শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
একাদশ সংসদ নিবার্চন ঢাকা-৪

বাবলার গণসংযোগে সাড়া নেই: মাঠে সালাহউদ্দিনও

যাযাদি রিপোটর্
  ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আবু হোসেন বাবলা

ঢাকা-৪ আসনে নিবার্চনের প্রধান দুই প্রতিদ্ব›দ্বী জাতীয় ঐক্যফন্টের সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মহাজোটের প্রাথীর্ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এই দুই প্রাথীর্র গণসংযোগ একটা বিষয়ে মিল রয়েছে। তা হচ্ছে দুইজনের গণসংযোগে কমীর্ নেই বললেই চলে। বাবলা জাতীয় পাটির্র নেতা হওয়ায় আওয়ামী লীগের কমীর্রা এখনো তার সঙ্গে তেমন যোগ দিচ্ছেন না। আর জাতীয় পাটির্র কমীর্ না থাকায় তাকে হাতেগোনা কয়েকজনকে নিয়ে নিবার্চনী প্রচারণা চালাতে হচ্ছে।

অন্যদিকে পুলিশ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হুমকি-ধমকি, মারধর, ককটেল নিক্ষেপ, পোস্টার-ব্যানার টানাতে না দেয়া ও গণগ্রেপ্তারের ফলে নিবার্চনী প্রচারণায় দলীয় নেতাকমীের্দর কাছে পাচ্ছেন না সালাহ্উদ্দিন আহমেদ। তবে ভয়ভীতি ও পুলিশি হয়রানির মাঝেও সমথর্কদের নিয়ে প্রচারণায় সরব আছেন তিনি।

সালাহউদ্দিনের প্রচারণা: শ্যামপুর ও কদমতলী থানা এলকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ বিশাল কমীর্বাহিনীর নিয়ন্ত্রকারী হিসেবে সুপরিচিত। কিন্তু মামলার কারণে সেই কমীর্বাহিনীর অনেকে আছেন কারাগারে, আবার অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে আছেন। তবে কমীের্দর অনুপস্থিতিতে বসে নেই সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনবারের সাবেক এই এমপির সমথের্ন সাধারণ মানুষ নেমে এসেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নিয়ে গণসংযোগ করছেন। তার এই গণসংযোগ ঠেকাতে, হুমকি, গ্রেপ্তারসহ নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদসহ স্থানীয় ভোটাররা।

গত শনিবার রাতে পুলিশ শ্যামপুরের চেয়ারম্যান রোড এলাকার বাসিন্দা ও সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রীর বড় ভাই শফিকুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালায় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ষাটোধ্বর্ একজন বৃদ্ধ নাম না প্রকাশ করার শতের্ জানান, শনিবার রাতে শফিকুল ইসলামের বাড়িতে পুলিশি হামলার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার পর যারা যারা তার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তাদের গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান ওই বৃদ্ধ।

এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন সালাহ্উদ্দিন আহমেদের ছেলে ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভির আহমেদ রবিন। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, ‘যেহেতু মামা এলাকায় জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী। তাকে পুলিশ নিয়মিত হেনস্থা করে যাচ্ছে। তার বাড়িতে হামলা করা হলো এ জন্য যে যাতেÑ তার অবস্থা দেখে জনগণ ভয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রচারণার এই কয়েকদিনে বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপের পরে উল্টো বিএনপি নেতাকমীের্দর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে বিএনপি কমীের্দর ধরে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল।

গত দুইদিন শ্যামপুরের বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট, মিছিল ও হ্যান্ডমাইকের মাধ্যমে প্রচরণা চালান সালাহউদ্দিন। শ্যামপুরের চেয়ারম্যান রোড এলাকায় নিজে হ্যান্ডমাইকে প্রচারণার একপযাের্য় পুলিশের একটি টহল গাড়ি সেখানে এলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সালাহ্উদ্দিন একপযাের্য় নিজে সেখানে গিয়ে পুলিশকে চলে যেতে বললে পুলিশ সেখান থেকে সরে যায়।

পুলিশ সেখান থেকে সরে গেলে সালাহউদ্দিন এলাকাবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘ধানের শীষে ভোট দিলে পুলিশের চঁাদাবাজি বন্ধ করা হবে। বাবলার চঁাদাবাজি বন্ধ করা হবে। মাদক ও সন্ত্রাস নিমূর্ল করা হবে।’

এদিকে গত রোববার রাতেও শ্যামপুর থানা মহিলা দলের সভাপতিসহ ৭ জনকে সালাহউদ্দিন আহমদের বাসভবন থেকে আটক করা হয়।

সালাউদ্দিন আহমেদের প্রচারণায় বাধা, হামলা, গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে কদমতলী থানার পুলিশের পরিদশর্ক (এসআই) ইকবাল হোসেন জানান, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো বাধা দিচ্ছেন না। প্রচারণার সময় টহল ডিউটির পুলিশ সেখান দিয়ে আসছিল। পথে বিএনপির প্রাথীর্র মিছিল পড়লে নেতাকমীর্রা পুলিশ দেখেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তাদের মিছিলে বাধা দেয়ার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।

অবশ্য সালাহ্উদ্দিন আহমদের ছেলে তানভির আহমদ রবিনের বক্তব্য পুরোপুরি ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘পুলিশের হুমকি-ধমকির ভয়ে কোনো নেতাকমীর্ এলাকায় নেই। কেউ আসতে পারেন না। যারা এখন প্রচারণায় আছে তারা কেউ এলাকায় থাকতে পারে না, প্রচারণা শেষ করেই এলাকা ছাড়তে হয়। পোস্টার টানাতে গেলেও নেতাকমীের্দর গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। পুলিশ এখন ছাত্রলীগের ভূমিকায়। তাই বলতে গেলে শুধু সমথর্কদের নিয়ে প্রচারণা চালাতে হচ্ছে।’

শ্যামপুরের চেয়ারম্যান গলিতে কথা হয় সুমন শেখ নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা কথা বলতেও ভয় পাচ্ছি। কাকে ভোট দিব না দিব সেটা আমার নিজের বিষয়। তবে এখনই হুমকি-ধমকি পাচ্ছি। পুলিশ নিয়মিত এলাকায় টহল দিচ্ছে। লাঙ্গলের কথা বললে সমস্যা নেই। ধানের শীষের আলোচনা করলেই সমস্যা।’

সালাহউদ্দিনের নিবার্চনী প্রচারণায় দেখা যায়নি স্থানীয় কোনো জামায়াত নেতাকমীের্ক। কয়েকজন জামায়াত নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বিএনপি নেতাকমীের্দরই পান না তারা। বিএনপির গরজ থাকলে তারাই তো একসঙ্গে সমন্বয়ে আসত। আর জামায়াত নেতাকমীর্রাই এলাকাছাড়া, তারা প্রকাশ্যে আসার সাহস করছে না।

বাবলার প্রচারণা : প্রতিদিনই কদমতলী-শ্যামপুরের বিভিন্ন এলাকায় নিবার্চনী গণসংযোগ করছেন জাতীয় পাটির্ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি লাঙ্গলের প্রাথীর্ আবু হোসেন বাবলা। গত রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় শ্যামপুর বালুর মাঠে গিয়ে দেখা যায় ১৫-২০ জন নেতাকমীর্ নিয়ে এলাকায় মিছিল করছেন মহাজোটের এ প্রাথীর্। এর আগে সকাল ১০টায় শ্যামপুরের মিষ্টি দোকান এলাকায় একটি নারী সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও বাবলা সেখানে গিয়ে দেখেন কোনো কমীর্ নেই। পরে জানান ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এর পর শ্যামপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, শ্যামপুর বাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকানে গিয়ে ভোট ও দোয়া প্রাথর্না করেন তিনি।

এ সময় বাবলা ভোটারদের কাছে তার সময়ে উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন এবং নিবাির্চত হলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রæতি দেন। একই সঙ্গে তিনি শ্রমিকদের জন্য একটি হাসপাতাল, শ্যামপুর ও কদমতলীতে দুটি কমিউনিটি সেন্টার নিমার্ণ এবং মাদক নিমূের্লর ঘোষণা দেন। এ সময় ঐক্যফ্রন্টের প্রাথীর্র বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, তাকে শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে দেখছেন। তবে তিনি স্বাভাবিক আচরণ করছেন না।

পরে ডিএনডি বঁাধ এলাকায় একটি চায়ের দোকানে কথা হয় স্থানীয় রহিম মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি বুঝে ভোট দিবেন। তবে যে পাশে থাকবে এবার তাকেই ভোট দিবেন। প্রচারণা বিষয়ে জানতে চাইলে ধানের শীষের প্রাথীের্ক এখনো এলাকায় দেখেননি বলে জানান। মীর হাজারীবাগের তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার সামনে কথা হয় বেশ কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে। খলিল মÐল নামের একজন বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা থাকলেও বলতে পারছি না কাকে ভোট দিব। তবে আমরা ভোট দেয়ার সু ু পরিবেশ চাই। লাঙ্গলের প্রাথীর্ নিবিের্ঘœ প্রচারণা চালাতে পারলেও ধানের শীষের প্রাথীর্ প্রচারণা চালিয়ে গেলেই পুলিশ হয়রানি করছে।’

এদিকে, এই আসন থেকে মহাজোটের মনোনয়ন চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আওলাদ হোসেন। তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় আওয়ামী লীগের তার অনুসারিরা লাঙ্গলের প্রচারণায় নেই। এ বিষয়ে লাঙ্গলের প্রচারণায় অংশ নিয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগের কদমতলী থানার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বলেন, ‘আওলাদ হোসেনের সহযোগীরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। তারা এখন কোনদিকেই যেতে পারছেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও আওলাদ হোসেনকে পাওয়া যায়নি।’

তবে আওয়ামী লীগ ও এর অংঙ্গসংগঠনের নেতাকমীর্রা প্রচারণায় রয়েছেন। গতকাল দুপুরে ছাত্রলীগ বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল নিয়ে বাবলার পক্ষে প্রচার মিছিল করেন। মিছিলটি ধোলাইপাড় থেকে শুরু হয়ে জুরাইন, মীরহাজীরবাগ হয়ে জুরাইন রেলস্টেশন গিয়ে শেষ হয়। দুপুরে তিনি ধোলাইপাড় উচ্চবিদ্যালয়ে বিজয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সেখানে সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম ও স্থানীয় ওয়াডর্ কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমানও বক্তব্য রাখেন। বিকালে কদমতলী এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগ ও জাপা নেতাদের নিয়ে নিবার্চনী প্রচার মিছিল করেন এবং পোস্তাগোলায় এক পথসভায় বক্তব্য রাখেন বাবলা।

এই আসনে লাঙ্গল এবং ধানের শীষের বাইরে হাতপাখা প্রতীকের প্রচারণা দেখা গেছে। ধানের শীষের পোস্টার না থাকলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখার পোস্টারের বিপুল উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে গণসংযোগ বা পথসভা করতে দেখা যায়নি হাতপাখার প্রাথীর্ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লালকে।

এই তিন প্রাথীর্ ছাড়াও এ আসনে কবির হোসেন (বিকল্পধারা), সুমন কুমার রায় (ন্যাশনাল পিপলস পাটির্-এনপিপি), আজাদ মাহমুদ (জাকের পাটির্) এবং সহিদুল ইসলাম (জাসদ) প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<27784 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1