শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের আন্দোলন স্থগিত

যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ মে ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২১ মে ২০১৯, ০০:১৯

আওয়ামী লীগের চার জ্যেষ্ঠ নেতার আশ্বাসে অবশেষে আন্দোলন থেকে সরে এসেছে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ অংশ। রোববার রাতে আওয়ামী লীগের চার জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার বৈঠক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন তারা। পদবঞ্চিত নেতারা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে যেসব আশ্বাস পেয়েছেন, সেগুলো হলো শিগগির আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পদবঞ্চিত নেতাদের সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়া হবে, গত সোমবার পদবঞ্চিতদের ওপর মধুর ক্যানটিনে হামলার ঘটনা এবং গত শনিবার টিএসসিতে হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হবে, অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে বিতর্কিতদের পদগুলোকে শূন্য ঘোষণা করে যোগ্যতার ভিত্তিতে সেসব পদে পদবঞ্চিতদের দিয়ে পূরণ করতে হবে। রোববার রাতে আওয়ামী লীগের চার জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে দেখা করতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সংগঠনের কমিটিতে পদবঞ্চিত অংশের ৮ জনের একটি প্রতিনিধিদল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে যায়। আওয়ামী লীগের ওই চার নেতা হলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বি এম মোজাম্মেল হক। কয়েক ঘণ্টার বৈঠক শেষে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও পদবঞ্চিতদের প্রতিনিধিরা রাত পৌনে একটার দিকে রাজু ভাস্কর্যে যান। তাদের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ নেতাদের পক্ষ থেকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে যান আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোলস্না মো. আবু কাওছার। ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন পদবঞ্চিতদের উদ্দেশে বলেন, 'পদের লোভ না করে দল ও দেশের জন্য কাজ করতে হবে। ছাত্রলীগ কোনো স্থায়ী জিনিস না, একটা চলমান প্রক্রিয়া। ছাত্রলীগ করতে না পারলে যুবলীগ বা আওয়ামী লীগ করবেন। রাজনীতির একটা চর্চা থাকতে হবে। এভাবে এটা কিন্তু রাজনীতি চর্চা না। সবার প্রতি অনুরোধ, কাদা ছোড়াছুড়িটা আর না করি, ছাত্রলীগের সুনামটা আর নষ্ট না করি। কালকে থেকে একসঙ্গে পথচলে দু-এক দিনের মধ্যে বিষয়গুলো চিন্তাভাবনা করি।' তাদের (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) নিজেদেরও কিছু ভুল ছিল বলে উলেস্নখ করে শোভন বলেন, 'বিতর্কিত ১৭টি পদ আপাতত শূন্য হওয়ার পথে। এখানে দু-একজন থাকতে পারে, যাদের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী, মাদক, বিবাহ ও চাকরির বিষয় নেই, কিন্তু সে প্রমাণ করতে পেরেছে, তার বয়স ত্রিশোর্ধ্ব নয়। এ রকম দু-একটি ঘটনা ঘটলে তা আমাদের মাধ্যমে না, নেত্রীর মাধ্যমেই আসবে। কিন্তু ১৭টি পদের ম্যাক্সিমাম বিলুপ্তির পথে। সেই জায়গাগুলোয় পুনর্বিন্যাসের একটা সুযোগ এসেছে। আপনাদেরকে আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। পার্টির প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। ছাত্রলীগের কর্মী হলে ত্যাগ করতে শিখতে হবে।' সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, 'আপা প্রথমত আমাদের সবাইকে এক ছাতার নিচে দেখতে চান। আপা দ্বিধাবিভক্ত কারও সঙ্গে কথা বলবেন না। আপা বলেছেন, আগে একই টেবিলে বসে দেখান ছাত্রলীগ একটা পরিবার, আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ পরিবার ধারণ করছি, তারপর তিনি আমাদের সব কথা শুনবেন। কিছুদিন আগে আপার চোখের অপারেশন হয়েছে। আপা একটু বেটার ফিল করলে সবার সঙ্গে কথা বলবেন।' ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া অংশের নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনের বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক সাঈফ বাবু বলেন, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। তাই তারা তাদের আন্দোলন এখানেই স্থগিত করছেন। ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি প্রকাশের প্রায় ১০ মাস পর গত সোমবার সংগঠনের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে সংগঠনের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে কয়েকজন নারী নেত্রীসহ ১০ থেকে ১২ জন আহত হন। গত বুধবার ছাত্রলীগের কমিটি থেকে 'বিতর্কিতদের' বাদ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেন। এরপর কমিটি ও মধুর ক্যানটিনের সোমবারের হামলার ঘটনা নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা নিরসনে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে শনিবার রাতে টিএসসিতে আলোচনায় বসেছিল পদবঞ্চিতদের ১২ জনের একটি প্রতিনিধিদল। তাদের অভিযোগ, সেই আলোচনার সময় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক এবং ডাকসুর কমন রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক লিপি আক্তারকে বাজে মন্তব্য করলে তিনি এর প্রতিবাদ জানান। এর জেরে সেখানে উপস্থিত রাব্বানীর কর্মীরা লিপিসহ পদবঞ্চিত পক্ষের কয়েকজন নারী নেত্রীসহ সবাইকে মারধর করেন।

৫ জনকে বহিষ্কার

পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর মধুর ক্যান্টিনে মারামারির ঘটনায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পাঁচজনকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ।

এদের একজনকে স্থায়ীভাবে এবং চারজনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয় সোমবার ছাত্রলীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের কর্মী সালমান সাদিককে।

সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেনÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মুরসালিন অনু, জিয়া হলের সদস্য কাজী সিয়াম, জিয়া হল ছাত্রলীগের কর্মী সাজ্জাদুল কবীর এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য জারিন দিয়া।

এ ছাড়া কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে দু’জনকে; শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তিনদিনের মধ্যে তাদের তা জানাতে বলা হয়েছে।

এরা হলেনÑ রোকেয়া হল শাখার সভাপতি বি এম লিপি আক্তার, জিয়া হলের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান শান্ত।

গত ১৩ মে মধুর ক্যান্টিনে সংঘটিত ঘটনার তদন্তের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

কাউন্সিলের এক বছর পর ওই দিনই ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তা প্রত্যাখ্যান করে সেদিনই বিক্ষুব্ধরা সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে তাদের ওপর হামলা হয়, বাঁধে মারামারি।

তারপর বিক্ষুব্ধদের দাবি খতিয়ে দেখে বিতর্কিতদের পদ থেকে সরানোর আশ্বাস দেয়ার পাশাপাশি বিক্ষুব্ধদের কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছিল সংগঠটির শীর্ষ নেতৃত্ব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে