শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আলোচনা সভা

নিবার্চনে ইসির নিরপেক্ষ ভ‚মিকা চায় সুজন

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘সরকারি দলের লোকজন যেভাবে নিবার্চন কমিশনের প্রশংসা করছেন, তাতে মনে হচ্ছে, সরকারি দলের লোকজন নিবার্চন কমিশনের জনসংযোগে নেমেছেন’
যাযাদি রিপোটর্
  ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:৩১
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নিবার্চনী ইশতেহার: নাগরিক প্রত্যাশা’ শীষর্ক আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার Ñযাযাদি

জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিবার্চন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও দল ও দেশ পরিচালনায় তাদের ভূমিকা কী হবে তা তাদের নিবার্চনী ইশতেহারে উল্লেখ করতে হবে। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নিবার্চনী ইশতেহার: নাগরিক প্রত্যাশা’ শীষর্ক এক সংবাদ সম্মেলন ও আলোচনা অনুষ্ঠানে এমন অভিমত উঠে আসে। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবার্চনী ইশতেহারে কী কী বিষয় থাকা উচিত সে বিষয়ে সুপারিশ তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে নিবার্চনী ইশতেহার নিয়ে সুজনের লিখিত সুপারিশ উত্থাপন করে সংগঠনটির সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয়ে রাজনীতি করতে হবে। রাষ্ট্রীয় আদশের্র সঙ্গে দলগুলোর আদশের্র সঙ্গতি থাকতে হবে। সরকার ও দেশ পরিচালনায় জনগণের মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিহাস ও দল পরিচালনায় তাদের কার কী ভূমিকা তা তুলে ধরতে হবে। গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, জনগণের অধিকার আদায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অজর্ন তুলে ধরতে হবে। ক্ষমতায় থাকাকালে নিবার্চনী ইশতেহার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরতে হবে। লিখিত সুপারিশে আরও বলা হয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে সত্যিকার অথের্ জনগণের সম্মতির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রয়োজনীয় নিবার্চনী সংস্কারের রূপরেখা দিতে হবে, নিবার্চনে প্রাথীর্র যোগ্যতা-অযোগ্যতা, হলফনামার সংস্কার, হলফনামা যাচাই-বাছাই, নিবার্চনী ব্যয়ে স্বচ্ছতা, ‘না’ ভোটের বিধান করতে হবে। শাসন ব্যবস্থার একচ্ছত্র প্রাধান্যের অবসান করতে হবে। সাংবিধানিক সংস্কার, মেয়াদের সীমা নিধার্রণ, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ, গণভোট রিকল ব্যবস্থা, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ধমির্নরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। কলামিস্ট ও সুজনের নিবার্হী সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘সরকারের অসন্তুষ্টি নিয়ে নিবার্চন কমিশন কাজ করতে পারবে না। যেভাবে তারা কাজ করতে চায় তারা পারছে না। সরকারি দলের লোকজন যেভাবে নিবার্চন কমিশনের প্রশংসা করছেন, তাতে মনে হচ্ছে, সরকারি দলের লোকজন নিবার্চন কমিশনের জনসংযোগে নেমেছেন। এ অবস্থায় জনগণের আস্থা ফেরাতে হলে তাদেরই প্রমাণ করতে হবে তারা দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম, স্বচ্ছ নিবার্চন করতে পারবে। নিবার্চন কমিশনকে তাদের স্বচ্ছতা ও দায়িত্ব দৃশ্যমান করতে হবে।’ রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার বাস্তবায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে দলই ক্ষমতায় যায় সেই দলই রাজনৈতিক ইশতেহার বাস্তবায়নের কথা ভুলে যায়। তাই এবার তাদের আগের নিবার্চনী ইশতেহারে কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে আর কতটা হয়নি তা তুলে ধরতে হবে।’ সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘যেসব আইন-কানুন রয়েছে তা যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে আশা করা যায় সুষ্ঠু নিবার্চন করা সম্ভব হবে।’ নিবার্চনী ইশতেহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তারা যে ইশতেহার ঘোষণা করবে, তারা ক্ষমতায় যাওয়ার পর তা বাস্তবায়ন করা। ক্ষমতায় যাওয়ার পর তারা তাদের অঙ্গীকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন করে না। নিবার্চনী ইশতেহারেও তাদের এ বিষয়ে স্পষ্ট করতে হবে।’ সুজনের নিবার্হী সদস্য ও আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যাবে তারা যেন তাদের অঙ্গীকার ভুলে না যায়। স্বাধীন দেশে নিবার্চনের সময় আমি আমার মতামত প্রকাশ করতে পারব না, করলে নিবার্চন কমিশন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নেবে। এটা থাকলে জনগণ কীভাবে তাদের গণতান্ত্রিক স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করবে।’ নিবার্চনী ইশতেহার নিয়ে সুজনের লিখিত সুপারিশে আরও বলা হয়, তথ্য অধিকার আইনের ব্যাপক প্রয়োগ, শাসন প্রক্রিয়ায় নাগরিকের কাযর্কর অংশগ্রহণ ও অন্তভুির্ক্তমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার থাকতে হবে, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা সংসদ সদস্যের প্রভাবমুক্ত রেখে সত্যিকারের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে, আথির্ক খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নজরদারি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, আথির্ক খাতের দুনীির্ত ও অথর্ পাচার রোধ ও পাচার হওয়া অথর্ ফেরত আনার অঙ্গীকার থাকতে হবে, শিল্পে বিনিয়োগ ও কমর্সংস্থান সৃষ্টি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, একমুখী শিক্ষা ও শিক্ষার মনোন্নয়ন করার অঙ্গীকার থাকতে হবে, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ বৈষম্য ও সহিংসতার অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার থাকতে হবে। এছাড়া গুম, খুন ও বিচারবহিভূর্ত হত্যা বন্ধ, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য নিবতর্নমূলক আইনের সংস্কার, যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শেষ করা, জঙ্গিবাদ বন্ধের অঙ্গীকার রাজনৈতিক দলগুলোর নিবার্চনী ইশতেহারে রাখার সুপারিশ করেছে সুজন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে