মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হাওরাঞ্চলে নতুন মাছের সংকট

যাযাদি রিপোটর্
  ১৭ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৭ জুলাই ২০১৮, ০০:৫৬
হাওরে মাছ ধরছেন জেলেরা Ñফাইল ছবি

দেশের অন্যতম মৎস্যভাÐার হিসেবে খ্যাত নেত্রকোনার হাওরগুলোয় এ বছর পযার্প্ত ডিম না ফোটায় মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মৎস্যজীবীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভঁাজ পড়েছে। স্থানীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানান, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিস্তীণর্ হাওরগুলো হচ্ছে মিঠা পানির মৎস্যভাÐার। এই হাওরগুলোতে বছরের ৭-৮ মাস পানি থাকে। বৈশাখ মাসের শুরুর দিকে বৃষ্টিপাতে নেত্রকোনার হাওরগুলোয় নতুন পানি আসতে শুরু করে। নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে ১৫ বৈশাখ থেকে ৩০ বৈশাখের মধ্যে রুই, কাতলা, বোয়াল, সিং, মাগুর, কৈ, গইন্যা, আইড়, সরপঁুটি, কালবাউশ, চিংড়ি, শোল, গজারসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশীয় মা মাছ হাওরে প্রচুর ডিম ছাড়ে। সেই ডিম থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই রেণু পোনা ফুটতে শুরু করে। কিন্তু এ বছর মাছের ডিম না ফোটায় আষাঢ় মাস শেষ হতে চললেও এই ভরা বষাের্তও মাছের পোণা কিংবা তেমন কোনো ছোট মাছ চোখে পড়ছে না স্থানীয় জেলেদের। একদিকে জলবায়ু পরিবতের্নর কারণে ঋতু পরিবতর্ন ঘটছে, অন্যদিকে হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষায় অপরিকল্পিত বেড়িবঁাধ নিমার্ণ, নদ-নদী, খাল-বিল জলাশয়গুলো দিন দিন ভরাটের ফলে মাছের প্রজনন শূন্যতার দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। খালিয়াজুরী উপজেলা মৎস্য কমর্কতার্ মো. মজিবুর রহমান জানান, হাওরে প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ রয়েছে। নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে মা মাছেরা প্রচুর ডিম ছাড়ে। সেসব ডিম থেকে প্রায় ১০ মেট্রিক টন রেণু পোনা উৎপাদিত হয়। বিস্তীণর্ হাওরাঞ্চলে দৌড়াদৌড়ি করতে পারায় মাছগুলো দ্রæত বড় হয়ে উঠে। প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। এখানকার উৎপাদিত মাছ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করেও জাতীয় অথর্নীতিতে প্রায় ৩শ কোটি টাকার অবদান রাখছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবতের্নর প্রভাব এবং খালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন হাওরে অপরিকল্পিত ফসল রক্ষা বেড়িবঁাধ নিমাের্ণর কারণে মৎস্য প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খালিয়াজুরীর মৎস্যজীবী সুনীল বমর্ণ বলেন, ‘দুই বছর আগেও এই সময় হাওরে জাল টান দিলে ছোট সাইজের রুই, কাতলা, বোয়াল, কালবাউশ, গইন্যা ও আইড় মাছসহ নানা জাতের প্রচুর মাছ পাইতাম। কিন্তু এইবার হাওরে তেমন মাছ পাইতাছি না।’ খালিয়াজুরী উপজেলার ভল্লবপুর গ্রামের মৎস্যজীবী কালাচান মিয়া বলেন, ‘বষার্কালে হাওরে বেড় জাল দিয়া টান দিলে জালে মাছ ভইরা যাইত। কিন্তু এহন হাওরে সারা দিন জাল টানলেও মাছের দেহা পাই না।’ কৃষিবিদ দীলিপ সেন জানান, নেত্রকোনার হাওরের জমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় সার প্রয়োগের ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে সরকারি উদ্যোগে মাছের পোনা ছাড়তে হবে। নয়তো হাওরে মাছের সংকট দেখা দেবে। নেত্রকোনা জেলা মৎস্য কমর্কতার্ ড. মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, ফসল উৎপাদনে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, পলি পড়ে প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ক্রমশ ভরাট হয়ে যাওয়া, পযার্প্ত পরিমাণে মাছের অভয়াশ্রম না থাকা, জলমহালগুলোতে বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও শুকিয়ে মাছ ধরার প্রবণতা ও মাছের উৎপাদনে দীঘের্ময়াদি প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, উপজেলা মৎস্য কমর্কতাের্দর হাওরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে কী কী করণীয় সে সম্পকের্ প্রতিবেদন দাখিলের নিদের্শ দেয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে