শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাদা চিনিতে ক্যান্সারের ঝুঁকি খতিয়ে দেখবে বিএসটিআই

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া সাদা চিনিতে নিষিদ্ধ সোডিয়াম সাইক্লামেটের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বাজার থেকে নামিদামি ব্রান্ডের ১৬টি নমুনা সংগ্রহ করে সিঙ্গাপুরের প্যাসিফিক ল্যাবে পাঠানো হলে সেখানকার পরীক্ষায় চিনিতে মিষ্টিবর্ধক এই উপাদান পাওয়া যায়। গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) কর্মকর্তারা মনে করছেন, জ্ঞাত বা অজ্ঞাতভাবে চিনিতে মিশছে এই উপাদান। বাজার তদারকির সঙ্গে জড়িত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছে।

বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, চিনি বাইরে থেকে আমদানি করা হয়। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। এ ক্ষেত্রে আমরা কৃষি মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চাইব। চিনিতে যদি ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়, তবে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. হারুন-উজ-জামান ভূঁইয়া বলেন, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের

বিষয়টি বিএসটিআইয়ের হাতে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা হয়তো তাদের নিজস্ব ল্যাবে চিনি পরীক্ষা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

তবে বিএসটিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটির পরিচালক (কেমিক্যাল) পঙ্কজ কুমার কুন্ডু বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়ার কথা জানিয়েছেন।

বিএআরসি সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসে বাজার থেকে নামিদামি ব্র্যান্ডসহ খোলা চিনির ১৬টি নমুনা সংগ্রহ করে সিঙ্গাপুরের প্যাসিফিক ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানকার পরীক্ষায় সবক'টি নমুনাতেই পাওয়া যায় মিষ্টিবর্ধক সোডিয়াম সাইক্লামেট। এই রাসায়নিকটি ২০০৬ সালেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বাংলাদেশে। সম্প্রতি ওই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

এসব বিষয় সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ ও জনগণের সচেতনতা প্রত্যাশা করছেন গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএআরসির পরিচালক (পুষ্টি) ড. মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমানে সবাই স্বাস্থ্য সচেতন। চিনিসহ সব খাবার নিয়েই মানুষ এখন সতর্ক। চিনি ও লবণ সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যত কম খাওয়া যায়, তাই ভালো।

মনিরুল বলেন, চিনি নিয়ে মাঝেমধ্যেই সন্দেহ করা হয়, হয়তো এতে কোনো রাসায়নিক মেশানো আছে। বাজারে যে সাদা চিনি পাওয়া যায়, তা মূলত প্রক্রিয়াজাত চিনি। ৮০ ভাগ চিনি আসে বিদেশ থেকে, এর মধ্যে আধিকাংশই ব্রাজিল থেকে। কিন্তু প্রাকৃতিক চিনিতে কোনো কিছু মেশানোর সুযোগ নেই। সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ম্যাগনেশিয়াম সালফেট চিনিতে মিশিয়ে বাজারজাত করা হয় বলে বিভিন্নভাবে জেনে আসছি।

তিনি বলেন, আর্টিফিশিয়াল সুইটেনার শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। প্রতিটি পণ্যে এখন আর্টিফিশিয়াল সুইটেনার ৪৫ শতাংশ। জ্যাম-জেলি, আচার থেকে শুরু করে সব খাবারে আর্টিফিশিয়াল সুইটেনার ব্যবহার করা হচ্ছে। ঘনচিনি বা সোডিয়াম সাইক্লামেট জাপান ও আমেরিকাসহ বেশির ভাগ দেশেই নিষিদ্ধ। আবার অনেক দেশে ৭ মিলিগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। এটা চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ গুণ বেশি মিষ্টি। যেহেতু প্রাকৃতিক চিনিতে সোডিয়াম সাইক্লামেট মেশানোর সুযোগ নেই এবং ২০০৬ সালে আমাদের দেশে অন্যান্য দেশের মতো এটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই আমাদের দেশে বিক্রি হওয়া চিনিতে এটা যে পরিমাণেই থাকুক না কেন, সেটা নিষিদ্ধ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা এটা নিয়ে গবেষণা শুরু করি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, 'বাজারে থাকা ১২টি ব্র্যান্ডের চিনির নমুনা সংগ্রহ করি আমরা। খোলাবাজার থেকেও চারটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আন্তর্জাতিক নীতি মেনে আমরা ওইসব নমুনা সিঙ্গাপুরের প্যাসিফিক ল্যাবে পাঠাই। সেখানে পরীক্ষায় সব নমুনাতেই সোডিয়াম সাইক্লামেট পাওয়া গেছে। অধিকাংশ নমুনায় দশমিক এক মিলিগ্রাম সোডিয়াম সাইক্লামেট পাওয়া যায়। একটি নমুনাতে দশমিক শূন্য ৯ মিলিগ্রাম পাওয়া গেছে। গত ২৭ মে আমরা সিঙ্গাপুরে ওইসব নমুনা পাঠাই। এক সপ্তাহের মধ্যে ফলাফলও পেয়ে যাই। পরে সম্প্রতি আমরা এই ফল প্রকাশ করেছি।'

সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ ও জনগণের সচেতনতা এ ক্ষেত্রে জরুরি এমনটিই মনে করেন গবেষণায় যুক্ত এই কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<65907 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1