মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ঈদ কেনাকাটা

ছুটির দিনে ক্রেতার ভিড় বিক্রেতার মুখে হাসি

রোজার প্রথম দশ দিনে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়নি। ফলে বিক্রেতাদের মার্কেটগুলোতে অলস সময় পার করতে দেখা যায়। তবে গতকাল শুক্রবার এগারোতম রোজার দিনে হঠাৎ করেই বদলে যায় দৃশ্যপট
এসএম মামুন হোসেন
  ১৮ মে ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৮ মে ২০১৯, ১০:২৭
জমে উঠতে শুরু করেছে ঈদ কেনাকাটা। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় রাজধানীর মার্কেটগুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ছবিটি নিউ মার্কেট থেকে তোলা -আমিনুল ইসলাম শাহীন

দশ রোজা পেরোনোর পর গতকালই প্রথম ক্রেতার দেখা মিলেছে এবার ঈদের বাজারে। শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে বিপণি বিতানগুলোতে। তবে দুপুরের পর তা রূপ নেয় মানুষের মেলায়। ফলে এ দিন বিক্রেতাদেরও মুখে ফোটে হাসির ঝিলিক। একই সঙ্গে সামনের দিনগুলোতে বাজার ভালো চলবে বলেও প্রত্যাশা বিক্রেতাদের। এবার রোজা শুরুর পর প্রথম দশ দিনে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়নি। ফলে মার্কেটগুলো ছিল ফাঁকা। বিক্রেতাদেরও অলস সময় পার করতে দেখা যায়। তবে গতকাল শুক্রবার এগারোতম রোজার দিনে হঠাৎ করেই বদলে যায় দৃশ্যপট। সকাল থেকেই রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, গাউছিয়াসহ আশপাশের মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ঢল নামে। মার্কেটে আসা মানুষের ঢল এতটাই বেশি ছিল যে চাঁদনীচক, গাউছিয়া এবং নিউমার্কেটের মধ্যবর্তী ব্যস্ত রাস্তাটি দুপুরের পর অনেকটাই সরু হয়ে পড়ে। ফুটপাত পেরিয়ে মানুষের ঢল আছড়ে পড়ে মূল সড়কে। যা শুক্রবার ছুটির দিনেও এ এলাকাটিতে যানজটের কারণ হয়। সকাল ৯টার মধ্যেই নিউমার্কেট ও আশপাশের সব মার্কেট খুলে যায় এ দিন। ক্রেতারাও সকাল থেকে আসতে শুরু করেন। দুপুর ১২টা নাগাদ বিপুল লোক মার্কেট করতে ভিড় জমায়। তবে জুমার নামাজের কারণে দুপুর একটার দিকে ভিড় কিছুটা হ্রাস পায়। তবে দুইটা থেকে আবারও বিপুল সংখ্যায় মানুষ মার্কেটগুলোতে ভিড় করে। বিকেল ৪টা নাগাদ পুরো এলাকা মানুষে ছেয়ে যায়। ফলে ফুটপাত ছাড়িয়ে মানুষের ঢল আছড়ে পড়তে থাকে মূল সড়কে। এতে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে একদিকে সড়কের যানবাহন অন্যদিকে ঈদ বাজারে আসা মানুষকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে দেখা যায়। মার্কেট করতে আসা মানুষের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ছিলো ঢের বেশি। অনেক নারী ছোট বা মাঝ বয়সী বাচ্চা নিয়েও মার্কেটে আসেন। তবে গরম একটু বেশি থাকায় নারী ও শিশুদের বেশ ক্লান্ত হয়েও পড়তে দেখা যায়। এ সময় রোজা থাকা কয়েকজনকে গরমে মাথা ঘুরে পড়ে যেতেও দেখা যায়। গরম থেকে বাঁচতে নিউমার্কেট ঘেষা সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নিউ সুপার মার্কেটেই মানুষের ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। এ মার্কেটের দুই তলায় গিয়ে দেখা যায় মানুষের চাপ এতটাই বেশি যে এখানে হাটাহাটি করাটাই দুরহ হয়ে পড়েছে। দোকানগুলোর ভেতরেও মানুষ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিক্রেতারা। এদিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অন্য মার্কেটগুলোতেও সাধারণ মার্কেটের তুলনায় মানুষের ভিড় একটু বেশিই