যুবলীগ নেতা সম্রাট, যুবলীগ পরিচয়ধারী জি কে শামীমের নামগুলো আগে জানতাম না। শামীমের অফিসে ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। আর আমার নেত্রী খালেদা জিয়া এক বছর আট মাস ধরে কারাগারে।
বাংলাদেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে টর্চার সেল রয়েছে উলেস্নখ করে বিএনপির এ প্রবীণ নেতা বলেন, বুয়েটে ১০টি টর্চার সেল ছিল। এ টর্চার সেলের কাজই হলো ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের নিয়ে টর্চার করা। আমরাও লেখাপড়া করেছি। কিন্তু এ টর্চার সেলের কথাতো চিন্তাই করতে পারি নাই।
বুয়েট-ছাত্র আবরার ফাহাদকে কেন হত্যা করা হয়েছে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, গত দশ বছরে এ সরকার শুধু দিয়েছে। কিন্তু দেশের জন্য এক ফোঁটা পানিও আনতে পারেনি। আগে ট্রান্সশিপমেন্টের কথা ছিল। এখন আমাদের রাস্তা দিয়ে তাদের গাড়ি যাবে। উপকূলে ভারতের রাডার সিস্টেম করা হবে। কিসের জন্য নিরাপত্তা সার্ভিলেন্সের জন্য? কাদের নিরাপত্তা, আমাদের না, প্রতিবেশি দেশের? এর চেয়ে বড় সার্বভৌমত্ব আর কিছু হতে পারে না। আর এসব প্রতিবাদ জানানোর জন্য ফাহাদ মৃতু্যবরণ করেছেন। ফাহাদ একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
তিনি বলেন, আমি সব সময় বলেছি আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে রাজপথে নামতে হবে। রাজপথ ছাড়া কোনো দেশে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন সফল হয়নি। আমাদেরও সেই একটাই পথ। যদি আমরা পারি তাহলে সফল হবো। খালেদা জিয়া কোনো দিন প্যারোলে মুক্তি চাইবেন না। যারা প্যারোলের কথা বলেন, তারা ভুল বুঝে বলেন না হলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বলেন। প্যারোলে নয় রাজপথেই খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে।
নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন, নিতাই চন্দ্র রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, আসিফ নজরুল, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উলস্নাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, সুকোমল বড়ুয়া, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারেফ হোসেন, বিএনপি নেতা মীর সরফত আলী সপু, মাহবুবুল হক নান্নু, আব্দুল আউয়াল, শিরীন সুলতানা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, আবু নাসের রহমাতুলস্নাহ প্রমুখ।