শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ, জেলেরা ক্ষুব্ধ

যাযাদি ডেস্ক
  ২১ মে ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশে সোমবার থেকে ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে।

মৎস্য মন্ত্রণালয় বলছে, সাগরে মাছের সংখ্যাবৃদ্ধির স্বার্থে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত।

এদিকে সমুদ্র-অঞ্চলের জেলেরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দুই মাস যদি তাদের একমাত্র জীবিকা মাছ ধরা চালিয়ে না যেতে পারেন তাহলে তাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নৌকা মালিক সমিতিগুলোর কেউ কেউ মানববন্ধনের ডাক দেয়ার কথা বলছেন।

বাংলাদেশের কুতুবদিয়া দ্বীপে বসবাসরত তৃষ্ণা জলো দাস বংশপরম্পরায় মাছ ধরা এবং বিক্রি-সংশ্লিষ্ট কাজ করে থাকেন। দৈনিক ছোট নৌকায় মাছ ধরেন সংসার চালানোর জন্য। কিন্তু ৬৫ দিনের এই নিষেধাজ্ঞায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

কৃষ্ণা জলো দাস বলেন, 'যেমন ধরুন, ইলিশ ফিশিংয়ের সময় ২২ দিন বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও আমরা কোন আবেদন জানাই না। সেই সময়েও আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।'

'এবার এই ৬৫ দিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা কীভাবে যে চলব? আমাদের বাচ্চাদের লেখাপড়া, ঋণ আছে, দৈনিক বাজার, খরচ এসব চালানো তো আমাদের দ্বারা সম্ভব হবে না।'

বাংলাদেশে ইলিশের মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার।

২০১৫ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে শুধু ট্রলারের ওপর এই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল।

কিন্তু এবার সকল প্রকার নৌযান অর্থাৎ, ছোট ফিশিং বোট, ইঞ্জিনচালিত নৌকা এর আওতায় পড়েছে।

আর এর ব্যাপ্তিও বাড়ানো হয়েছে। যার মধ্যে দ্বীপ অঞ্চল রয়েছে।

কেন প্রতিবাদ করছে জেলেরা?

মহেশখালীর জেলে জয়নাল আবেদিন বলেন, দ্বীপ অঞ্চলে তাদের আর কোনো কর্মসংস্থান নেই। তাই এই দীর্ঘ সময় তাদের জন্য দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা তৈরি করবে।

সরকার বলছে সাগরে মাছের সংখ্যাবৃদ্ধির স্বার্থেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে যারা ছোট নৌকা চালিয়ে মাছ ধরেন সেসব জেলে তা একেবারেই মানতে পারছেন না।

সেন্টমার্টিন এবং টেকনাফের যেসব জেলে আছেন তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন এবং বলছেন এর প্রতিবাদে তারা মানববন্ধন করবেন।

টেকনাফের জেলে আব্দুল গফুর বলেন, এই ঘোষণার আগেই তারা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে স্মারকলিপি দিয়েছেন যাতে ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ না করা হয়।

'আমরা প্রথমে স্মারকলিপি দিয়েছি ইউএনও'র কাছে, বিজিবির কাছে, থানায়, কোস্টগার্ড, মৎস্য কর্মকর্তা, চেয়ারম্যানের কাছে। এখন আমরা ডিসি এবং প্রধানমন্ত্রীর বরাবর দেব।'

আব্দুল গফুর জানান, 'পরশু আমরা মাইকিং করেছি, সেন্টমার্টিন এবং টেকনাফের সব জেলে একত্রিত হয়ে মানববন্ধন করব। এভাবে আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।' বিবিসি বাংলা

সরকারের যুক্তি কী?

সরকারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলি খসরু বিবিসিকে জানান, মাছের জোগানের ভারসাম্য রক্ষার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

তিনি বিবিসিকে বলেন, 'এ সময়টা হলো মাছের প্রজননের সময়। বিভিন্ন দেশে এ সময়টাতে মাছ ধরা বন্ধ থাকে।'

'আর আমাদের এখানে যেসব ইলিশ মাছ ডিম ছাড়তে আসে, সেগুলো এবং জাটকা মাছগুলো সাগরে নেমে যায়। তাই সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখছি আমরা।'

সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করছেন তাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী।

'এটা হলো যারা জেলেদের ওপর অর্থ লগ্নি করেন তাদের একটা মাথাব্যথা। তাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে এবং আমরা সমুদ্রে নৌযানগুলো নামতে দেব না। এটার জন্য নেভাল এবং কোস্টগার্ড সমুদ্রে টহল দিচ্ছে।'

এদিকে এই যে ৬৫ দিন ধরে যে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে এই সময়টাতে, সরকারের এই বছরে কোনো প্রণোদনা দেয়ার পরিকল্পনা নেই। পরবর্তীতে প্রণোদনা এবং বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50437 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1