শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চার হাজার একর জমি বেহাত হাত গুটিয়ে মিল্কভিটা

নতুনধারা
  ২১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
মিল্কভিটা ভবন

যাযাদি রিপোর্ট

বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডকে (মিল্ক ভিটা) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বরাদ্দ দেয়া পাঁচ হাজার একর গো-চারণ ভূমির চার হাজার একরই বেহাত হয়ে গেছে।

দীর্ঘ সময়েও জমি উদ্ধারে সরকারি সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির কোনো তৎপরতা না থাকায় 'উষ্মা' প্রকাশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি।

মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়। বৈঠকে মিল্কভিটার চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন লিপু উপস্থিত না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে কমিটি।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিল্ক ভিটাকে পাঁচ হাজার একর জমি বরাদ্দ দেন। বেহাত হতে হতে এখন মিল্ক ভিটার হাতে আছে এক হাজার একরের মতো জমি।

তিনি বলেন, 'মিল্ক ভিটার কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভিন্ন সময়ে অসাধু লোকজন জমি বরাদ্দ দিয়ে দখল করেছে। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে জমি দখল করেছে। এই জমি উদ্ধারে মিল্ক ভিটা কখনো আইনি লড়াইয়ে যায়নি। কমিটি এ জমি উদ্ধারে মিল্কভিটাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

মিল্ক ভিটার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে এসব জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।

বর্তমানে এ দুই জেলার প্রায় সাড়ে ৫০০ সমিতির ২৫ হাজার খামারি মিল্ক ভিটায় দুধ সরবরাহ করেন বলে সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িঘাট দুগ্ধ সমিতির ব্যবস্থাপক অমিয় কুমার মন্ডল জানিয়েছিলেন।

সম্প্রতি বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে সিসার উপস্থিতি পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও মঙ্গলবারের বৈঠকে আলোচনা হয়।

বৈঠকে মিল্ক ভিটার পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের পাস্তুরিত দুধে সহনীয় মাত্রার চেয়ে কম সিসা রয়েছে। এ সময় মিল্ক ভিটা কয়েকটি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে।

আ স ম ফিরোজ বলেন, মিল্ক ভিটার দুধে যেটুকু সিসা পাওয়া গেছে তা পানি থেকে গবাদি পশুর শরীরে গেছে। আমরা এ বিষয়ে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার সুপারিশ করেছি।

সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়, বৈঠকে সঠিক মান বজায় রেখে সিসা, ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ক্ষতিকারক উপাদানমুক্ত পণ্য উৎপাদনের সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে মিল্ক ভিটার আয়-ব্যয় ও মুনাফা নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি বার্ষিক দুধ উৎপাদন তিন লাখ লিটারে উন্নীত করার সুপারিশ করে।

কমিটির সভাপতি বলেন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মিল্ক ভিটার মুনাফা হয়েছিল ১১ কোটি এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ১২ কোটি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লাভ হয়েছে তিন কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যদি লাভ বেশি হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক আমলে লাভ কম হচ্ছে কেন? মিল্ক ভিটাকে তাদের মুনাফা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়ছে।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে

জানা যায়, গত বছর 'মিল্ক ভিটার দুরবস্থা' ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১৪ দফা সুপারিশ করে।

এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- মিল্ক ভিটা রক্ষায় জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন, গুঁড়া দুধ আমদানির ওপর সর্বোচ্চ করারোপ, প্রান্তিক-ভূমিহীন ও দরিদ্র খামারিসহ দুগ্ধ শিল্পে জড়িত নারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা, বেদখল হওয়া গো-চারণ ভূমি উদ্ধার, বিশেষ কিছু জমিতে সাধারণ ফসলের বদলে গরুর জন্য মানসম্মত ঘাস চাষ ও গরুর প্রজনন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ করা, দুগ্ধ শিল্পে বিদু্যৎ ব্যবহারে ক্ষুদ্র শিল্পের আওতায় বাণিজ্যিক বিল থেকে রেহাই দেয়া।

কমিটির সভাপতি জানান, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে মিল্ক ভিটা এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ওইসব সুপারিশ করে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মিল্ক ভিটাকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।'

মিল্ক ভিটার দুর্নীতিবাজ, অদক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই ও বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।

আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ওমর ফারুক চৌধুরী, ইসমাত আরা সাদেক, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মাহবুব উল আলম হানিফ, মির্জা আজম, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এবং জিলস্নুল হাকিম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63269 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1