শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
ঈদ কেনাকাটা

দরজিবাড়িতে সিরিয়াল পাওয়াই দায়

এস এম মামুন হোসেন
  ১৯ মে ২০১৯, ০০:০০
ঈদের নতুন পোশাক তৈরির কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন দর্জিবাড়ির কারিগররা। ছবিটি পান্থপথ বসুন্ধরা সিটি থেকে তোলা -আমিনুল ইসলাম শাহীন

ঈদের কেনাকাটায় গতি বাড়ার সঙ্গে তার ধকল পড়েছে দরজিবাড়িতেও। ঘর-র-র-র-র শব্দ তুলে তাই রাত-দিন চলছে নতুন কাপড় বানানোর তোড়জোড়। এরই মধ্যে অধিকাংশ দরজিবাড়িতেই ঈদের আগ পর্যন্ত সব সিরিয়াল বুক হয়ে গেছে। তবে কিছু টেইলার্সে এখনো ঈদের পোশাক তৈরির অর্ডার নেয়া হচ্ছে। তবে কারিগররা জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই তাদেরও সিরিয়াল শেষ হয়ে যাবে।

গত বৃহস্পতিবার পর্যন্তও অধিকাংশ দরজি দোকানে নতুন পোশাক তৈরির সিরিয়াল গ্রহণ করা হচ্ছিল। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎই ঈদ বাজারে কেনাকাটা বেড়ে যায়। ফলে দরজিবাড়িতেও নতুন কাপড় তৈরির হিড়িক পড়ে। এতে একদিনেই অনেক দরজি দোকানে পুরো ঈদের সিরিয়াল নেয়া শেষ হয়ে যায়। তাই শনিবার নতুন কাপড় তৈরিতে আগ্রহী অনেককেই সিরিয়াল দিতে এ দোকান থেকে সে দোকানে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। নতুন কাপড় তৈরির কারিগররাও বলছেন, রোজা অর্ধেক হওয়ার আগেই তাদের সিরিয়াল শেষ হয়ে যায়। তাদের ভাষায় যারা পোশাক বানিয়ে পরতে পছন্দ করেন তারা আগে ভাগেই কাপড় কিনে বানানোর সিরিয়াল দেন। কারণ কাপড় বানাতে সময় লাগে এটা তারা জানেন। তবে আগামী দিনে কাপড় বানাতে আসা ব্যক্তিদের পোশাক বানাতে গেলে মনের মতো দরজি পেতে যে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হবে সেটিও তারা স্বীকার করছেন।

রাজধানীর কতকগুলো দরজি দোকানে গিয়ে দেখা যায় সারিসারি নতুন পোশাক তৈরির কারিগররা বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কোনদিকে তাকানোর জন্য এতটুকু ফুসরতও নেই তাদের। সামনে দাঁড়িয়ে একজন কাপড় মেপে তাতে রং খড়ির দাগ দিয়ে কারিগরদের কাছে দিচ্ছেন। কারিগররা খাতায় লেখা সাইজ অনুসারে কাপড় সেলাই করছেন।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, নূর ম্যানশন, বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেটেসহ বিভিন্ন এলাকার দরজি দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায় কারিগররা ব্যস্ততম সময় পার করছেন। এ ছাড়া আসন্ন ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে গলির ভেতরের দোকানগুলোও। দোকানে পা রাখার আগেই কানে ভেসে আসছে সেলাই মেশিনের ঘরঘর শব্দ। কাটিং মাস্টার গলায় ফিতা ঝুলিয়ে রঙিন চক দিয়ে কাপড়ের বুকে নকশা আঁকছেন। কাঁচিতে

ঘচঘচ শব্দ তুলে তা কেটে চলেছেন আরেকজন। ক্রেতার দেয়া মাফ অনুযায়ী নকশা ফুটিয়ে তুলতে জোড়াতালিতে ব্যস্ত অন্য কারিগররা।

অনেকেরই ধারণা এখন মানুষ বুঝি শুধু তৈরি পোশাকই পরে থাকে। কিন্তু দরজিবাড়িতে না গেলে বোঝার উপায় নেই এখনো পর্যন্ত কত মানুষ নিজেদের পছন্দ মতো দরজি দিয়ে কাটিয়ে পোশাক পরে থাকেন। তৈরি পোশাক খাতের দাপটের পরও দরজিবাড়িতে ভিড় করছেন সব বয়সী নারী-পুরুষ। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের ভিড় ঢেড় বেশি। বড় বোনকে সঙ্গে নিয়ে বাড্ডা থেকে নিউমার্কেটে থ্রি-পিছ বানাতে আসা সেঁজুতি বলেন, 'কেনা পোশাক নিজের মন মতো হয় না। কিন্তু বানানো পোশাক আমি যেমন চাইবো তেমনই হবে। এ কারণে বানানো পোশাকই বেশি পরে থাকি।'

বেশ কয়েকটি দরজিবাড়ি ঘুরে দেখা গেল, গরমের কারণে এখন সুতি পোশাকের অর্ডার আসছে বেশি। তবে পাশাপাশি লম্বা কুর্তা, বিভিন্ন স্টাইলের কামিজও বেশ চলছে। এ সব পোশাকে নানা রংয়ের লেইস, নানান ধরনের বোতাম ও কারুকাজ ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে ঈদের সময় অনেক দোকানই কাপড় তৈরির বায়না বেশি রাখছে বলে অভিযোগও করলেন অনেকে। সালোয়ার-কামিজ তৈরিতে ছয়শ' টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকা রাখা হচ্ছে। ছেলেদের জামা তিন থেকে চারশ' টাকা। আর প্যান্ট পাঁচশ' থেকে আটশ' টাকায় বানানো হচ্ছে।

ফারহান নামের একজন বসুন্ধরা সিটির দোতলার তরুণ ফ্যাশন থেকে কাপড় কিনে সেখানেই বানাতে দিয়েছেন। তিনি জানালেন তার একটি শার্ট চারশ' এবং প্যান্ট আটশ' টাকা রাখা হয়েছে। অথচ অন্য সময় একই কাপড় তিনি তিন ও পাঁচশ' টাকায় বানিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ করেন।

আবার যারা তৈরি পোশাক কেনার পরও তা বড় ছোট হয়ে যাচ্ছে তা কাটাতেও আসছেন। সেখানেও গিয়ে দেখা গেল বাড়তি দাম রাখার অভিযোগ। একটি কাপড় কেটে ছোট করতে পুরো কাপড় তৈরির মজুরি রাখার অভিযোগ পাওয়া গেল কিছু দোকানের বিরুদ্ধে।

তবে ওই স্টলের যে ব্যক্তি কাপড়ের মাফ নিচ্ছিলেন তিনি বলেন, 'আমাদের এখানে কাটিং অনেক উন্নত মানের। এত ভালো কাটিং আর কোথাও হয় না। ফলে অন্য জায়গার সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। আমরা ভালো কাজ করি বলেই মজুরি একটু বেশি।'

কাপড় তৈরির কারিগররা জানিয়েছেন, ১৫ থেকে ২০ রমজানের মধ্যে নতুন পোশাকের সিরিয়াল নেয়া সম্পূর্ণভাবেই বন্ধ হয়ে যায়। এখনো যা দুই একটি বাকি আছে তাও আগামী দুই-পাঁচদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50132 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1