বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
চুক্তি, আবরার হত্যা

বিএনপির দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

যাযাদি রিপোর্ট
  ১১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:১৪
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। পাশে মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় -যাযাদি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে স্বাক্ষরিত দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল এবং চুক্তির বিরোধিতার কারণে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যার প্রতিবাদে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামীকাল ১২ অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশের মহানগর সদরে এবং রোববার সারাদেশের জেলা সদরে জনসমাবেশ হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির পক্ষে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উলস্নাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচি ঘোষণা করে ড. মোশাররফ দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে দল-মত নির্বিশেষে খালেদা জিয়াকে মুক্ত এবং অবৈধ সরকারের পতনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আগামী দিনে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। ড. মোশাররফ বলেন, বিএনপি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সমতাভিত্তিক সুসম্পর্ক চায়। কিন্তু এ সরকার যা করছে তাতে দেওয়া-নেওয়ার বিষয়ে নেই- আছে শুধু দেওয়ার। দেশের স্বার্থ হানিকর এমন অসম চুক্তির অধিকার জনগণ এ সরকারকে দেয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে বিস্তারিত বিএনপি জানতে চায় এবং দেশের স্বার্থ হানিকর সব চুক্তি বাতিল চায়। তিনি বলেন, ফেনী নদী আগে বাংলাদেশেরই নদী ছিল- যৌথ নদী ছিল না। বর্তমান সরকার আরও ৬টি যৌথ নদীর সঙ্গে ফেনী নদীর নাম সংযুক্ত করে একসঙ্গে এসব নদীর পানি বণ্টন দিয়ে আলোচনায় রাজি হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই পানি না দিলে সাব্রম্নম শহর কারবালা হয়ে যেত বলে মন্তব্য করেছেন। কারবালা কারোরই কাম্য নয়। কিন্তু ফারাক্কা ও তিস্তার পানি ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় দেশ মরুকরণ ও লাখো মানুষের আর্তনাদ তার কানে পৌঁছে না। ফেনী নদীতে শুকনা মৌসুমে পানির অভাবে চাষাবাদের ক্ষতি, মুহুরী প্রকল্প অকার্যকর হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখেও সরকার সাব্রম্নমকে কারবালা হতে না দিতে যতটা উদ্যোগী নিজের দেশের জনগণের আহাজারি, আর্তনাদ ও সর্বনাশ তাদের কাছে ততই মূল্যহীন। ড. মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশ এলপিজি আমদানি কারক দেশ হয়ে প্রতিবেশীর প্রয়োজনে তা রপ্তানির জন্য ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এবং বেক্সিমকো এলপিজি ইউনিট-১ কে লাভবানের উদ্যোগ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীবিশেষকে লাভবান করবে- দেশকে নয়। দেড় হাজার কিলোমিটার পথের স্থলে এখন মাত্র ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এলপিজি গ্যাস ভারত পৌঁছবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশের স্বার্থে বিদেশিদের গ্যাস দিতে রাজি হননি বলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেননি। এবার আমদানি করা ডিউটি ফ্রি এলপিজি দেওয়ার উদ্দেশ্য তাহলে কী? আসামের নাগরিক পঞ্জির কারণে কয়েক লাখ আসামবাসীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে ইতিবাচক কোনো স্পষ্ট প্রতিশ্রম্নতির উলেস্নখ নেই বলে দাবি করেন ড. মোশাররফ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

২০ দলের দাবি

অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সব ধরনের স্বদেশবিরোধী চুক্তি বাতিল ও বুয়েট-ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যার প্রতিবাদ এবং খুনিদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে ২০ দলীয় জোট।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জোটের বৈঠক শেষে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একথা জানানো হয়।

২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি ভারত সফরকালে তিস্তার পানিসহ বাংলাদেশের স্বার্থে কোনো অর্জন ছাড়াই ফেনী নদীর পানি প্রদান, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর নির্বিঘেœ ব্যবহারের অনুমতি, আমদানিকৃত এলপিজি ভারতে রপ্তানি এবং সমুদ্র উপকূলে যৌথ নজরদারির বিষয়ে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে, ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে দেশ এবং দেশের জনগণের স্বার্থবিরোধী এসব চুক্তি ও সমঝোতা বাতিলের দাবি জানাই। বুয়েট-শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের নৃশংস হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এই হত্যার সঙ্গে দায়ী সকল অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিএনপি কর্তৃক আগামী ১২ ও ১৩ অক্টোবর দেশের সকল বিভাগ ও জেলা সদরে গণসমাবেশ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসব সভায় উপস্থিত হয়ে ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ সংহতি জানাবেন বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া আবরারের হত্যাকা-ের প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার স্মরণসভা করবে বলে জানান তারা।

মাওলানা নুর হোসেন কাশেমীর সভাপতিত্বে ২০ দলীয় জোটের সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, জোটনেতা মোস্তফা জামাল হায়দার, মাওলানা আব্দুল হালিম, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, লুতফর রহমান, মাওলানা আব্দুল করিম, অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ড. মো. নেয়ামুল বশির, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, সৈয়দ ইহসানুল হুদা, মাওলানা মহিউদ্দিন একরাম, কারি মো. আবু তাহের, মাহমুদ খান, এম এম শাওন সাদেকী ও জোটের সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম খান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে