বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘সূত্রহীন’ মামলার রহস্য উদঘাটন পিবিআইর

যাযাদি রিপোটর্
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০৫
রাজধানীর কদমতলী এলাকায় তিন বছর আগে রাসেল হত্যা মামলায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। ছবিটি রোববার পিবিআইর কাযার্লয় থেকে তোলা Ñযাযাদি

কদমতলী এলাকার সূত্রহীন (ক্লু-লেস) রাসেল হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করার দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা। হত্যাকাÐে জড়িত প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার এ তথ্য প্রকাশ করে পিবিআই। পিবিআই জানিয়েছে, পাওনা টাকা চাওয়ার ঘটনায় মনোমালিন্যের জেরে রাসেলকে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি হলেন সজল ওরফে পিচ্চি সজল (২২)। গ্রেপ্তার হওয়া অপর ব্যক্তি হলেন, মো. হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবু (২৫)। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ওই হত্যাকাÐের ঘটনায় ব্যবহৃত ২টি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। পিবিআই জানায়, নিহত রাসেল (২২) তার গ্রামের বাড়িতে কৃষি কাজ করতেন। রাসেল তার মায়ের কাছ থেকে পঁাচ হাজার টাকা নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর ঢাকায় চাকরির সন্ধানে আসে। পরের মাসের রাত ১১ টার দিকে রাসেলের মা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংবাদ পান যে, রাসেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে মারা গেছেন। তখন রাসেলের মা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মগের্ গিয়ে ডান পঁাজরে পিঠের দিকে ব্যান্ডেজ অবস্থায় তার ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। স্থানীয়ভাবে জানতে পারেন যে, কদমতলীর বড়ইতলা মোড়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি ছুরি দিয়ে তঁার ছেলে রাসেলকে আঘাত করে। পরে তার ছেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কিন্তু কি কারনে এবং কারা তার ছেলেকে হত্যা করে সে সম্পকের্ কোন তথ্য পাননি তিনি। এ ঘটনায় রাসেলের মা রাশিলা বেগম (৪০) অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় মামলা দায়ের করেন। খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় আদালতের আদেশে পিবিআইয়ের ঢাকা (উত্তর) উপপরিদশর্ক (এসআই) মো. আল-আমিন শেখ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। তিনি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে ক্লু-লেস রাসেল হত্যাকাÐের রহস্য উদ্?ঘাটনের জন্য রাসেলের গ্রামের বাড়ি খুলনার রূপসা থানা এলাকাসহ ঢাকা মহানগরীর কদমতলী এলাকায় তদন্ত করেন। পরে মামলার নিয়োজিত গুপ্তচর ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তদন্তকারী কমর্কতার্র নেতৃত্বে একটি দল শনিবার সকালে প্রধান আসামি সজল ওরফে পিচ্চি সজলকে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানার আমতলী এলাকা থেকে আটক করে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপযাের্য় রাসেল হত্যা মামলার রহস্য বেরিয়ে আসে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে হত্যাকাÐে জড়িত হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবুকে শ্যামপুর থানার হাজীগেট ব্যাংক কলোনি থেকে আটক করা হয়। এ সময় হত্যাকাÐে ব্যবহৃত ২টি চাকু উদ্ধার করা হয়। আটককৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই জানতে পারে, সজল নিহত রাসেলের একই গ্রামে বিয়ে করেন। সেই সুবাদে উভয়ের মধ্যে সু-সম্পকর্ গড়ে ওঠে। সজল ঢাকার কদমতলী এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসাবে থাকতেন। এ সময় রাসেলের সঙ্গে সজলের সখ্য গড়ে ওঠে। একপযাের্য় রাসেলকে সজল ঢাকায় টায়ারের ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে। ঢাকায় আসার পরে চাকরি দেয়ার কথা বলেও চাকরি না দেয়ায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে সজলের পরিচিত পিংকি ও পারভেজ কদমতলী ও শ্যামপুর থানা এলাকার মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। পিংকি ও পারভেজের মধ্যে এলাকায় মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীঘির্দন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জের ধরে পিংকি পারভেজকে খুন করার জন্য বাবু ওরফে হুন্ডা বাবু ও সজলকে ভাড়া করে। তারা পারভেজকে খুন করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ঘটনার দিন রাত ১১ টার দিকে একত্রিত হয়। সেখানে নিহত রাসেলকেও সজল কৌশলে নিয়ে আসে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে সজল ও বাবু অন্যান্যদের নিয়ে ইয়াবা সেবন শুরু করে। তাদের পূবর্-পরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়াবা সেবন শেষে সজল ও বাবু তাদের কোমরে থাকা চাকু দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে পারভেজ ও রাসেলকে চাকু দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর রক্তাক্ত পারভেজ ও রাসেলের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে এবং চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় রাসেল মারা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে