মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রেন, লঞ্চে স্বস্তি

ব্যাপক প্রস্তুতির পরও সড়কে ভোগান্তি

শনিবার প্রায় সব অফিসেরই ছুটি শেষ হওয়ায় শুক্রবার বিভাগ, জেলা ও উপজেলা থেকে রাজধানীতে ফেরা মানুষের ঢল নামে
এস এম মামুন হোসেন
  ২৩ জুন ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২৩ জুন ২০১৮, ১২:৩৫
আপনজনের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন শেষে রাজধানীতে ফিরছেন কমর্জীবী মানুষ। ছবিটি বৃহস্পতিবার সদরঘাট লঞ্চ টামির্নাল থেকে তোলা Ñযাযাদি

পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে সড়ক-মহাসড়কে মানুষের ভোগান্তি কমাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হলেও শেষ পযর্ন্ত দুভোর্গ থেকে রেহাই মেলেনি ঢাকামুখী মানুষের। গত কয়েকদিনে ঢাকায় ফেরার স্বস্তির যাত্রা শুক্রবার অনেকটাই ¤øান হয়ে যায়। শনিবার প্রায় সব অফিসেরই ছুটি শেষ হওয়ায় শুক্রবার বিভাগ, জেলা ও উপজেলা থেকে রাজধানীতে ফেরা মানুষের ঢল নামে। আর তাতেই সব প্রস্তুতি ও উদ্যোগ ভেস্তে যায়। ট্রেনেও ছিল রাজধানীমুখী মানুষের চাপ। তবে স্বস্তিতে ঢাকায় ফিরেছে লঞ্চের যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই মানুষের তীব্র চাপ শুরু হয় ঢাকায় ফেরার সবগুলো প্রবেশ পথেই। উত্তর, দক্ষিণ, পূবর্, পশ্চিম সব পথেই ছিল একই অবস্থা। ফলে ঢাকায় প্রবেশের পথগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতাও বেড়ে যায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই। তবে দায়িত্বরত একাধিক পুলিশ কমর্কতার্র সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল পযর্ন্ত তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারলেও দুপুর ১২টার পর থেকে তা আর ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। আবার তীব্র গরমে সড়ক পুলিশকে কাজ করতে বেশ বেগ পেতেও দেখা গেছে। গরমে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তিও ছিল চরমে।

শুক্রবার সবচেয়ে বড় জটলা লাগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। এ সড়কে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীতে প্রবেশের প্রধান দুটি ফেরিঘাট দৌলতদিয়া ও মাওয়া ঘাটেও দীঘর্ যানজটের সৃষ্টি হয়। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কেরও কিছু স্থানে যানজট লাগে। তবে লঞ্চযোগে ঢাকায় আসা যাত্রীদের বেশির ভাগই স্বস্তিতে রাজধানীতে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে মিজার্পুরের কুরণী পযর্ন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই যানজট লাগে দুপুর তিনটা নাগাদ। এখানকার স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, যানজট আর তীব্র গরমে যাত্রীদের চরম দুভোর্গ পোহাতে হয়েছে।

শুক্রবার ভোর থেকে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে জটের সূত্রপাত হতে শুরু করে। বিকেল নাগাদ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মিজার্পুরের দেওহাটা থেকে মিজার্পুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড পযর্ন্ত পুরাতন সড়কেও দীঘর্ এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ায় সেখানেও মানুষের তীব্র ভোগান্তি হয় বলে প্রতিনিধি জানান।

স্থানীয় প্রতিনিধি আরও জানান, যানজট ও সড়কে মানুষের ভোগান্তি নিরসনে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকলেও প্রচÐ গরম ও ধুলার কারণে তারা নিয়মিত কাজ করতে পারছেন না।

এদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের রাজধানীতে প্রবেশের পথ দুটি বড় ফেরিঘাটেই শুক্রবার গাড়ির জটলা দেখা যায়। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ঘাটে ৪ কিলোমিটার দীঘর্ যানজটের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার পর থেকে এ ঘাটে জটলা হতে শুরু করে। বিকেল নাগাদ তা কয়েক কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। এ সময় ফেরি ও লঞ্চগুলোতেও ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী ওঠাতে দেখা যায়। ফলে অনেক যাত্রীর মধ্যেই উদ্বেগ দেখা যায়।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মা নদীর উপর আরেকটি বড় ঘাট মাওয়া। এ ঘাটেও বিকেল নাগাদ দুই কিলোমিটার লম্বা জটলা সৃষ্টি হয়। এখানে পদ্মা সেতুর কাজ চলমান থাকায় রাস্তার বিভিন্ন স্থান কেটে রাখা হয়েছে। যা যাত্রীদের ঈদযাত্রার সঙ্গী হয়েই রয়েছে বিগত প্রায় বছর খানেক ধরে। তবে এ ঘাটের অনেক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাটা সড়ক নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। কারণ এ কাটাকাটির মধ্য দিয়ে তারা পেতে যাচ্ছে এ অঞ্চলের চার কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ফলে একটু ভোগান্তি হলেও তা হাসিমুখেই যেন মেনে নিয়েছেন যাত্রীরা।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাওয়া ঘাটগামী মানুষের সবচেয়ে প্রিয় পরিবহন টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের ১৬৭ নম্বর কোচের ড্রাইভার আবুল হাওলাদারের সঙ্গে ঘাটের জ্যামের মধ্যেই কথা হয় শুক্রবার দুপুর ২টায়। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, ‘গতকালও আমি এ রোডে এসেছি। কোনো জ্যাম ছিল না। আজকে জ্যাম লেগেছে। রাস্তার ব্যাপক কাজ করা হয়েছে। ফলে এবার ঈদে খুব বেশি জ্যাম লাগেনি। অন্য বছরগুলোতে এ সময় ঈদের এক সপ্তাহ আগে ও এক সপ্তাহ পরে জ্যাম লেগেই থাকে। কিন্তু এবার এই একদিনই জ্যাম হবে। শনিবার অফিস খুলে গেলে আর কোনো জ্যাম থাকবে না। আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

একই গাড়ির একজন যাত্রী রওশনারা যায়যায়দিনকে বলেন, ‘প্রতি বছর অনেক জ্যাম হয়। এবার এক কিলোমিটার জ্যাম হয়েছে। এখান থেকে তিন বছর আগেও ঈদের পর ঢাকায় ফিরতে শুধু ঘাটেই বসেছিলাম ২৮ ঘণ্টা। সে অবস্থা এখন আর নেই। আমাদের পদ্মা সেতুটা হয়ে গেলে এক মিনিটেরও জ্যাম থাকবে না ইনশাল্লাহ।’

একই কথা জানান, এ পথের একজন ট্রাকচালক নিজাম ফকিরও। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, ‘এখনকার যে জ্যাম দেখছেন এটা কোনো ব্যাপারই না। গয়েক বছর আগে ঘাটেই বসে থাকতে হতো ২৫-৩০ ঘণ্টা। এখন সে তুলনায় কোনো জ্যামই নেই। সেতুটা হলে যেটুকু আছে তাও আর থাকবে না।’

এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে যানজটের খবর পাওয়া গেছে। এখানকার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এ মহাসড়কটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে হবিগঞ্জের আউশকান্দি পযর্ন্ত রাস্তা ভাঙা হওয়ায় এখানে ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহাবাজপুরের একটি ভাঙা ব্রিজের কারণে এ পথের সব গাড়িরই গতি অনেক কম রয়েছে। এ ব্রিজটি এ মহাসড়কে যানজটের অন্যতম কারণ বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এদিকে রাজধানীমুখী ট্রেনগুলোতে শুক্রবার ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনাসহ সব রুটের ট্রেনেরই ছিল একই অবস্থা। স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সিটের বাইরে শুক্রবার প্রায় কয়েকগুণ মানুষ ট্রেনে দঁাড়িয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করেছেন। তবে লঞ্চে মানুষের তীব্র চাপ থাকলেও কোনো জট না থাকায় মানুষ স্বস্তিতেই রাজধানীতে ফিরেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে