বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিমান ছিনতাই

আসন বদলাতে মানা করায় পিস্তল বের করেন পলাশ

ঢাকা থেকে ১৪৮ জন যাত্রী নিয়ে দুবাই পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু যাত্রাবিরতিতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণের পরই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয় বিমানটি
যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খীর পাইলটসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার আরও একটু স্পষ্ট চিত্র পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

বিমানের ক্রুরা পুলিশকে বলেছেন, বিজি-১৪৭ ফ্লাইটের যাত্রী পলাশ আহমেদ আসন পরিবর্তন করলে তাকে নিষেধ করেছিলেন একজন কেবিন ক্রু। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি 'পিস্তল' বের করেন।

ওই অবস্থায় পাইলট চট্টগ্রামে অবতরণ করেন, ইন্টারকমে পলাশকে আলাপে ব্যস্ত রেখে খুলে দেয়া হয় ইমার্জেন্সি এক্সিট। তারপর একজন কেবিন ক্রু ছাড়া যাত্রী ও ক্রুরা সবাই ওই বিমান থেকে নেমে পড়েন।

গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারি সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে ওই ঘটনার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পলাশ।

সেদিন তার হাত থাকা পিস্তলটি বাংলাদেশে তৈরি পস্নাস্টিকের একটি খেলনা বলে ইতোমধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।

ঢাকা থেকে ১৪৮ জন যাত্রী নিয়ে সেদিন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যেই রওনা হয়েছিল বিমানের ময়ূরপঙ্খী। চট্টগ্রাম হয়ে রাতেই দুবাই পৌঁছানোর কথা ছিল উড়োজাহাজটির।

কিন্তু নির্ধারিত যাত্রাবিরতিতে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই ওই বিমান আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে যায়।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ পরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা করে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া বলেন, সেদিন বিমানের ওই ফ্লাইটে মোট সাতজন ক্রু ছিলেন। তাদের মধ্যে পাইলট, ফার্স্ট অফিসার ও চারজন কেবিন ক্রুকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

পাইলটসহ ছয়জন বুধবার আমাদের কার্যালয়ে এসে তাদের বক্তব্য দিয়ে গেছেন। সেগুলো রেকর্ড করা হয়েছে। বাকি একজনের বক্তব্য শুনে আমরা পরবর্তী কাজে হাত দেব।

যে ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তারা হলেন- বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খীর পাইলট মো. গোলাম সাফি, ফার্স্ট অফিসার মুনতাসির মাহমুদ, কেবিন ক্রু শাফিকা নাসিম নিম্মী, হোসনে আরা, শরীফা বেগম রুমা ও আব্দুর শাকুর মুজাহিদ।

তদন্ত কর্মকর্তা রাজেশ বলেন, সেদিন সবার শেষে বিমান থেকে নামা কেবিন ক্রু সাগর এখন দায়িত্ব পালনের জন্য দেশের বাইরে আছেন। এ কারণে বুধবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। দেশে আসার পর তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

কেবিন ক্রুদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, পলাশের জন্য সেদিন ফ্লাইটের ১৭-ডি আসনটি বরাদ্দ ছিল। বিমান ওড়ার কিছু সময় পর তিনি আসন পরিবর্তন করলে একজন কেবিন ক্রু আরেকজন ক্রুকে সংকেত দিয়ে পলাশকে তার নির্ধারিত আসনে বসতে বলতে বলেন।

কিন্তু পলাশ তখন উত্তেজিত হয়ে পিস্তল বের করেন। সেটি দেখে কেবিন ক্রু নিম্মী বিষয়টি পাইলটকে জানান।

তদন্ত কর্মকর্তা রাজেশ বলেন, বিষয়টি জানার পর ক্যামেরা অন করেন পাইলট। পলাশকে ককপিটের দরজায় লাথি মারতে দেখেন তিনি। তার হাতে পিস্তল এবং বোমা সাদৃশ বস্তুও দেখেন।

পাইলটের নির্দেশে ফার্স্ট অফিসার মুনতাসির তখন বিষয়টি বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে জানিয়ে দেন। নির্ধারিত সময়ের পাঁচ থেকে সাত মিনিট আগেই চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে উড়োজাহাজটি।

ওই সময় পাইলট কেবিন ক্রুকে ইন্টারকমে পলাশের সাথে কথা বলিয়ে দিতে বলেন। পলাশকে আলাপে ব্যস্ত রেখে ইমার্জেন্সি এক্সিট খুলে দেয়া হয়। তখন যাত্রীরা বিমান থেকে নামতে শুরু করেন।

কেবিন ক্রুরা বিমানে 'পটকা ফাটার মতো' দুটো আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর কেবিন ক্রু সাগরকে পলাশের সঙ্গে রেখে অন্য কেবিন ক্রু এবং পাইলটও বিমান থেকে নেমে পড়েন।

তবে পলাশের 'বিমান ছিনতাই চেষ্টার' কারণ সম্পর্কে এখনই স্পষ্ট কিছু বলতে চাননি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া।

ওই ঘটনায় পতেঙ্গা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, পলাশ আহমেদ বিমানের পাইলট, কেবিন ক্রু ও যাত্রীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের হুমকি দিয়া জিম্মি করত আতঙ্ক সৃষ্টি করে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নাঈম হাসান সেদিন কমান্ডো অভিযানের পর বলেছিলেন, 'স্ত্রীর কোনো ইসু্য' নিয়ে বিমান ছিনতাইকারী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন বলে পাইলট তাকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই দুষ্কৃতকারী তার কিছু দাবি-দাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হবে বলে চিৎকার করে। অন্যথায় সে বিমানটি তার কাছে থাকা বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করে দেবে মর্মে হুমকি দেয়।

নিহত পলাশ চিত্রনায়িকা শিমলার স্বামী ছিলেন। ওই ঘটনার সাড়ে ৩ মাস আগে শিমলা তাকে তালাক দেন।

সিনেমার শুটিংয়ের জন্য মুম্বাইয়ে অবস্থানরত শিমলা দেশে ফিরলে তাকেও পলাশের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা রাজেশ বলেন, বিমানে থাকা ছয়জন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কর্মকর্তাসহ ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তদন্তের প্রয়োজনে আরও বেশ কয়েকজনকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<42264 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1