শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আইনের খসড়া প্রস্তুত

হাট-বাজারে অবৈধ স্থাপনা নিমাের্ণ জেল-জরিমানা

যাযাদি রিপোটর্
  ২২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

সরকারি হাট-বাজারের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নিমাের্ণ পঁাচ লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদÐ বা উভয় দÐের বিধান রেখে ‘হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০১৮’-এর খসড়া তৈরি করেছে সরকার।

মূলত ‘হাট ও বাজার (স্থাপন ও অধিগ্রহণ) অধ্যাদেশ, ১৯৫৯’-এর ওপর ভিত্তি করে নতুন আইনটি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ‘হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) বিধিমালা, ২০১৮’-এর খসড়াও করা হয়েছে। এখন আইন ও বিধিমালার বিষয়ে বিভিন্ন স্তরের মানুষের মতামত নিচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

১৯৫৯ সালের হাট-বাজারের অধ্যাদেশে কোনো শাস্তির বিধান ছিল না। নতুন আইনে বলা হয়েছে, ‘হাট-বাজারের সরকারি খাসজমি কেউ অবৈধভাবে দখলে রাখলে বা উপযুক্ত কতৃর্পক্ষের পূবার্নুমতি ছাড়া হাট-বাজারের খাসজমির ওপর কোনো অবৈধ স্থাপনা নিমার্ণ করলে বা নিমাের্ণর উদ্যোগ নিলে সবোর্চ্চ পঁাচ লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছর কারাদÐ বা উভয় দÐে দÐিত হবেন।’

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আকরাম হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘হাট-বাজারের অধ্যাদেশটি অনেক পুরনো। এটি যুগোপযোগী করে নতুন আইন করা হচ্ছে। অধ্যাদেশে শাস্তির কোনো বিষয় ছিল না, প্রস্তাবিত আইনে শাস্তির বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আগে এ বিষয়ে কোনো বিধিমালা ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আন্তঃমন্ত্রণালয়

সভাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার পর আইনের খসড়া ও বিধিমালাটি প্রায় চ‚ড়ান্ত পযাের্য় রয়েছে। আইনের খসড়াটি শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।’

হাট ও বাজার আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ বিচারিক আদালতে বা নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচাযর্ হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনে অবৈধ দখলদারকে অপদখলীয় সম্পত্তি থেকে অপসারণ করে সংশ্লিষ্ট হাট-বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কতৃর্পক্ষের অনুক‚লে সরকারি জমির দখল বুঝিয়ে দিতে পারবেন।’

‘যে সূত্রে বা যেখানেই প্রতিষ্ঠিত হোক না কেন, হাট-বাজার সম্পূণর্রূপে ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের মালিকানায় ন্যস্ত থাকবে’ বলে আইনে বলা হয়েছে।

সরকার বা হাট-বাজার স্থাপনকারী কতৃর্পক্ষ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বাংলাদেশে কোনো হাট ও বাজার স্থাপন করতে পারবে না। তবে স্থানীয় কোনো কতৃর্পক্ষের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের পূবার্নুমোদন আগের মতোই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে নতুন আইনে।

যতদিন পযর্ন্ত কোনো হাট-বাজার কোনো স্থানীয় সরকারের অধীন ন্যস্ত থাকবে ততদিন পযর্ন্ত প্রতিটি উপজেলা পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশন তাদের অধিক্ষেত্রের অধীন এবং ব্যবস্থাপনাধীন হাট-বাজারগুলো ইজারা দেবে।

হাট-বাজার ইজারা দিতে এ সংক্রান্ত বিধিতে বণির্ত উপায়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে বলেও খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, বাংলা বছরের ভিত্তিতে (বৈশাখ-চৈত্র) এক বছরের জন্য বিধি মোতাবেক হাট-বাজারের ইজারা দিতে হবে। কোনো বছরের যাবতীয় ইজারা কাযর্ক্রম আগের বছরের ২০ চৈত্রের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

ইজারালব্ধ আয় ‘হাট-বাজারের ইজারালব্ধ আয়’ নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে জমা রাখতে হবে বলেও প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে।

যা আছে বিধিমালায়

হাট ও বাজার বিধিমালায় বলা হয়েছে, নতুন হাট-বাজার স্থাপনের ক্ষেত্রে সাধারণ কৃষক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসার এবং ভবিষ্যতে এ সুবিধা বাড়ানোর জন্য পযার্প্ত খালি জায়গা উল্লেখ করে সুনিদির্ষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

নতুন হাট-বাজার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব করলে এর পেরিফেরি ম্যাপ (চৌহদ্দি) প্রস্তুত করতে হবে। এ ম্যাপে বিভিন্ন মহাল, চান্দিনা ভিটা (অস্থায়ী দোকানপাট), তোহা বাজার, কসাইখানা ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

জেলা প্রশাসক অস্থায়ী দোকান ও ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিদির্ষ্ট পরিমাণ জায়গা একসনা (এক বছরের জন্য বন্দোবস্ত) ভিত্তিতে দিতে পারবেন। জেলা প্রশাসক জনস্বাথের্ যে কোনো সময় কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়া বন্দোবস্ত বাতিল করতে পারবেন বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসার জন্য হাট-বাজারের সংরক্ষিত খালি জায়গা তোহা বাজার নামে পরিচিত। কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান সেখানে কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করতে পারবেন না। জেলা প্রশাসক/জেলা পরিষদ/উপজেলা পরিষদ/ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশন প্রয়োজনে ওই খালি জায়গায় খোলা শেড নিমার্ণ করতে পারবেন।

