বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
সাত সদস্যের কমিটি

উপবৃত্তি বণ্টন নিয়ে টানাহঁ্যাচড়া

২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইনের মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন কথা ছিল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপবৃত্তি প্রকল্পের মেয়াদ যখন শেষ হবে, তখনই সেটি এই ট্রাস্ট ফান্ডের মধ্যে একীভূত হবে। কিন্তু নানা কারণে এ উদ্যোগ গত ৭ বছরেও সম্ভব হয়নি
নূর মোহাম্মদ
  ২০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

সম্প্রতি ৫ বছর মেয়াদি সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি (এইচএসপি) প্রকল্পটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সব উপবৃত্তি এখন একটি প্রকল্প থেকে বণ্টন হবে। সেই বণ্টন কে করবেন তা নিয়ে 'প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট' ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের 'শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি'র (এসইডিপি) মধ্যে টানাহঁ্যাচড়া শূরু হয়েছে। নতুন এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর কয়েক শ কোটি টাকা উপবৃত্তি বণ্টন হবে মোবাইল ব্যাংকিং বা থার্ড পার্টির মাধ্যমে। সেখান থেকে কমিশন খাওয়া, বিদেশ সফর ভাগানোর মতো নানা সুযোগসুবিধা নিতেই এ টানাহঁ্যাচড়া করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইনের মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন কথা ছিল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপবৃত্তি প্রকল্পের মেয়াদ যখন শেষ হবে, তখনই সেটি এই ট্রাস্ট ফান্ডের মধ্যে একীভূত হবে। কিন্তু নানা কারণে এ উদ্যোগ গত ৭ বছরেও সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উপবৃত্তি এক ছাতার নিচে আনার নামে মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এসইডিপি) নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকে বণ্টন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্টরা। এরপর বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নজরে আনেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সব উপবৃত্তি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের অধীনে আনার জন্য নির্দেশ দেন মন্ত্রী। ফলে এসইডিপির অধীনে সব উপবৃত্তি প্রকল্প এসইডিপির অধীনে নেওয়ার প্রক্রিয়া আটকে গেল।

অভিযোগ রয়েছে, সব উপবৃত্তি প্রকল্প ট্রাস্ট ফান্ডে একীভূত করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা ক্যাডারের এক শ্রেণির কর্মকর্তা। তারা মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকদের যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন, যেসব উপবৃত্তি প্রকল্পে বিদেশি দাতাগোষ্ঠী অর্থায়ন করে, ট্রাস্ট ফান্ডের অধীনে সেগুলো নেওয়া হলে তারা (দাতা) অর্থ দেবে না। এ অবস্থায় উপবৃত্তির মতো জনপ্রিয় কাজে কোনো বিরতি বা ব্যর্থতা দেখা দিলে তা জনরোষ তৈরি করবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, বিশ্ব ব্যাংক উপবৃত্তির টাকা ঋণ হিসেবে দেয়। সেজন্য এ টাকা ট্রাস্ট থেকে বিতরণ করা যাবে কি না, তা নিয়ে আইনগত সমস্যা আছে কি না তা নিরসন করতে শিক্ষা, অর্থ মন্ত্রণালয়, উপবৃত্তি প্রকল্পসমূহ, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট সমন্বয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আইনগত বিষয়াদি, শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের জনবল, অতিরিক্ত কি পরিমাণ জনবল লাগবে তা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে চালু হচ্ছে অবৈতনিক শিক্ষা। পর্যায়ক্রমে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও তা চালু করা হবে। এসইডিপি এর অধীনে 'সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি (এইচএসপি)' শীর্ষক স্কিমের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। শতভাগ শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সরকার বহন করবে। কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করতে গত ৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে সভা করা হয়।  সভাসূত্রে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিউশন ফি বাবদ শিক্ষার্থীর প্রতি মাসে যে টাকা নির্ধারণ করত তা সরকার সরাসরি প্রতিষ্ঠানে পাঠাবে। আর সর্বনিম্ন টিউশন ফি ৩৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাবের সভায় অংশ নেওয়া অধিকাংশই মত দিয়েছেন। কিন্তু সর্বোচ্চ টিউশন ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শহরের শিক্ষা ব্যয়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের নিয়ে কয়েকটি কর্মশালা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়ন করা হলে আদৌ উপবৃত্তি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এ ব্যাপারে কমিটির সদস্য সচিব ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অরুণা বিশ্বাস যায়যায়দিনকে বলেন, কমিটিকে পাঁচটি এজেন্ডা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। সেগুলো নিয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর একটি সভা হয়েছে। আরও কয়েকটি সভা করতে হবে। এরপর কমিটি সংশ্লিষ্টদের কাছে তাদের সুপারিশ পেশ করবে।

জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এই কমিটির গঠন ছাড়াও কমিটির পাঁচটি কর্মপরিধি নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের বর্তমান জনবল কাঠামো পর্যালোচনা, ৬ষ্ঠ থেতে স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত সকল উপবৃত্তি কার্যক্রম সম্মিলিতভাবে ট্রাস্ট হতে পরিচালনার লক্ষ্যে অতিরিক্ত জনবলের প্রয়োজনীয়তা যাচাইকরণ এবং বিভিন্ন গ্রেডে অতিরিক্ত পদ সৃষ্টির সুপারিশ। এছাড়া উপবৃত্তি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টে এমআইএস স্থাপনের মাধ্যমে শক্তিশালীকরণের বিষয়ে সুপারিশ প্রদান, উপবৃত্তি বিতরণ কার্যক্রমে মাউশি অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর বা সংস্থাসমূহের কী ধরনের ভূমিকা থাকবে তা নির্ধারণ করে দিতে বলা হয়েছে। অপরদিকে গত ৩০ জুন এসইডিপির অধীনে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের সব উপবৃত্তি কার্যক্রম সমন্বিতভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে 'সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি (এইচএসপি)' শীর্ষক স্কিমটি ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বিভাগ অনুমোদন দেয়। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমদকে এসইডিপি প্রকল্পের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নতুন এ স্কিমটি চালু করতে সম্প্রতি শেষ হওয়া উপবৃত্তি প্রকল্পগুলোর মেয়াদ না বাড়ানোর জন্য গত ১১ আগস্ট সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন  এসইডিপির বিভিন্ন কার্যক্রম অনুমোদিত স্কিমের আওতায় বাস্তবায়িত হবে।

জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে স্নাতক পর্যন্ত ৪০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উপবৃত্তির জন্য চারটি প্রকল্প আছে। এগুলো হচ্ছে-এসইএসপি (মাধ্যমিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রকল্প), এইচএসএসপি, সেকায়েপ ও সেসিপ। এর মধ্যে প্রথম দুটির অর্থায়ন করে সরকার। পরের দুটিতে সরকারের পাশাপাশি যথাক্রমে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি অর্থায়ন করে। এছাড়া স্নাতকের শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71948 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1