শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকি নিয়ে শাটলের ছাদে চড়ছেন চবি শিক্ষার্থীরা

সাইফুল ইসলাম, চবি
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অন্যতম বাহন শাটল ট্রেন। শিক্ষার্থীর তুলনায় শাটলের বগি কম হওয়ায় প্রতিনিয়ত যাতায়াতে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। তাই প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত শাটলের ছাদে চড়ে যাতায়াত করছে শত শত শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের শাটলের ছাদে চড়া ও বহিরাগতের শাটলে উঠা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও কিছুতেই মানা হচ্ছে না প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা এবং কমছে না শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগও।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগর থেকে ছেড়ে আসা ৮.০০ ও ৯.৪৫ এবং ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যাওয়া ১.৩০ ও ২.৩০-এর শাটলে উপচেপড়া ভিড়ের চিত্র। ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের চেয়ে বেশি যাতায়াত করছে ঐ ট্রেনগুলোতে।

তাই বগির ভিতরে বসা কিংবা দাঁড়ানোর জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ট্রেনের ছাদে উঠতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরকে।

সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যাওয়া দেড়টার শাটলের ছাদে শিক্ষার্থীদেরকে উঠতে বাধা দিলে তারা ট্রেন অবরোধ করে রাখে। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ কর্তৃপক্ষ বার বার আশ্বাস দিলেও শাটলের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি আজও। দিন দিন শিক্ষার্থী বাড়লেও বাড়ছে না শাটলের বগি। ৭-৮টা পুরাতন বগি দিয়ে চলছে শাটল। এর মধ্য দুই একটা বগি ছাড়া বাকি বগিগুলো বেশ পুরাতন ও নড়বড়ে। নেই কোনো পাখার ব্যবস্থাও।

শাটলের বগি বৃদ্ধির জন্য অনেক দিন ধরে দাবি করে আসছে শিক্ষার্থীরা। গত বছর (২০১৮ সাল) ৮ আগস্ট সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১২-১৩ রবিউল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীর দুই পা শাটলের নিচে কাটা পড়ে। এই ইস্যুত ৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বর ও ষোলশহর রেল স্টেশনে শাটলের বগি বৃদ্ধিসহ ৪ দফা দাবিতে বিশাল বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা এবং তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. ইফতেখার চৌধুরী বরাবর স্মারক লিপিও দেন। তখন তাদের দাবি মেনে নিলেও তার তেমন কোনো কার্যকরিতা দেখেনি শিক্ষার্থীরা।

এবং সর্বশেষ এই বছরের ২৪ জুলাই বর্তমান সরকারের রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম জন শাটল পরিদর্শনে আসেন। সচক্ষে শাটলের দুর্ভোগের চিত্র দেখে শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক সুবিধা ও ওয়াইফাই সমৃদ্ধি এসি ট্রেন দেয়াসহ পুরাতন শাটল ট্রেনের বগিগুলোকে চেয়ার কোচ করে পাখা যুক্ত করার প্রতিশ্রম্নতি দেন। কিন্তু প্রতিশ্রম্নতির দেড় মাস হয়ে গেলেও এখনো তার কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সেই প্রতিশ্রম্নতি আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা এই নিয়েও শিক্ষার্থীদের মাঝে রয়েছে আশঙ্কা।

দর্শন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুম বিলস্নাহ বলেন, আমরা এখন ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি, ভর্তি হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা উন্নতি দেখলেও শাটল ট্রেনের কোনো উন্নতি দেখলাম না। আমি দ্বিতীয় বর্ষ থেকে শহর থেকে আসা-যাওয়া করি, ক্লাস সকাল নয়টায় শুরু হওয়ায় অধিকাংশ সময় ৮ টার ট্রেনে আসি। আমি মূলত ষোলশহর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠি, ঐ ট্রেনে বসার জায়গা তো দূরের কথা দাঁড়ানোর জায়গাও পাই না বেশিরভাগ সময়। তাছাড়া বগির ভিতরে পাখা না থাকায় অতিরিক্ত গরমে অসহ্য লাগে। তাই বাধ্য হয়ে শাটলের ছাদে করে যেতে হয়। কারণ ক্লাস না করতে পারলে উপস্থিতির হার কম থাকলে পরীক্ষা আসলে ঝামেলায় পড়তে হয়।

লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফারিহা হায়দার বলেন, ক্লাস শেষে ট্রেনের সিট ধরার জন্য ধাক্কাধাক্কি করে করে উঠতে হয়। অনেক সময় সিট পাই, তবে বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে যেতে হয়। বগিগুলোতে এত পরিমাণ বেশি মানুষ উঠে, বাহির থেকে বাতাস আসার মতো অবস্থা থাকে না। তাই উপায় না পেয়ে মাঝে মাঝে ঝুঁকি নিয়ে পা রাখার সিঁড়িতে বসে বাসায় যাই। ট্রেন রাস্তার দুপাশে ঘেঁষে গাছগাছালি থাকায় সেগুলো গায়ে লাগে। আবার মাঝে মাঝে কিছু দুর্বৃত্ত আছে যারা পাথর গায়ে ছুড়ে মারে। বিভিন্ন সময় এই পাথরের আঘাতে অনেকে আহতও হয়েছেন। তারপরও বাধ্য হয়ে আমাদেরকে ছাদে বা পা রাখার সিঁড়িতে বসে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কারণ কর্তৃপক্ষ আমাদের যাতায়াতের সুব্যবস্থা করতে পারছেন না।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের নিষেধ করা সত্ত্বেও অনেক সময় তাদের জরুরি প্রয়োজনে বগিতে জায়গা না পেয়ে ছাদে উঠে যায়। রেলওয়ের সঙ্গে আমাদের আগ থেকে নয়টা বগি দেয়ার চুক্তি রয়েছে। এই বিষয়ে কয়েকদিনের মধ্যে আমরা রেলওয়ের সঙ্গে বৈঠক করব। আশা করি অতি শীগ্রই আমরা বগিগুলো পেয়ে যাব। আর বগিগুলো পেলে আমাদের এই সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।

এই বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশ সুপার নওরোজ হাসান বলেন, ট্রেনের ছাদে উঠার ক্ষেত্রে আমরা জরিমানার বিধান রেখেছি এবং কাউকে ছাদে উঠতে দেখলে পুলিশ পিটিয়ে ছাদ থেকে নামিয়ে দেয়। কিন্তু শাটল ট্রেনের ব্যাপারটা আলাদা, আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একজন সচেতন নাগরিক। তাই আমরা তাদেরকে জোর করে বা পিটিয়ে ছাদ থেকে নামাতে পারবো না। আমরা তাদেরকে ট্রেনের ছাদে উঠতে নিষেধ করেছি। আশা করেছি তারা সচেতন নাগরিক হিসেবে এই নিষেধ মেনে ট্রেনের ছাদে উঠা থেকে বিরত থাকবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<65905 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1