তোহা বাজারের জন্য কমপক্ষে হাটের মোট জায়গার অধের্ক জায়গা সংরক্ষিত রাখতে হবে। তোহা বাজার এবং গো-হাটার জন্য সংরক্ষিত/নিধাির্রত স্থান কোনোভাবেই বন্দোবস্ত দেয়া যাবে না বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রত্যেক হাট-বাজারে মহিলাদের কমর্সংস্থানের সুবিধাথের্ একটি মহিলা কনার্র রাখতে হবে। প্রত্যেক হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চলাচলের সুবিধাথের্ প্রয়োজনীয় মাপের চওড়া রাস্তা বা গলিপথ রাখতে হবে।

প্রত্যেক হাট-বাজারে পযার্প্ত পরিমাণে টিউবওয়েল, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, ড্রেন এবং স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন/প্রস্রাবখানার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

বিধিমালা অনুযায়ী, মেট্রোপলিটন শহর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা সদরের বাইরে যে কতৃর্পক্ষই হাট-বাজারে আধাপাকা ভবন নিমার্ণ করুক না কেন, হাট-বাজারের মাস্টার প্ল্যানকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে এর নকশা ও ডিজাইন অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর মাধ্যমে প্রস্তুত করতে হবে। ওই নকশা ও ডিজাইন সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভ‚মি), উপজেলা নিবার্হী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে চ‚ড়ান্তভাবে অনুমোদিত হবে।

হাট-বাজারের ভেতরের জমির মালিকানা সরকার তথা ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে থাকবে। বহুতল ভবন নিমাের্ণর সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে হবে।

কমিটির পক্ষে জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার ভ‚মি দোকান বরাদ্দের সালামি এবং ভাড়া নিধার্রণ করবেন। সরকারের ওই দু’জন কমর্কতার্র উপস্থিতি ছাড়া কোনো সালামি বা ভাড়া নিধার্রণ করা যাবে না।

বরাদ্দ দোকানগুলো থেকে আদায় করা সালামির ২৫ শতাংশ এবং ভাড়ার ৩০ শতাংশ টাকা ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের পাওনা হিসাবে ‘৭-ভূমি রাজস্ব’ খাতে জমা দিতে হবে। অবশিষ্ট টাকা সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কতৃর্পক্ষের রাজস্ব আয় হিসেবে গণ্য হবে। সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) এ অথর্ আদায়ের ব্যবস্থা নেবেন।

‘হাট-বাজারের জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া যাবে না’ উল্লেখ করে বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, ‘ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে হাট-বাজারের সরকারি মূল্য উল্লেখ করতে হবে। সরকারি মূল্য হবে বিগত তিন বছরের ইজারা মূল্যের গড় মূল্য।’

দরপত্র মূল্যায়ন ও দরদাতা প্রতিষ্ঠান নিধার্রণের বিস্তারিত বিবরণ নীতিমালায় দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিধাির্রত সময়ে মধ্যে ইজারা দেয়া সম্ভব না হলে হাট-বাজারের খাস আদায়ের পদ্ধতিও উল্লেখ করা হয়েছে বিধিমালায়।

এ ছাড়া বিধিমালায় টোল আদায়-সংক্রান্ত বিধি-বিধান, ইজারা বিষয়ে আপত্তি/আপিল নিষ্পত্তি বিধানও উল্লেখ করা হয়েছে।

হাট-বাজার থেকে প্রাপ্ত ইজারালব্ধ অথর্ ব্যবস্থাপনা ও বণ্টন সংক্রান্ত বিধানে বলা হয়েছে, ইজারার আয়ের পঁাচ শতাংশ সেলামিরূপে সরকারকে ইজারার টাকা জমা হওয়ার সাত কাযির্দবসের মধ্যে জমা দিতে হবে। ২০ শতাংশ ইউনিয়র পরিষদের সচিব, দফাদার ও মহল্লাদারদের বেতন হিসেবে দিতে হবে।

পঁাচ শতাংশ যে ইউনিয়নে হাট-বাজার সেই ইউনিয়ন পরিষদকে অতিরিক্ত হিসেবে দিতে হবে। চার শতাংশ অথর্ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয়, ১৫ শতাংশ অথর্ সংশ্লিষ্ট হাট-বাজার রক্ষাণাবেক্ষণে, ১০ শতাংশ উপজেলার উন্নয়ন তহবিলে, বাকি ৪১ শতাংশ অথর্ উপজেলা পরিষেদের রাজস্ব আয় হিসেবে গণ্য হবে।

যদি কোনো স্থানীয় কতৃর্পক্ষ হাট-বাজার ইজারার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করেন তবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ভ‚মি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে পরের বছর ইজারা কাযর্ক্রম নিজে বা অন্য কোনো দপ্তরকে পরিচালনার আদেশ দিতে পারবেন।

প্রতিটি হাট-বাজারে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ব্যবস্থাপনা কমিটি হবে। এ ছাড়া উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি কপোের্রশন পযাের্য় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে বিধিমালায়।ু

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<4611 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1