শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নরসিংদীর সেই দগ্ধ তরুণী মারা গেলেন

নরসিংদী প্রতিনিধি
  ২৭ জুন ২০১৯, ০০:০০
ফুলন রানী বর্মণ

দীর্ঘ ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃতু্যর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন কলেজছাত্রী ফুলন রানী বর্মণ (১৮)। বুধবার সকাল ৬টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফুলন। মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল গাফফার (পিপিএম, বার)।

ফুলন রানী বর্মণ নরসিংদী পৌর এলাকার বীরপুর মহলস্নার যোগেন্দ্র চন্দ্র বর্মণের মেয়ে। তিনি গত বছর নরসিংদী শহরের উদয়ন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ জানায়, গত ১৩ জুন রাত সাড়ে ৮টায় শহরের বীরপুর বর্মণ পাড়াস্থ নিজ বাড়ির পাশেই একটি মুদির দোকান থেকে কেক কিনে ঘরে ফেরার পথে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা দুই দুর্বৃত্ত ফুলন রানীকে ধরে পাশের নির্জন স্থানে নিয়ে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ফুলনকে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, ফুলন বর্মণের শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এ ঘটনার পরদিন তার বাবা যোগেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ বাদী হয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আবদুল গাফফারকে। তিনি ফুলনদের জমি নিয়ে বিরোধ, প্রেমঘটিত ব্যাপারসহ নানা দিক নিয়ে তদন্ত করেন।

এ ঘটনায় এসআই আবদুল গাফফার গত ২০ জুন রাতে প্রথমে বীরপুর মহলস্নার মৃত কেশব চন্দ্র সূত্রধরের ছেলে রাজু চন্দ্র সূত্রধরকে (২২) গ্রেপ্তার করেন। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই এলাকার ফনিন্দ্র বর্মণের ছেলে আনন্দ বর্মণ (২১) ও কিশোরগঞ্জের ডাংরি এলাকার নারায়ণ বর্মণের ছেলে ফুলনের ফুফাতো ভাই ভবতোষ বর্মণকে গ্রেপ্তার করেন।

গত ২১ জুন রাজু বর্মণ ও ২২ জুন ভবতোষ বর্মণ ফুলনের শরীরে আগুন দেয়ার ঘটনার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তারা জানান, ফুলনের ফুফাতো ভাই ভবতোষের প্ররোচনায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ভবতোষ তার মামা যোগেন্দ্র বর্মণের জমি নিয়ে বিরোধের প্রতিপক্ষ পার্শ্ববর্তী শুকলাল ও হীরা লালকে ফাঁসাতে এ অগ্নিকান্ডের পরিকল্পনা করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজু ফুলনের মুখ চেপে ধরেন এবং আনন্দ শরীরে কেরোসিন ঢালেন। ভবতোষ দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।

ফুলনের বাবা যোগেন্দ্র বর্মণ বলেন, তার মেয়েকে যারা হত্যা করেছে তিনি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। তিনি বুঝতে পারেননি দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পোষেছেন। ভবতোষ যে এ ঘটনা ঘটাবেন তারা চিন্তাও করতে পারেননি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবদুল গাফফার বলেন, বুধবার সকাল ৬টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফুলন বর্মণ মারা যান। বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা ফুলনের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় তারা প্রকৃত অপরাধী ফুলনের ফুফাতো ভাই ভবতোষসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছেন। আশা করছেন খুব অল্পসময়ের মধ্যেই অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, মূলত ফুলন বর্মণকে হত্যা করে যোগেন্দ্র বর্মণের জমি নিয়ে বিরোধের প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে ভবতোষ বাড়িসহ জমি ভোগ দখলের চিন্তা থেকেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন থেকে হত্যা মামলায় স্থানান্তরিত করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<55509 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1