মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স

গরিবের হাসপাতালে সেবা মেলে সহজে

১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরনো এই হাসপাতালে মাত্র ১০ টাকার টিকিটে ডাক্তার দেখানো, বিনামূল্যে ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি সেবা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার প্রকল্পের আওতায় হোমিও চিকিৎসা দেয়া হয়।
নতুনধারা
  ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীর তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের প্রবেশদ্বার -যাযাদি

জাহিদ হাসান

রাজধানীর বেগুনবাড়ির সিদ্দিক মাস্টারের ঢাল এলাকার এক গ্যারেজ থেকে ভাড়ায় রিকশা চালান ময়মনসিংহের আবুল কাশেম। গত এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছেন তিনি। ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেয়েও জ্বর ভালো হয়নি। তাই নিরুপায় হয়ে মঙ্গলবার এক ওষুধের দোকানদারের পরামর্শে শমরিতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানকার এক নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, জরুরি বিভাগের টিকিট কিনতেই ১০০ টাকা লাগবে। এর বাইরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ নিজের। কিন্তু তার পকেটে এত টাকা নেই জানালে পাশের তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে যাওয়ার পরামর্শ দেন ওই নিরাপত্তারক্ষী। সেখানে গিয়ে চিকিৎসক পরামর্শ নেয়ার পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধ পেয়ে অনেকটাই আশ্বস্ত হন তিনি। শুধু এই আবুল কাশেমই নয়, হাসপাতালটির প্রায় ৯০ ভাগ রোগীই নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। যারা মাত্র ১০ টাকার টিকিটে বিশেষজ্ঞ চিকৎসকের পরামর্শ, ওষুধ এমনকি অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাচ্ছেন।

আলাপকালে চিকৎসা নিতে আসা রিকশা চালক আবুল কাশেম এই প্রতিবেদককে জানান, কাঁচে ঘেরা বড় হাসপাতালগুলো গরিবদের না, বরং তাদের জন্য এই থানা কমপেস্নক্সই যথেষ্ট। কারণ, এখানে মন খুলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা যায়। বিনামূল্যে ওষুধও পাওয়া যায়।

সরেজমিন তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীই নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া দরিদ্র পরিবারের। গত মার্চ মাসে হোমিও এবং ডেন্টাল শাখার শুধুমাত্র বহির্বিভাগেই চার হাজার ৬৬৪ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। টিএইচএফপিওসহ ১০ জন চিকিৎসক, একজন নার্সিং সুপারভাইজর, ১৫ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, চারজন মিডওয়াইফ, টেকনেশিয়ান, আয়া ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১০১ জন মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে মোট ৮২ জন জনবল কাজ করছেন। যারা নিয়মিতভাবে আউটডোর বেসিসে প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিনশর মতো রোগীকে বিভিন্ন রোগ-সংক্রান্ত ও ফ্যামিলি পস্নানিং চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালটিতে মূলত তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া, বেগুনবাড়ি, সিদ্দিক মাস্টারের ঢাল, রেললাইন বস্তি এবং ফকিন্নি বাজার এলাকার নিম্নআয়ের রোগীরা বেশি আসেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরনো এই সেবাকেন্দ্রটিতে মাত্র ১০ টাকার টিকিটে ডাক্তার দেখানো, বিনামূল্যে ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি সেবা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার প্রকল্পের আওতায় হোমিও চিকিৎসা দেয়া হয়। ফলে অনেকের কাছে এটি গরিবের হাসপাতাল বলে পরিচিতি লাভ করেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (হোমিও) ডা. স্বপন ওঝা যায়যায়দিনকে বলেন, এখানে সেবা নিতে আসা বেশিরভাগ মানুষ গার্মেন্ট বা কারখানায় কাজ করে থাকেন। তবে চিকিৎসকরা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দেন। চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগী দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের হলেও কনসালট্যান্ট চিকিৎসকরা গাইনি-অবস, অর্থো-সার্জারি ও চর্ম রোগের সেবা দিয়ে থাকেন। ইমার্জেন্সি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। বিনামূল্যে ডেন্টাল, ইপিআই টিকা, নারীদের ভায়া টেস্ট এবং ম্যালেরিয়া রোগের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি ২০১৪ সাল থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ জন রোগীকে হোমিও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রোগীদের স্বাস্থ্য শিক্ষার সেবা ব্যবস্থা রয়েছে।

হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (এমওএমসিএইচ) ডা. শাহনাজ আক্তার খান বলেন, বর্তমানে বহিঃ ও জরুরি বিভাগ ছাড়াও হাসপাতালের আওতাধীন তেজগাঁও সার্কেলের ১৭টি ইউনিয়নে (সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে) ইপিআই সেবা এবং মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর বাইরে জাতীয় টিকা দিবস, ভিটামিন এ পস্নাস ক্যাম্পেইনসহ স্বাস্থ্যসেবা-বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা করা হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।

এসব বিষয়ে তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান যায়যায়দিনকে বলেন, হাসপাতালটিতে বিনামূল্যে সিবিসি, আরবিএস, ইউরিন ও স্টুল টেস্টের মতো প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা ও নিয়মিতভাবে ইপিআই টিকা, আইএমসিআই, ওআরটি কর্নার, সিভিই সেবা দেয়া হয়। রোগীদের স্বাস্থ্য কার্যক্রম শিক্ষা এবং সপ্তাহে দুইদিন নারীদের ভায়া টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যথানাশক ডাইক্লোফেনাক ও রেনিডিন ইনজেকশনসহ ৩৫ আইটেমের অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ দেয়া হচ্ছে। সেবা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে স্টাফদের নিয়ে সপ্তাহিক ও মাসিক সভা করা হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে হাসপাতাল ভবনটিকে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।

উলেস্নখ্য, ১৯৭৩ সালে প্রায় ২৫ বিঘা জমির ওপর ৩১ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে (নতুন ২৪ নম্বর) প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে তেজগাঁও সার্কেলভুক্ত ১০৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ১৭টি ইউনিয়নের ২৯ লাখ ৩৭ হাজার ৪১১ জন মানুষের সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছে চিকিৎসাকেন্দ্রটি। এসব জমিতে বস্তি ও অন্য সরকারি স্থাপনা গড়ে ওঠায় হাসপাতালের মূল ভবন মাত্র দুই বিঘা জমির ওপর। সেখানে আধাপাকা টিনশেডের আউটডোর হাসপাতাল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থান এবং নার্সেস ডরমেটরি ও একটি পানির পাম্প রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46765 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1