শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিষ্ক্রিয় নেতাদের চাঙ্গা করতে বিএনপিতে নানা উদ্যোগ

স্থায়ী কমিটির বৈঠক আজ হাইকমান্ডের নজরদারি
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

নেতাদের নিষ্ক্রিয়তাতেই মূলত দল ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না- এ বিষয়টি চিহ্নিত করে নিষ্ক্রিয়দের তালিকা তৈরিতে নেমেছে বিএনপি। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী এবং পদধারী নেতারা কী করছেন তা মনিটরিং করছেন হাইকমান্ড। পাশাপাশি নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় করে তুলতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বিএনপি সূত্র মতে, জাতীয় নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর হতাশায় নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। দলীয় কঠোর কর্মসূচি দূরে থাক, মানববন্ধনের মতো সাদামাটা কর্মসূচিতেও নেতাদের অনেককেই দেখা যায়নি। সম্প্রতি ডেঙ্গু সচেতনতায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে ঢাকার বিএনপির প্রার্থীদের মাঠে থেকে কর্মসূচি সফল করার কথা বলা হলেও তাদের ২/৩ জনের বেশি এতে যোগ দেননি। সঙ্গত কারণে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পড়ে আছে অসংখ্য পোস্টার-লিফলেট। এর বাইরে আসন্ন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রস্তুতির কার্যক্রমেও পাওয়া যাচ্ছে না অনেককেই।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, একযুগ ধরে নির্যাতন, হামলা-মামলার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা আছে। নির্বাচনের পর তা আরও বেড়েছে। এ সময় দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এবং ধানের শীষের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরা যদি সক্রিয়ভাবে দলীয় কার্মকান্ডে অংশ নিতেন তাহলে কর্মীদের মধ্যে হতাশা কমিয়ে তাদের চাঙ্গা করা সম্ভব হতো। কিন্তু তাদের নিষ্ক্রিয়তায় দলে চাপ আরও বেড়েছে। এ জন্য সবাইকে সক্রিয় করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। কাউন্সিলকে সামনে রেখে সব নেতাকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও জনসম্পৃক্ত কর্মসূচিগুলোতে কারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন এবং কারা নিষ্ক্রিয় আছেন তা মনিটরিং করছেন খোদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আসন্ন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে জেলা-উপজেলাসহ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের সব নেতাকে সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশসহ প্রতিটি কর্মসূচিতে যারা নিষ্ক্রিয় থাকবেন, তাদের বিষয়ে নতুন করে ভাবা হবে।

সূত্র মতে, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে দীর্ঘদিন যেসব এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকান্ড নেই সেসব জায়গায় নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হবে। দলীয় কর্মকান্ডে গতি আনতে যোগ্য, ত্যাগী নেতাদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে নিষ্ক্রিয়দের বাদ দেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কর্মকান্ড না থাকায় জেলা-উপজেলাসহ প্রায় সব পর্যায়ে তালিকা করা হচ্ছে। এসব স্থানে কারা নিষ্ক্রিয় তাদেরও তালিকা হচ্ছে। যেসব ইউনিটে দীর্ঘদিন কমিটি পুনর্গঠন হচ্ছে না সেগুলো দ্রম্নত পুনর্গঠন করা হবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগীদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হবে। যাতে দল নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। শুধু মূল দল নয়, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনগুলোও পুনর্গঠন করা হবে। তবে এখনই যেসব সংগঠন পুনর্গঠন করা যাচ্ছে না সেসব স্থানে বিষয়ভিত্তিক কমিটি গঠন করে শূন্যস্থান পূরণ করা হবে। এর অংশ হিসেবে মহিলা দল থাকা সত্ত্বেও দলীয় নেতাদের নেতৃত্বতেই শুক্রবার নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ার লক্ষ্য নিয়ে 'নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম' নামে জাতীয় কমিটি গঠন করেছে বিএনপি।

সূত্র মতে, নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে সক্রিয়দের নেতৃত্ব আনতে চলতি বছরেই জাতীয় কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ডিসেম্বরে দলের ৭ম জাতীয় কাউন্সিল করার চিন্তা করছে বিএনপি। সেজন্য দ্রম্নত সাংগঠনিক জেলা শাখা পুনর্গঠনের কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা কাজও করছেন। নতুন কমিটিতে উচ্চ পদগুলোতে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতা কাদের আনা যায় তা নিয়েও চলছে পর্যালোচনা।

বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি ও নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় করার পরিকল্পনার বিষয়ে দলের একাধিক নেতা জানান, ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে রেখে নেতাকর্মীদের দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় করতে চাইছে দলের হাইকমান্ড। এ লক্ষ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিভাগের পর বড় জেলাগুলোতে সমাবেশ করা হবে। একই সঙ্গে বিগত আন্দোলনে মামলা-হামলাসহ নানা কারণে যেসব নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের সরাসরি সহযোগিতা করা হবে। তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। নিহতের পাশাপাশি আহত ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশ সফর করবেন। এসব কর্মসূচি পালনে কোন নেতারা সক্রিয় কাজ করছেন তাও মনিটরিং করা হবে।

নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা আছে। নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে নেতাকর্মীরা আবারও উজ্জীবিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আজ স্থায়ী কমিটির বৈঠক

দেশের চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। আজ শনিবার বিকাল ৫টায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বৈঠকে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, তার মুক্তি ও সুচিকিৎসা, ছাত্রদলের কাউন্সিল, বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পুনর্গঠন, ডেঙ্গু ও রোহিঙ্গা ইসু্যসহ দেশের চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63696 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1