ছিল। দুপুর তিনটার দিকে নিউ মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মার্কেট, ফুটপাত, সড়কে মানুষ আর মানুষ। বিক্রিবাট্টাও হচ্ছে ব্যাপকভাবে। নিউমার্কেটের নিকুঞ্জ স্টলে গিয়ে দেখা যায় বিক্রয়কর্মী, মালিক সকলেই ব্যস্ত। এ দোকানের মালিক লোকমান হোসেন বলেন, 'আজই প্রথম মনের মতো ক্রেতা পেয়েছি। সকাল থেকেই বিক্রি ভালো। সন্ধ্যার আগে আরও ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি। এখন থেকে আশা করছি, ক্রেতার বাড়তি চাপ থাকবে।' একই দোকারে মার্কেট করতে আসা একজন ক্রেতা সাবিহা রহমান বলেন, 'অন্যদিনে ব্যস্ত থাকি। তাই মার্কেটে আসার সুযোগ কম। কিন্তু আজ ছুটির দিন হওয়ায় মার্কেটে এসেছি। ভালো জিনিস আছে। কিন্তু দাম কিছুটা বেশি। এছাড়া গরমেও বেশ কষ্ট হচ্ছে। তবে ঈদের সময় মার্কেটতো করতেই হবে। ফলে গরমের জন্য বসে না থেকে আজ পুরো পরিবারের জন্য মার্কেট করে ফেলার নিয়ত নিয়েই এসেছি।' এ দিন ক্রেতাদের আগ্রহের শীর্ষে দেখা গেছে, পাঞ্জাবি, জিন্সের প্যান্ট, শার্ট ও ফতুয়ার মতো পোশাকেই। মার্কেট ভেদে এসবের বিক্রিবাট্টাতেও ছিলো ফারাক। পাঞ্জাবি সর্বনিম্ন ৮শ' টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকাতেও বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া ফতুয়া ও জামা এবং জিন্সেও কাপড়ের মান ও ডিজাইন ভেদে দামের পার্থক্য ছিলো চোখে পড়ার মতো। তবে মার্কেটে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে মেয়েদের পোশাক। থ্রি-পিছ, পস্নাজু, গাউন, সারারা, গারারাসহ বিভিন্ন পোশাকের পাশাপাশি শাড়িও বিক্রি হতে দেখা গেছে। শুক্রবার রাজধানীর অন্যতম অভিজাত মার্কেট বসুন্ধরা সিটিতেও ছিল মানুষের উপছে পড়া ভিড়। বিকেল ৪টার দিকে বসুন্ধরায় গিয়ে দেখা যায় এখানকার মার্কেটের সামনের বিশাল ফাঁকা জায়গা পূরণ হয়ে মানুষের ভিড় ফুটপাতে এসে পড়েছে। এছাড়া এ মার্কেটের মানুষের প্রবেশ ও বের হওয়ার ভিড়ে রাস্তায় বাড়তি ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করতে হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর গাড়ি থামিয়ে মানুষকে পার হতে সাহায্য করতে দেখা যায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের। মার্কেটের প্রবেশ পথে গিয়ে দেখা যায়, মিনিট দশেক লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে মানুষকে। মানুষের লাইনও অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে এখানকার আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরে চেকিং বাধ্যতামূলক হলেও তা শিতিল করতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ভেতরে গিয়েও দেখা যায় একই রকম দৃশ্য। লম্বা লাইন ধরে এর চলন্ত সিঁড়িতে মানুষ ওঠানামা করছে। ভেতরের প্রতিটি স্টলেই মানুষের তীব্র ভিড় চোখে পড়ে। শুধু নিউমার্কেট, চন্দিমা, চাঁদনীচক, গাউছিয়া, বসুন্ধরাই নয় বরং এ দিন ইস্টার্ন পস্নাজা, ইস্টার্ন মলিস্নকা, ফার্মগেটের ফার্ম সুপারভিউ, গুলিস্তানের মার্কেটগুলোসহ বনানী, বসুন্ধরা এলাকার ভিআইপি মার্কেটগুলোতেও মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতাদের এমন ভিড়ে তাই এদিন বিক্রেতাদেরও মুখে ছিল হাসির ঝিলিক। সকাল থেকে টানা বিক্রিবাট্টার ধকলে অনেককেই ক্লান্ত হতে দেখলেও তাদের মুখে ছিল হাসির রেখা। বিক্রেতারা বলেন, বাড়তি বিক্রিবাট্টাই তাদের উদ্দেশ্য। ফলে কষ্ট হলেও তা তাদের ক্লান্ত করে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে