বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসীদের ভোগান্তির শেষ কোথায়!

যাযাদি রিপোটর্
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
দেশে ফিরেই বিমানবন্দরে নানারকম ভোগান্তির শিকার হন প্রবাসীরা। ছবিতে ট্রলি না পেয়ে এভাবেই কঁাধে করে লাগেজ বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এক প্রবাসী Ñযাযাদি

এই তো ক’দিন আগেই হযরত শাহজালাল আন্তজাির্তক বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকমীর্রা প্রবাসীদের ‘কামলা’ সম্বোধন করেছিলেন। দেশের উন্নয়নের অংশীদার হয়েও এমন কথা শুনতে হয়েছে তাদের। দেশে অপমানের শিকার আর বিদেশে নিযার্তনের শিকার প্রবাসীদের কিছুই করার থাকে না এমন মুহূতর্গুলোতে; শুধু নীরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া।

গত ৬ ফেব্রæয়ারি (বুধবার) দুপুরে জুয়েল রহমান নামে এক ইতালি প্রবাসী হযরত শাহজালাল আন্তজাির্তক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরের যাবতীয় কাযর্ক্রম শেষে দুপুর ২টার দিকে প্রাইভেট কারযোগে বাসার উদ্দেশে রওনা হন।

এরপর হোটেল রেডিসনের কাছাকাছি পেঁৗছালে পথিমধ্যে একটি মোটরসাইকেলে করে দুইজন ও পরে প্রাইভেট কারে করে আরও দুইজন এসে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে লাগেজ চেক করার কথা বলে প্রাইভেট কারে ওঠায়।

কিছুদূর যাওয়ার পর ওই প্রবাসীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে খিলক্ষেত থানার অপর পাশে ফ্লাইওভারের কাছে কৌশলে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে মালামাল নিয়ে চলে যায় তারা।

পরে এই তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের নাম সোবহান গাজী (২৮), মিনহাজ উদ্দিন (৪২) ও সৈয়দ নাসিম আলম (৪৮)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত হতে ছিনতাইকৃত ৩টি লাগেজ, ১টি সাইড ব্যাগ ও অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়।

পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূর-প্রবাসে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের অথর্নীতিতে এমন ভূমিকা রাখলেও এই প্রবাসীরা এয়ারপোটের্ ভোগান্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোটর্ ইস্যুসহ বিভিন্ন কাজে হয়রানির শিকার হন। এমনকি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসে মারা যাওয়ার পর তার মরদেহটি দেশে পাঠাতে গুনতে হয় বিপুল পরিমাণ অথর্।

ওমান থেকে এত বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এলেও আজ হাজারো শ্রমিক বিনা কারণে জেলখানায় বন্দি। শুধু একটি টিকিটের জন্য মাসের পর মাস জেল খাটছে বহু রেমিট্যান্স যোদ্ধা।

হাসপাতালের মগের্ পড়ে আছে বহু রেমিট্যান্স যোদ্ধার মরদেহ। শুধু টাকার জন্য পাঠানো যাচ্ছে না মরদেহগুলো। রাতে ঘুমের ঘরে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের। গ্রেপ্তার আতঙ্ক, পারিবারিক চাপ, কাজের অনিশ্চয়তা, এসব কারণে অল্প বয়সে প্রতিনিয়ত ঝরে যাচ্ছে অনেক রেমিট্যান্স যোদ্ধা।

সম্প্রতি দুবাই থেকে ফেরেন গাজীপুরের লিয়াকত হোসেন। পরিবার-পরিজনের জন্য উপহার এনেছেন লাগেজ ভতির্ করে। বিমানবন্দরের গাড়ি পাকির্ংয়ে গিয়ে তিনি সিএনজি অটোরিকশাযোগে রেলস্টেশনে যাবেন বলে স্থির করেছিলেন। মালপত্র বিমানবন্দরের ট্রলিতে করে পাকির্ংয়ের দিকে আসতে গিয়ে বাধা পেলেন তিনি।

নতুন নিয়ম ট্রলি পাকির্ং পযর্ন্ত নেয়া যাবে না। বিমানবন্দর কতৃর্পক্ষের এমন আকস্মিক সিদ্ধান্তের কারণে বেশ ঝামেলাতেই পড়তে হচ্ছে দেশে ফেরত প্রবাসীদের।

দীঘির্দন পর দেশে ফেরা অনেক প্রবাসীই অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে আসেন। নিয়ম অনুযায়ী ২০ থেকে ৭০ কেজি পযর্ন্ত মাল বহনের সুযোগ রয়েছে। শতর্সাপেক্ষে আরও প্রায় ৭ কেজি বহন করা যায়। তাই এই সুযোগ কাজে লাগান অনেক প্রবাসী। দেশে ফেরার সময় পরিবার-পরিজনের জন্য নিয়ে আসেন নানান উপহার। তাতে ব্যাগ ভারি হয়ে যায়। কিন্তু ট্রলি পাকির্ং পযর্ন্ত ব্যবহার করতে না দেয়ায় বিমানবন্দরে নেমেই মালপত্র নিয়ে এমন বিপাকে পড়তে হয় প্রবাসীদের।

কাতার থেকে আসা চট্টগ্রামের বেলাল খান অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘অনেক দিন পরে দেশে ফিরলাম। আত্মীয়স্বজনের জন্য কিছু উপহার এনেছি। এতে লাগেজ বেশ ভারি হয়েছে। কিন্তু এখন তো গাড়ি নিতে হলে বাইরের পাকির্ং থেকে নিতে হবে। তাই মালপত্র কঁাধে করেই বের হয়েছি।’

এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃর্পক্ষ বাংলাদেশের একাধিক দায়িত্বশীল কমর্কতার্ বলেন, যাত্রীসাধারণের সুবিধাথের্ই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একটু অসুবিধা হলেও এটি দীঘের্ময়াদি সুফল বয়ে আনবে।

বাংলাদেশের অথর্নীতির সমৃদ্ধি, একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনিমার্ণ আর একজন প্রবাসীর স্বপ্ন একই সুতোয় বঁাধা থাকলেও প্রবাসীরা কখনো কখনো নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যেন দেখার কেউ নেই। দীঘর্ পঁাচ মাস যাবৎ মমাির্ন্তক সড়ক দুঘর্টনায় আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক রেমিট্যান্স যোদ্ধার দেশে ফেরার আকুতিতে ভারি হয়ে উঠেছে ওমানের সুমাইল হাসপাতালের আকাশ-বাতাস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<36913 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1