আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা আবদুল বারিককে (৪৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে দলীয় প্রতিপক্ষের লোকজন। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন তার ভাই আনিসুর রহমান (৪০)। রোববার সকালে যশোরের চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের চারাবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবদুল বারিক ফুলসারা ইউনিয়নের চারাবাড়ি গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। অভিযুক্তরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও গত ২৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগে যোগদান করে। দলের একটি গ্রম্নপের আর্শিবাদপুষ্ট হওয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চৌগাছা হাসপাতালে নিহতের ভাই আবুল বাশার সাংবাদিকদের জানান, দুইভাই আব্দুল বারিক ও আনিসুর রহমান নিজেদের একটি পুকুরে মাছ ধরছিলেন। এসময় এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী নান্নু, জুলু, আরিফসহ সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের হাসপাতালে আনা হয়।
চৌগাছা ৫০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার সুরাইয়া পারভীন বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই আব্দুল বারিকের মৃতু্য হয়েছে। আর আনিসুর রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। নিহত ও আহত উভয়ের শরীরের একাধিক স্থানে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর দুটি গ্রম্নপ রয়েছে। এলাকায় দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। নিহত আবদুল বারিক মাসুদ চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
ফুলসারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান পান্নু বলেন, অভিযুক্ত নান্নু, জুলু ও আরিফ সারাজীবন বিএনপি করেছে। গত ২৮ ডিসেম্বর তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হাবিবুর রহমানের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগের যোগদান করেছে। আওয়ামী লীগে যোগদানের পর থেকে এলাকায় তারা বাঘ হয়ে যায়। আবদুল বারিককে মারার জন্য অনেক দিন ধরেই ওরা হুমকি দিচ্ছিল। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের সম্পর্ক নেই।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমানের অনুসারী ফুলসারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান। তার দাবি, ৩০ বছর ধরে আবদুল বারিক, নান্নু, জুলু ও আরিফদের সঙ্গে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। যখন চেয়ারম্যান ছিলাম, তখনো শালিস করেছি। বর্তমান চেয়ারম্যানও শালিস করছে। দুই পক্ষের পরস্পরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিনেও বিরোধের মীমাংসা হয়নি। রোববার সকালে পুকুরের মধ্যে ফেলে আবদুল বারিক ও তার ভাই আনিসুরকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। এটা সম্পূর্ণ পারিবারিক দ্বন্দ্ব। রাজনীতির কোন বিষয় নয়। অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগেও যোগদান করেনি।
চৌগাছা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও চৌগাছা উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ মিশ্র জয় বলেন, হামলাকারীরা বিএনপি করতো। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দু'দিন আগে এক নেতার হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই আবদুল বারিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রিফাত খান রাজীব বলেন, দুপক্ষের বাড়ি পাশাপাশি। জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। জমিজমার বিরোধে দুই পক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মামলাও আছে। এটি রাজনৈতিক কোন হত্যাকান্ড নয়। এই ঘটনায় বাদী এজাহার দেয়নি। অভিযুক্তদেরও আটক করা হয়নি।