শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
গণভবনে প্রধানমন্ত্রী

জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় আসব না দিলে নয়

কমির্বমুখ না হতে আহŸান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়, সে জন্য আমরা সহযোগিতা দিচ্ছি। পুরো সংসারের দায়িত্ব আমরা নেব না’
যাযাদি রিপোটর্
  ১৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সামাজিক সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিতরণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন Ñফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সামনে নিবার্চন, জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আবার ক্ষমতায় আসব, না হলে আসব না। এটা আল্লাহর ওপরও নিভর্র করে। তিনি যদি চান; তবে, এর আগেই আমি আমার কাজগুলোকে সুরক্ষিত করতে চাই। ...মানুষের সেবা করাই আমাদের কাজ, মানুষের পাশে থাকাই আমাদের কাজ।’

সামাজিক নিরাপত্তাবলয় কমর্সূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে (জিটুপি-গভনের্মন্ট টু পারসন) বিতরণ কাযর্ক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কাযর্ক্রমের উদ্বোধন করেন। এই কমর্সূচির আওতায় প্রবীণ, শারীরিক প্রতিবন্ধী, বিধবাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬৭ লাখ ভাতাপ্রাপ্ত মানুষ প্রতি মাসের নিদির্ষ্ট সময় মোবাইল ফোনে এসএমএস পাওয়ার পর সরাসরি ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত ভাতা তুলতে পারবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। প্রতিটি গ্রামের মানুষ শহরের মতো সুবিধা পাবে।’ তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি ভাতা দেয়ার পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাতে দরিদ্র মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তাদের সম্পদ ও টাকা-পয়সা কেউ কেড়ে নিতে না পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে ভাতার টাকা ব্যাংক ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে যেত। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ আমরা সেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে যার যা প্রাপ্য, তার কাছেই পেঁৗছে দেব। কেউ আর কমিশন খেতে পারবে না। সরাসরি টাকা আপনার হাতে পেঁৗছে যাবে।’ তিনি বলেন, টাকা প্রাপকদের নামের একটি ডেটাবেজ করে রাখা হবে, যাতে কেউ তাদের নিয়ে কোনো রকম খেলা খেলতে না পারে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তির কাছে অথার্ৎ ‘গভনের্মন্ট টু পারসন’ এই ভাতা পেঁৗছে যাবে।

সরকারি ভাতার ওপর নিভর্র করে কমির্বমুখ না হতে হতদরিদ্রদের আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়, সে জন্য আমরা সহযোগিতা দিচ্ছি। পুরো সংসারের দায়িত্ব আমরা নেব না। মানুষ যাতে পুরোপুরি ভাতার ওপর নিভর্রশীল না হয়, কমির্বমুখ না হয়। তিনি বলেন, এমন পরিমাণে ভাতা দেয়া হবে, যা দিয়ে আপনি খাদ্য কিনতে পারবেন। কিন্তু আপনাকে কাজ করতে হবে। শুধু ভাতার ওপর নিভর্রশীল হলে চলবে না। যারা কমর্ক্ষম, তারা কাজ করবেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আমলে দুস্থ মানুষ সেবার বদলে বারবার নিগৃহীত হয়েছে। তখন সামাজিক ভাতা ১০০ টাকা দিলে মাঝখান থেকে ৫-১০ টাকা নিয়ে নিত। এখানেও দুনীির্ত ছিল। এমন ব্যবস্থা চালু করে যাচ্ছি, যাতে মানুষকে আর ভোগান্তি পোহাতে না হয়।

সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় ২০০৫ সালে ১৩ শতাংশ হতদরিদ্র মানুষ থাকলেও ২০১৮ সালে ২৮ শতাংশ প্রান্তিক মানুষ এখন সুবিধা পাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ছয় বছর প্রবাসজীবন শেষে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশে ফেরার সময়ের স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, তখন সারাদেশে ছুটে বেড়িয়েছি। দেখেছি হাড্ডিসার, কঙ্কালসার মানুষ ক্ষুধার তাড়নায়, চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করছে। এসব দুভার্গা মানুষের জন্যই স্বাধীনতা, তাদের কল্যাণের জন্যই ছিল আমার বাবার (বঙ্গবন্ধু) রাজনীতি। তাদের জন্যই তিনি সারাজীবন জেল-জুলুম- অত্যাচার সহ্য করে গেছেন।

দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য, এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করা।’ তিনি সুষ্ঠুভাবে দেশসেবার জন্য সবার দোয়া প্রত্যাশা করেন।

অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নরসিংদী, চঁাপাইনবাবগঞ্জ, গোপালগঞ্জের প্রান্তিক এলাকার সামাজিক নিরাপত্তা কমর্সূচির আওতায় উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উপকারভোগীদের ব্যাংক হিসাবে টাকা পেঁৗছানোর খবর তাদের মোবাইল ফোনে চলে যাবে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তারা টাকা তুলতে পারবেন। কেউ টাকা আনতে ব্যাংক বা ইউনিয়ন পরিষদে যেতে না পারলে তারা সমাজকল্যাণ অফিসকে জানাবেন, বাড়িতে টাকা পেঁৗছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

ভাতাভোগীরা মধুমতি, এনআরবি, ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে এই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। সরকার চলতি অথর্বছর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তাবলয় কমর্সূচির আওতায় চার হাজার ৩১৭ কোটি টাকা হরিজন, চা-শ্রমিক এবং দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতার জন্য বরাদ্দ করেছে।

সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান প্রকল্পের অথর্ প্রদান-সম্পকির্ত প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ এবং চঁাপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসকরা ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন। এ সময় আরও সাতটি জেলা অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<4060 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1