যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর লালবাগের রহমতউলস্নাহ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাইয়েবা। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুরন্তপনায় মাতিয়ে রাখত ঘরবাড়ি। বাবার সাথে হাটে গিয়ে গরু কিনবে, বসুন্ধরা শপিং মল থেকে সুন্দর একটা জামা কিনবে এমন প্রতিশ্রম্নতি আদায় করেছিল সে। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে ভীষণ জ্বর। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। দুরন্ত তাইয়েবা সাত ডাকেও সাড়া দেয় না! শনিবার দুপুর ১টায় লালবাগের ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু টেস্ট করাতে নিয়ে আসে তার মা। রিসেপশনের পাশে বেঞ্চে মাথা কাত করে বসেছিল তাইয়েবা।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শিশুটির মা বলেন, মেয়েটা হঠাৎ করে নিস্তেজ হয়ে গেছে। ওর অসুস্থতায় ঈদের খুশি উবে গেছে। সবাই রাত পর্যন্ত ডেঙ্গুর রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় থাকবেন।
শুধু তাইয়েবা একা নয়, তার মতো আরও অনেক খুদে শিশুর এ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু টেস্ট করতে দেখা গেল। আর মাত্র দুদিন পর খুশির ঈদ। ডেঙ্গু জ্বরের আতঙ্কে এসব শিশুর ঈদের খুশি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল- শনিবার সকাল থেকে দেড়শর মতো রোগীর ডেঙ্গু টেস্ট করা হয়েছে। যার অধিকাংশই শিশু। গত কয়েকদিন
গড়ে ৬০০/৭০০ রোগী ডেঙ্গু টেস্ট করাতে এলেও ঈদের ছুটিতে মানুষ গ্রামে চলে যাওয়ায় টেস্টের সংখ্যা কমেছে। তবে টেস্ট বেশি হলেও ডেঙ্গু পজেটিভ কম বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক।
আজিম নামের এক কিশোর রিসেপশনে এসে জানায়, তার ডেঙ্গু পজেটিভ ও রক্তে পস্নাটিলেট ৭১ হাজারে নেমে গেছে। তাই সে ভর্তি হতে চায়।
এ সময় কর্তৃপক্ষ জানায়, এখানে শুধু টেস্ট করা হয়, রোগী ভর্তি নেয়া হয় না।
আরও ২ হাজার
১৭৬ জন হাসপাতালে
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে চলতি মাসের ১০ দিনেই ২০ হাজার ৩৮৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ১৬ হাজার ২৫৩ জন। এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ১৭৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার আগের এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২ জন। রাজধানী ঢাকাতেই এক হাজার ৬৫ জন রোগী এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ১১১ জন ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।
গত ২৪ ঘণ্টার হিসাবে ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছেন ৯০ জনের উপরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ হাজার ৮৪৪ জন।
বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। মৃতের সংখ্যা এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৯ জন বললেও বেসরকারি হিসাবে শতাধিক। প্রতিদিনই আক্রান্তের সঙ্গে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। জুন মাসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন এক হাজার ৮৮৪ জন। মে মাসে ১৯৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৯ হাজার ৩৯৫ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৯ হাজার ৪২০ জন।