বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে কাঁটাতারের বেড়া

বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তথ্য
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:২২
বৃহস্পতিবার বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল -বাংলানিউজ

রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা বাড়াতে ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি সেখানে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নতুন একটি ইউনিটও মোতায়েন করা হবে। বৃহস্পতিবার নিজের কার্যালয়ে বিদেশি কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ও এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সকালে প্রায় দুই ঘণ্টার এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট আর্ল মিলার, কানাডার হাইকমিশনার বেনোইট প্রিফন্টেইন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ মাসের শুরুর দিকে (৪ সেপ্টেম্বর) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনে শরণার্থী শিবিরের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বর্তমানে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও পাহাড়ি এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ার অনুপস্থিতির কারণে জোরপূর্বক বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গা নাগরিকরা ক্যাম্প ছেড়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর আলোকে ক্যাম্প এলাকায় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কাঁটাতারের বেড়া/ওয়্যার ফেন্সি/সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা জরুরি।' কাঁটাতারের বেড়ার বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিক জানতে চেয়েছিলেন জানিয়ে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রাথমিক অবস্থায় এই কাজ শুরু হবে এবং কাঁটাতার দিয়ে বেড়া দেয়া হবে। 'কাঁটাতার দিয়ে বেড়া নির্মাণ করা হলে জেলখানা হবে কিনা এ রকম শঙ্কা তারা প্রকাশ করেছিল। আমি তাদের বলেছি পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের ব্যবস্থা আছে। টার্কি, সিরিয়ার শরণার্থী ক্যাম্প- এ সমস্ত উদাহরণ দিয়ে আমরা তাদের বলেছি।' কাঁটাতারের বেড়া তৈরির কাজ কবে শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মাত্রই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে এনজিওকর্মীরা তাদের কর্মীদের ভিসার বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। 'যারা রোহিঙ্গাদের সেবা দিতে আসবে তাদের ভিসা আমরা সবসময় দিয়ে আসছি। কিন্তু ইদানীংকালে দেখা যাচ্ছে যে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা। আমরা দেখছি, তারা একজন পুলিশকে হত্যা করেছে, যুবলীগের এক নেতাকে খুন করেছে। প্রায়ই দেখা যায় ক্যাম্পে মারামারি, হৈচৈ, নানান ধরনের বিশৃঙ্খলা।' রাতে নিরাপত্তাবাহিনী রাস্তা ছাড়া আর কোথাও টহল দিচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, সেজন্য ওয়াচ টাওয়ারসহ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করব, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করব, যাতে করে তাদের অবস্থান সব সময় আমরা মনিটরিং করতে পারি। আমরা এই প্রতিনিধি দলকে বলেছি ক্যাম্পে থাকা অনেক রোহিঙ্গা এখনও মেইনল্যান্ড অর্থাৎ মিয়ানমারে যাতায়াত করে এবং তারা ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে আসছে। কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যটাই হলো এ সমস্ত... এবং যাতে করে টেরোরিস্টদের নতুন করে কোনো ফায়দা না হয়। আর মানব পাচারকারীদের হাতে যাতে তারা না পড়ে। কাঁটাতারের বেড়া হলে কোনো সমস্যা হবে না এমন আশ্বাসও প্রতিনিধি দলকে দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা শুধু রোহিঙ্গাদের নজরদারিতে রাখতে চাই। এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার জন্য আর্মড পুলিশের ব্যাটালিয়নের নতুন একটি ইউনিট হচ্ছে। বিজিবি ওর্ যাবের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, যাতে করে আইনশৃঙ্খলা অটুট থাকে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৫৮৮ সদস্য নিয়ে গঠিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ১৪ ওই এলাকায় কাজ করছে। ওই ব্যাটেলিয়নের নেতৃত্বে রয়েছেন একজন পুলিশ সুপার। সেখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরেকটি ইউনিট তৈরির প্রস্তাব পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেয়া হয়েছে। বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে প্রতিনিধি দলের সবাই আন্তরিক। রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে আমাদের কোনো নতুন চিন্তাভাবনা আছে কিনা তা তারা জানতে চেয়েছেন। আমরা তাদের জানিয়েছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কতদিন থাকবে সেটা আমরা নিজেরাও জানি না। আমরা মনে করি যেকোনো সময় এই সমস্যাটার সমাধান হবে। তাদের বলেছি আমরা যে রকম কাজ করছি, আপনারাও কাজ করছেন। ইউনাইটেড ন্যাশন থেকেও বারবার প্রেসার দেয়া হচ্ছে মিয়ানমারকে, যাতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু তারা যাচ্ছে না এবং প্রতিবারই প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। রোহিঙ্গারাও ইন্টারেস্টেড হচ্ছে না তাদের দেশে যেতে। লাইফ সিকিউরিটি এবং অন্যান্য সিকিউরিটি তারা পাবে না যখন মনে করছে, সেজন্য তারা যাচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা রোহিঙ্গাদের সমাবেশ বিষয়ে জানতে চেয়েছিল এবং আমরা জানিয়েছি তারা সমাবেশ করেছে তাদের অধিকারের কথা, বেঁচে থাকার জন্য যে আকুতি, সারা পৃথিবীর কাছে জানিয়েছে। আমরা মনে করি তারা যথার্থভাবে জানিয়েছে। এদেশে জন্ম হওয়া রোহিঙ্গা শিশুরা যাতে ওই দেশের কারিকুলামে পড়াশোনা করে সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, বলেন মন্ত্রী। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে বলে জানান তিনি। তাদেরকে বলেছি যে, 'আমরা একটা সময় বেঁধে দিয়েছি। তারা যাতে করে বিদেশি টেরোরিস্টদের আওতায় না আসতে পারে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাতে রেডিকালাইজড না হয় সেজন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভাসানচর রেডি হয়ে আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসার পর তিনি যে নির্দেশনা দেবেন, প্রধানমন্ত্রী যেদিন বলবেন...।' রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান আসাদুজ্জামান খান কামাল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে