শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
এ মাসের শেষে মুদ্রানীতি

আগ্রাসী ঋণে লাগাম টানা জরুরি

ঋণ বাড়লেও বিনিয়োগ বাড়েনি ঋণের অথের্ নিবার্চনী খরচ, পাচারেরও শঙ্কা সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর কৌশল নিধার্রণ উৎপাদনশীল এবং এসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা
যাযাদি রিপোটর্
  ২৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রয়োজন বলে মনে করছেন অথর্নীতিবিদরা। তাদের মতে, দেশের অথৈর্নতিক প্রবাহ, ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতি ও সহায়ক মুদ্রানীতি আসতে হবে।

এক্ষেত্রে বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গতানুগতিক নিয়মে না গিয়ে গুণগত দিকে বেশি নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে নিবার্চনী বছরে অথর্পাচার ও অবৈধ লেনদেন ঠেকাতে আগ্রাসী বিনিয়োগ বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সাবেক গভনর্র ও বিশেষজ্ঞরা।

চলতি মাসের শেষদিকে ২০১৮-১৯ অথর্বছরের (জুলাই-জানুয়ারি) মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভনর্র ফজলে কবির।

বতর্মান অথৈর্নতিক প্রেক্ষাপটে এ মুদ্রানীতি কেমন হওয়া উচিতÑ এ বিষয়ে জানতে চাইলে অথর্নীতিবিদ এবি মিজ্জার্ মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘মুদ্রানীতিতে সাধারণত বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ ও সুদহারের বিষয়ে নিদের্শনা থাকে। তবে আমাদের ব্যাংক ও বাজারের যে ধরন; তাতে বাজারভিত্তিক সুদহার নিধার্রণ হয় না। ব্যাংকের ঋণের সঙ্গে সুদহারের সম্পকর্ কম। তাই বাজারে ঋণপ্রবাহ ও সুদহারের ওপর মুদ্রানীতির প্রভাব তেমন পড়ে না।’

আসন্ন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সতকর্ হওয়ার পরামশর্ দিয়ে প্রবীণ এ অথর্নীতিবিদ বলেন, ‘নিবার্চনী বছরে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে গত কয়েক মাস ধরে ঋণপ্রবাহ বাড়ছে। গত মুদ্রানীতিতে জুন পযর্ন্ত ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তার চেয়ে বেশি বিতরণ হয়েছে। এটা মূলত নিবার্চনকেন্দ্রিক। নিবার্চনে খরচের জন্য আগে থেকেই ঋণ করা হচ্ছে। কিছু অথর্ পাচার হচ্ছে। ঋণের এ প্রবাহ নিবার্চনের আগ মুহূতর্ পযর্ন্ত অব্যাহত থাকবে।’

‘এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানতের অনুপাত (এডি রেশিও) কমাতে পরে। কিন্তু তারা উল্টো পথে হাঁটছে। তারা এটি কমিয়ে বাস্তবায়ন না করে তা শিথিল করেছে। যেখানে ঋণের সরবরাহ অনাকাক্সিক্ষতভাবে বেড়েছে। কিন্তু বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না, কমর্সংস্থানও বাড়ছে না। তাহলে এ ঋণ কোথায় যাচ্ছে? এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তদারকি বাড়াতে হবে এবং মুদ্রানীতিতে সুনিদির্ষ্ট দিকনিদের্শনা থাকতে হবে।’

এর আগে, ২০১৭-১৮ অথর্বছরের দ্বিতীয়াধের্র মুদ্রানীতিতে জুন পযর্ন্ত বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। যা প্রথমাধের্ ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬ শতাংশ। আগে ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রায় রাখা হয়। যার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, চলতি বছরে জাতীয় নিবার্চনের কারণে কালো টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বাজারে নগদ অথের্র প্রবাহে লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল গেল অথর্বছরের (জানুয়ারি-জুন) দ্বিতীয়াধের্র মুদ্রানীতিতে। এ ছাড়া ঋণের প্রবৃদ্ধি মাত্রাতিরিক্ত বাড়ার কারণে ঋণের লাগাম টেনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ আমানতের অনুপাত হার কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। তবে ব্যাংকগুলোর জোরাজুরিতে নতুন এ হার কাযর্করের সময়সীমা বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভনর্র ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মুদ্রানীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ নিধার্রণ করা। কারণ এখন তারল্য সংকট রয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো সুদহার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি ঊধ্বর্মুখী রয়েছে বিশেষ করে খাদ্রপণ্যের মূল্যস্ফীতি। আমদানি বেড়েছে, সেই হারে বাড়েনি রফতানি। রেমিট্যান্সের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থির। এ ছাড়া আগামীতে ব্যাংক

