শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সংকট জিইয়ে থাকলে অস্থিরতা তৈরি হবে: রাষ্ট্রপতি

যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ জুন ২০১৯, ০০:০০
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শনিবার সিআইসিএ পঞ্চম সম্মেলনে তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমোনের সঙ্গে করমর্দন করছেন -বিডিনিউজ

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূলের 'প্রকৃষ্ট উদাহরণ' উলেস্নখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, এর সমাধান না হলে তা পুরো এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।

শনিবার তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে নাভরুজ প্যালেসে কনফারেন্স অন ইন্টারেকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস ইন এশিয়ার (সিআইসিএ) পঞ্চম সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, 'মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তচু্যত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে যে গণহত্যা এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তা জাতিগত নির্মূলের একটি 'টেক্সট বুক এক্সাম্পল' এবং ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।'

মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ।

কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা কেউ ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যায়।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্ভয়ে বসবাসের পরিবেশ তৈরি না করার মধ্য দিয়ে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের অনাগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে।

সিআইসিএ'র সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি বলেন, 'রোহিঙ্গারা জোরপূর্বক তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটা থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। মানবিক কারণে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা তাদের জনগণকে আশ্রয় দিয়েছে এবং খাদ্য, চিকিৎসাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। বাংলাদেশ এ সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।'

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এখন শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয় উলেস্নখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, 'এটা যদি সমাধান না করা হয়, তাহলে

পুরো এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।'

রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে সে জন্য সিআইসিএসহ সংশ্লিষ্টদের সমর্থন ও সহযোগিতা চান রাষ্ট্রপতি।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রসারে কাজ করে সিআইসিএ। কাজাখস্তানের রাজধানী নূর সুলতানে এই সংস্থার সদর দপ্তর অবস্থিত।

২৭টি দেশ এই সংস্থার সদস্য। দেশগুলো হলো- আফগানিস্তান, আজারবাইজান, বাহরাইন, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, চীন, মিসর, ভারত, ইরান, ইরাক, ইসরাইল, জর্ডান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মঙ্গোলিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, শ্রীলংকা, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনাম।

এ ছাড়া বেলারুশ, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, লাওস, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, ইউক্রেইন ও যুক্তরাষ্ট্র এর পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে।

জাতিসংঘ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম, লিগ অব আরব স্টেটস, অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ, পার্লামেন্টারি অ্যাসেম্বলি অব দ্য টার্কিক স্পিকিং কান্ট্রিজ-এর সিআইসির পর্যবেক্ষক।

এশিয়াভিত্তিক এই সংস্থার বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে আছে তাজিকিস্তান।

১৯৯২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এই সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রস্তাব করেন কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নূর সুলতান নাজারবায়েভ। এর প্রথম সম্মেলন হয় ২০০২ সালে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ এই ফোরামের সদস্য হয়।

সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি বর্তমান সময়ে এশিয়ার দেশগুলো বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, 'এশিয়ার দেশগুলো বর্তমানে জোরপূর্বক দেশান্তর, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ এবং উগ্রবাদের মতো নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ সব সমস্যার সমাধানের জন্য সমন্বিত উগ্যোগ নিতে হবে।'

'এশিয়ার নিরাপত্তা বর্তমানে সুরক্ষিত নয়, কারণ নিয়মবহির্ভূত অভিবাসন, মাদক চোরাচালান, সীমানা বিরোধ, জাতিগত দ্বন্দ্ব, বিছিন্নতাবাদ, অর্থনৈতিক সমস্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যা এখানে দৃশ্যমান।"

কার্যকর অংশীদারিত্ব এবং উদ্যোগের উপর এশিয়ার স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে উলেস্নখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, 'এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জোটগত নিরাপত্তার ধারণা বৃদ্ধির মাধ্যমে সিআইসিএ'র ক্ষমতা বা শক্তি বাড়াতে হবে।'

সিআইসএ সদস্যদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, 'আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে এ অঞ্চলের বিদ্যমান বিবাদ, এশিয়ার নিরাপত্তা ও সহযোগিতার সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা অপরিহার্য। আমরা সংলাপ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে যা অর্জন করতে পারি।'

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা, উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিইয়োইয়েভসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নেন।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমোন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মেলনে স্বাগত জানান তিনি।

এই সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার দুশানবে পৌঁছান রাষ্ট্রপতি। রোববার দুশানবে থেকে উজবেকিস্তান সফরে যাবেন তিনি। ১৯ জুন তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53804 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1