বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযোগের ১০ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার, বাইক পেলেন শাহনাজ

যাযাদি রিপোটর্
  ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৪৯
চুরি যাওয়া বাইকের চাবি শাহনাজ আক্তারের হাতে তুলে দিচ্ছেন তেজগঁাও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার বিপ্লব সরকার Ñযাযাদি

শাহনাজ আক্তার তার চুরি যাওয়া বাইকটি ফেরত পেয়েছেন। বুধবার দুপুরে তেজগঁাও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার বিপ্লব সরকার বাইকের চাবি শাহনাজের হাতে তুলে দেন। এ সময় শাহনাজের মুখে খুশির ঝিলিক দেখা যায়। অভিযোগ পাওয়ার পর মাত্র সাড়ে ১০ ঘণ্টায় চুরি যাওয়া বাইকটি উদ্ধার করতে পেরে পুলিশ সদস্যরাও খুশি। রাজধানীতে তেজগঁাও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনারের কাযার্লয়ে বাইকের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিপ্লব সরকার শাহনাজ বেগমের হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন। বিপ্লব সরকার বলেন, ‘সংগ্রামী নারী শাহনাজ আক্তার বাইক চালিয়ে সংসার চালাতেন। বাইক চুরির পর থেকে তিনি বাইক চালাতে পারেননি। তার উপাজের্নর পথ বন্ধ ছিল। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা কিছু আথির্ক সহায়তা দিয়েছি। শাহনাজ এ সহায়তা নিতে চাচ্ছিলেন না। একে আথির্ক সহায়তা না বলে বলা যায়, আমরা এই সংগ্রামী নারীর পাশে থাকতে চেয়েছি।’ এত কম সময়ে বাইক উদ্ধার প্রসঙ্গে বিপ্লব সরকার বলেন, ‘শাহনাজ আক্তার নামের এই নারীর বাইক চুরি যাওয়ার খবর প্রথম পাই একটি পত্রিকার মাধ্যমে। অনেক সময় আমাদের চেষ্টা সফল হয় না বা সময় লাগে। তবে এ ক্ষেত্রে মাত্র সাড়ে ১০ ঘণ্টায় আমরা বাইক উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। বাইকটি যিনি চুরি করেছেন, তাকেও আটক করতে পেরেছি।’ বিপ্লব সরকার বলেন, ‘চাবি হস্তান্তর করার সময় শাহনাজ আক্তারের মুখে হাসি ছিল, একইভাবে একটি ভালো কাজ দ্রæত করতে পারায় আমাদের মুখেও হাসি ছিল। চুরি মামলার অভিযোগে আটক জোবাইদুলের গতিবিধি সন্দেহজনক। আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে রিমান্ড চাইব।’ অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ার করে জীবিকা চালানো আলোচিত সেই নারী বাইকচালক শাহনাজের চুরি যাওয়া মোটরবাইকটি নারায়ণগঞ্জের রঘুনাথপুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দেন পুলিশের তেজগঁাও জোনের সহকারী কমিশনার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় প্রতারণার মাধ্যমে বাইকটি চুরি করে নিয়ে যান জোবাইদুল নামের এ যুবক। এ ঘটনায় শাহনাজ শেরেবাংলা নগর থানায় বাইক চুরির অভিযোগে মামলা করেন। শাহনাজের বাইক উদ্ধারের জন্য যারা তার পাশে ছিলেন, তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি জানান, জোবাইদুল কয়েক দিন আগে তার কাছে জনি নামে পরিচিত হন। জনি নামের এ যুবকও অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ার করেন বলে জানিয়েছিলেন। শাহনাজকে একটি স্থায়ী চাকরি দেয়ার কথা বলে মঙ্গলবার তার সঙ্গে দেখা করেন। মঙ্গলবার শাহনাজকে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে খামারবাড়ি এলাকায় একটি অফিসের সামনে আসেন। তারা অফিসের বাইরে দঁাড়িয়ে একসঙ্গে চা খান। একপযাের্য় জোবাইদুল শাহনাজের কাছে জানতে চান, বাইকটি তিনি কীভাবে চালান। এরপর তিনি নিজেই বাইকে চড়ে বসেন। কিছুক্ষণ বাইক চালানোর ভাবভঙ্গি করে একসময় বাইকটি চালিয়ে চলে যান। শাহনাজ পেছন পেছন গেলেও আর তাকে ধরতে পারেননি। তারপর জোবাইদুলের মুঠোফোনে ফোন দিলে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন এবং জানান তিনি শাহনাজ নামের কাউকে চেনেন না। বাইক উদ্ধারে নেতৃত্ব দেয়া আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, মামলার আসামি জোবাইদুল (২৬) প্রথমে মিথ্যা কথা বলেন। শাহনাজ আক্তারের কাছে টাকা পেতেন বলে জানান। পরে প্রতারণা করে বাইক চুরির কথা স্বীকার করেন। আসামি নিজেকে শিক্ষাথীর্ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বিবাহিত। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল। আসামির কথাবাতার্য় মনে হচ্ছে তিনি মাদকাসক্ত এবং বাইক চুরির কোনো দলের সঙ্গে জড়িত। তাকে শেরেবাংলা নগর থানায় নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে। এক মাস ধরে মোবাইল স্মাটের্ফানের অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি-সেবার নেটওয়াকর্ উবারের মাধ্যমে মোটরবাইক চালাচ্ছেন শাহনাজ আক্তার। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে তিনি অনেকটাই পরিচিত হয়ে উঠেছেন। পত্রিকায় ‘মানুষের হাসি দেখলে তো আমার সংসার চলবে না’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর শাহনাজ আক্তারের সংগ্রামী জীবনের গল্প অনেকে জানতে পারেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে