ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আইনজীবী সুরাইয়া জান্নাত সুমি। বাড়ির সামনে রাত দেড়টা পযর্ন্ত ভয়ানক জোরে হৈ হুল্লোড় আর গান বাজছিল। সে সময় তার বোন ও নিজের দু’জনেরই পরীক্ষা চলছে। কান ফাটা হিন্দি গানে পড়াশোনা চুলোয় উঠেছে।
সুরাইয়া জান্নাত সমস্যা সমাধানে জরুরি সেবা নম্বরের সহায়তা নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘বাসার ঠিক উল্টো পাশে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। রাত দেড়টা পযর্ন্ত অনেক জোরে হিন্দি গান বাজছে। আমার বোনের পরীক্ষা চলে। আমারও তখন হাইকোটের্র পরীক্ষা চলে। তারপর আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পর ওরা আমাকে মোহাম্মদপুর থানার সঙ্গে কানেক্ট করে দেয়। সব মিলিয়ে ১০ মিনিট লেগেছিল। ওরা এসে কথা-বাতার্ বলে গান বন্ধ করে দিয়ে যায়।’
এই সমস্যাটি অনেকের কাছেই গুরুত্বপূণর্ মনে নাও হতে পারে।
কিন্তু ঈদের সময় মহাসড়কে দুঘর্টনার প্রত্যক্ষদশীর্ তৌহিদুজ্জামান তন্ময় বলেন, তিনিও মোটামুটি ৩০ মিনিটের মাথায় সহযোগিতা পেয়েছেন।
জরুরি সেবা নম্বরের কাজ এমনই হওয়ার কথা।
কিন্তু এই নম্বরের দায়িত্বে থাকা পুলিশের টেলিকম ও ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালু হওয়ার পর থেকে তাদের কাছে এ পযর্ন্ত মোট ৩৭ লাখের মতো কল এসেছে। যার মধ্যে ২৪ লাখই অপ্রয়োজনীয় কল, ভুয়া কল বা অনেক ক্ষেত্রে কৌত‚হলী হয়ে ফোন করেছেন অনেকে। ১৮ লাখ ফোন কলই ছিল যেখানে কলার কোনো কথাই বলেননি।
শুধু পুলিশের কণ্ঠ শুনে ফোন কেটে দিয়েছেন। ছয় লাখ ছিল আজে-বাজে কথাবাতার্।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদশর্ক মো. ইকবাল বাহার বলেন, অনেকেই কল করছে; কিন্তু যখন কল রিসিভ হচ্ছে তখন কিছু বলছে না। আর ক্র্যাংক কলকে আমি বলছি অবাঞ্ছিত কল। এই কলটি করে তারা আসলে কোনো সাহায্যের বিষয়ে বা প্রয়োজনীয় কোনো বিষয়ে কথা বলে না। এমন কলার নাম্বারটি ব্যস্ত রাখে এবং তাতে প্রকৃত অথের্ যার সাহায্য দরকার সে বঞ্চিত হয়।
কিন্তু ভিন্ন ধরনের গল্প শোনান ঢাকার বাংলামটর এলাকার একটি রেস্টুরেন্টের মালিক।
তিনি বলেন, আমার রেস্টুরেন্টে চঁাদাবাজির ঘটনা সম্পকের্ নালিশ জানাতে ফোন করেছিলাম। আমাকে প্রথমে স্থানীয় থানার ফোন নম্বর ধরিয়ে দেয়া হলো। সেখান থেকে দেয়া হলো ডিউটি অভিসারের নম্বর। তিনি জানালেন এটা তার অঞ্চলের নয়। যখন বুঝলেন তারই অঞ্চলের তখন আর এক অফিসারের নম্বর দিলেন। তিনি বললেন ব্যস্ততার কথা। এতে অনেক সময় চলে গেল যে আমি নিজেই অন্য উপায়ে, মানে কিছু টাকা দিয়ে সমস্যার সমাধান করে ফেললাম।
কিন্তু বিশ্বব্যাপী নিয়ম হলো সরাসরি জরুরি নম্বরের দায়িত্বপ্রাপ্তরাই সংশ্লিষ্টদের জানাবেন এবং সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির কাছে জরুরি সেবাদানকারীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
বতর্মানে এই কল সেন্টারে ৭০ জন কাজ করেন। তবে এটি বাড়িয়ে ১০০ জন করার চিন্তা চলছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী এমন কলের মোটে ৩৭ হাজারের ক্ষেত্রে তারা সেবা দিয়েছেন।
অথার্ৎ ১৩ লাখের মতো বিশাল সংখ্যক কলার কোনো সাহায্য পাননি।
আর বিপদগ্রস্ত বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি পযর্ন্ত পেঁৗছাতে তাদের সময় লেগেছে ৩০ মিনিট।
সময়টি জরুরি বিভাগের রেসপন্স টাইম হিসেবে অনেক বেশি। আর ততক্ষণে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে।
ঘটনাস্থলের দূরত্ব, ট্রাফিক জ্যাম এবং গাড়ি ও জনবল সংকটই এর মূল কারণ বলছেন অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদশর্ক মো. ইকবাল বাহার।
তিনি বলেন, এ সময় ১০ মিনিটে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, আমরা পুলিশের গাড়িগুলোতে জিপিআরএস বসানো হবে। কোন গাড়িটি ঘটনাস্থলের সবচেয়ে কাছে আছে সেটিকে খুঁজে তাকে সরাসরি ঘটনাস্থলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে চাই।
তবে সে জন্য কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে জনগণকে।
ডিসেম্বরে তা চালু করার চেষ্টা চলছে। আর যারা ঘনঘন ক্র্যাংক কল বা বø্যাংক কল করছেন তাদের শাস্তি ও জরিমানার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কমর্কতার্।
কিন্তু যে ১৩ লাখ কলার সাহায্য পাননি তার কারণ কী?
এই কমর্কতার্ বলেন, সাত লাখ কল এসেছে নানা ধরনের প্রশ্ন নিয়ে যারা মূলত মোবাইল অপারেটরদের সম্পকের্ তথ্য চেয়েছেন যা আমাদের জানা নেই। আমাদের কাছে সবাই সেবা পেয়েছে। সবার কল আমরা ধরেছি।
কেউ সহায়তা পাননি সেটি মানতে রাজি নন তিনি।
কিন্তু ওই রেস্টুরেন্ট মালিকের মতো অবস্থায় কেন পড়ছেন অনেকে, তার জবাব ঠিক মেলেনি।