থেকে সরকার ঋণও নেবে। সব মিলিয়ে সামনে যে মুদ্রানীতি আসবে তা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জই হবে।’

এ পরিস্থিতিতে মুদ্রানীতি কেমন হওয়া উচিত- জানতে চাইলে সাবেক এ গভনর্র বলেন, ‘দেশের অথৈর্নতিক প্রবাহ, ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতি ও সহায়ক মুদ্রানীতি ঘোষণা দিতে হবে। এক্ষেত্রে গুণগত দিকে বেশি নজর দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী শুধু লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ না করে বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গেল মুদ্রানীতিতে বেশিরভাগ লক্ষ্যমাত্রই অজির্ত হয়নি। এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। গত বার ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ কিন্তু সেটি ১৮ শতাংশ অথার্ৎ আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকগুলো।’

তিনি বলেন, ‘বেসরকারি ঋণ কোন কোন খাতে যাচ্ছে এটি নিশ্চিত করতে হবে। এটা শুধু আমদানি আর সেবা খাতে চলে যাচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে।’ একই সঙ্গে বেসরকারি ঋণ উৎপাদনশীল ও এসএমই খাতে যেন যায় তা নিশ্চিতের তাগিদ দেন তিনি।

‘ব্যাংকগুলো সুদহার কমানোর যে ঘোষণা দিয়েছে তা কীভাবে বাস্তবায়ন করবে, এটি করলে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা তার সুনিদির্ষ্ট দিকনিদের্শনা ও বিভিন্ন কৌশল মুদ্রানীতিতের থাকা উচিত’ বলেও জানান তিনি।

‘বতর্মানে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার কিছুটা অস্থির’ উল্লেখ করে এ অথর্নীতিবিদ বলেন, ‘আমদানি চাপ বেড়ে যাচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণে কী করা যায় তার নিদের্শনা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু ডলার বিক্রি করে চাপ কমাবে- এটাও প্রকৃত সমাধান নয়। এক্ষেত্রে কীভাবে রেমিট্যান্স, এক্সপোটর্ বাড়ানো যায়, ইমপোটর্ কামনো যায়Ñ এসব বিষয়ে সঠিক কৌশল থাকতে হবে।’

সাবেক এ গভনর্র বলেন, ‘এটা নিবার্চনী বছর। এ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি ঋণের ক্ষেত্রে লাগাম না টেনে যদি ছেড়ে দেয়; তাহলে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করবে। নিবার্চনের জন্য অনেকে ঋণ চাইবে। তাই অহেতুক যেন ঋণ চলে না যায় সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

‘এ ছাড়া ৯ শতাংশে ঋণ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এখন প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ঋণ নেয়ার চেষ্টা থাকবে। এটিও যথাযথভাবে মনিটরিং করতে হবে।’ ব্যাংকিং খাতে এখন তারল্য সংকট চলছে। এ সময়ে সরকার যেন এ খাত থেকে ঋণ নিয়ে বাড়তি চাপ না দেয় সে বিষয়েও নজর রাখার পরামশর্ দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অজের্নর মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছর দুবার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। ছয় মাস অন্তর এ মুদ্রানীতি একটি অথর্বছরের প্রথম প্রান্তিকে অথার্ৎ জুলাইয়ে এবং অন্যটি জানুয়ারিতে প্রণয়ন ও প্রকাশিত হয়।

দেশের আথির্ক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূণর্। এর মাধ্যমে পরবতীর্ ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<5573 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1