শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে জাবিতে আবার বিক্ষোভ

জাবি প্রতিনিধি
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে কোনো আন্দোলনেই পদ থেকে সরবেন না বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

মিছিল-পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা নাসরিন বলেন, 'আমরা আজকের অবস্থানে আসতে বাধ্য হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমন গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার পরে আর কোনোভাবেই এমন সম্মানীয় পদে থাকতে পারেন না।'

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, 'উপাচার্য একবার বলছেন- ছাত্রলীগ তার কাছে চাঁদাবাজি করেছে, আরেকবার বলছেন- চাঁদাবাজি করেন নাই। উপাচার্য কোনোভাবেই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিতে পারেন না। আমরা দুর্নীতির এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।'

উপাচার্যের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে এই অভিযোগ ফৌজদারি আইনে বিচার হওয়ার যোগ্য। এর প্রমাণ হলে আপনাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।'

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র আশিকুর রহমান বলেন, 'আমরা প্রথম থেকে বলেছি ছাত্রলীগকে প্রকল্পের টাকা দেয়া হয়েছে। একজন শ্রমিকের ট্যাক্সের টাকা ছাত্র নেতাদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা করা হয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। আমরা উপাচার্যকে পদ ছেড়ে দিতে বলছি। অন্যথায় সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাকে পদ ছাড়তে বাধ্য করবে।'

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন, ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য রাকিবুল রনি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার, ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সাধারণ সম্পাদক মাহাথির মুহাম্মদ, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন শিশির প্রমুখ।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা আলোচনা শেষে নতুন কলা ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। এ ছাড়া আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে আজকের বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তবে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম আন্দোলন কিংবা আলটিমেটামে পদত্যাগ করবেন না বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'কোনো আন্দোলনের মুখে আমি পদত্যাগ করব না। যারা এই পদে বসিয়েছেন তারা চাইলে পদ ছেড়ে দেব। তা ছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয় তো শুধু আন্দোলনকারীদের নয়, আরও অনেকে তো আছে। তারা তো আর পদত্যাগ চাইছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি নির্দেশ দেন তবে পদ থেকে সরে যাব। আর যদি আমাকে নির্দেশ না দেন তবে আন্দোলনকারীদের গালমন্দ খেয়েও থেকে যাব।'

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে

জাবি ভিসি

ছাত্রলীগকে কমিশন দেয়ার অভিযোগ ওঠা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৪১ মিনিটে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কক্ষে প্রবেশ করেন উপাচার্য। প্রবেশ করার সময় এই সাক্ষাৎ পূর্বনির্ধারিত কি না, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, 'এটা পূর্বনির্ধারিত।'

সাক্ষাৎ শেষে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন ফারজানা ইসলাম। এ সময় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি। সাংবাদিকরা জানতে চান, 'ম্যাডাম, আপনার পদত্যাগের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা করেছেন?' কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।

উপাচার্যের সঙ্গে কী নিয়ে কথা হলো জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'এটা একটা বিচ্ছিন্ন জিনিস। উনি আসছেন আমার কাছে, উনি মাঝে মাঝেই আসেন, আলাপ-আলোচনা হয়। সেজন্যই আসছেন উনি।'

মন্ত্রী আরও বলেন, 'উনি প্রায়শই আসেন, ফোন করেন। স্পেশাল ও নির্দিষ্ট কোনো বিষয় ছিল না।'

উনি পদত্যাগ করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, 'এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না, আমরা কিছু শুনিওনি।'

জাহাঙ্গীরনগরের অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়ে যা শোনা গেছে, সে বিষয়ে কোনো কথা হলো কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এ ব্যাপারে আলাপ হবে কেন? অর্থ তো এখনো ডেসপাস হয়নি, এখনো কন্ট্রাক্ট শুরু হয়নি। এখনো কিছুই হয়নি। এখন অর্থ নিয়ে যে কাহিনি আমরা শুনতেছি, এগুলো আমার কাছে পদ্মা সেতুর মতো মনে হচ্ছে। কী হবে সেটা নিয়ে জল্পনাকল্পনা। এগুলো নিয়ে উনিই (ভিসি) ভালো বলতে পারবেন। এগুলো নিয়ে আমার সঙ্গে আলাপ হয়নি।'

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের পক্ষ থেকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) দায়িত্ব দেয়া হবে। এজন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে ছাত্রলীগের পদ হারানো সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের ফাঁস হওয়া ফোনালাপে জানা যায়, আলোচিত এক কোটি টাকা শাখা ছাত্রলীগকে 'ঈদ সালামি' হিসেবে দিয়েছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।

অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলে জাবি ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<67574 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1