একাদশ সংসদ নিবার্চনে জোটের মেরুকরণে নিবন্ধিত ৩৯ দলের প্রায় অধের্কই নিজেদের নিবার্চনী প্রতীক তুলে রেখে শামিল হয়েছে বড় শরিকের পতাকা তলে।
জোটবদ্ধ হয়ে নিবার্চনের ক্ষেত্রে অভিন্ন প্রতীক ব্যবহারের যে সুযোগ আইনে রয়েছে, তা কাজে লাগাতে নিবার্চন কমিশনে আবেদন এসেছে কেবল নৌকা ও ধানের শীষের জন্য।
অভিন্ন প্রতীকে নিবার্চন করতে চাইলে নিবার্চন কমিশনে তা জানানোর শেষ সময় ছিল বৃহস্পতিবার। তাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের আটটি নিবন্ধিত দল ‘নৌকা’ প্রতীক এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ১১টি দল ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে নিবার্চন করার কথা জানিয়েছে।
বতর্মান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পাটির্ নিবার্চনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী হলেও নিজেদের প্রতীক লাঙ্গল নিয়েই তারা ভোট করবে।
অন্যদিকে বাম দলগুলো আলাদাভাবে
নিবন্ধিত দলের
অধের্কই নৌকা
ধানের শীষে
জোট করলেও ভোটে অভিন্ন প্রতীক ব্যবহারের আবেদন করেনি।
নিবার্চন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিন্ন প্রতীক ব্যবহারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের শরিকদের তালিকা আগেই দিয়েছে। দলগুলো আলাদা আলাদা চিঠিও দিয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও তালিকা দিয়েছে। আইনে যেভাবে রয়েছে তারা সেভাবে প্রতীক পাবে।’
বৃহস্পতিবার পযর্ন্ত যারা জোটভুক্ত হয়ে অভিন্ন প্রতীকে ভোটের জন্য ইসিতে চিঠি দেয়নি, তাদের প্রাথীর্রা নিজস্ব প্রতীকেই নিবার্চন করবে।
ইসিতে আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার পাঠানো চিঠিতে মোট ১৬টি দলের নাম পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে নিবন্ধিত দল আটটি। আওয়ামী লীগ বলছে, তাদের জোট শরিকরা নৌকা প্রতীকেই ভোট করবে।
ভোটের বৈতরণী পার হতে দশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নৌকায় চড়ে বসা নিবন্ধিত দলগুলো হলো- জাসদ, ওয়াকার্সর্ পাটির্, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পাটির্, ন্যাশনাল আওয়ামী পাটির্-ন্যাপ, তরিকত ফেডারেশন ও জাতীয় পাটির্-জেপি।
এ জোটের অনিবন্ধিত দলগুলো হলো- গণ-আজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাসদ, কৃষক শ্রমিক পাটির্ ও তৃণমূল বিএনপি।
যুক্তফ্রন্টের বিকল্পধারাও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জোট বাধার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের নৌকা মাকার্ ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে নিবার্চন কমিশনে।
দলটি জানিয়েছে, ১৪ দলের সঙ্গে মহাজোট সম্প্রসারণ বিষয়ে তাদের আলোচনা এখনো চলছে। মহাজোটে অংশ নিলে যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারার কিছু প্রাথীর্ ক্ষেত্রবিশেষে নৌকা প্রতীকে নিবার্চন করবেন।
অনিবন্ধিত দলের ভোটে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। তবে অনিবন্ধিত দলের প্রাথীর্রাও নিবন্ধিত দলের মনোনয়নে তাদের প্রতীক নিয়ে নিবার্চন করতে পারেন। নিবার্চন কমিশন তাদের নিবন্ধিত দলের প্রাথীর্ হিসেবেই বিবেচনা করে।
দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চন বজর্ন করা বিএনপি একই সঙ্গে ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় এক্যফ্রন্টে রয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিবার্চন কমিশনে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, মোট ১১টি নিবন্ধিত দল তাদের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট করবে।
এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের নিবন্ধিত দলগুলো হলো- এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পাটির্, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাতীয় পাটির্-বিজেপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পাটির্-জাগপা ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।
এ ছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকা গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগও জোটগতভাবে প্রতীক ‘ধানের শীষ’ প্রতীক ব্যবহারের কথা জানিয়েছে।
নিবার্চন কমিশনে বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয়ার পর গণফোরামের কাযর্করী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ঐক্যফ্রন্টভুক্ত অনিবন্ধিত দলের কেউ প্রাথীর্ হলে তারাও ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহার করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সেক্ষেত্রে নাগরিক ঐক্য, ঐক্যপ্রক্রিয়ার কেউ প্রাথীর্ হলে কাগজে কলমে তাকে বিএনপির হয়েই ভোট করতে হবে।
জাতীয় পাটির্র সঙ্গে জোটভুক্ত হলেও লাঙ্গলে না গিয়ে নিজেদের প্রতীকে নিবার্চনে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৮ নভেম্বর পযর্ন্ত মনোনয়ন দাখিল করা যাবে। ২ ডিসেম্বর বাছাইয়ের পর প্রাথির্তা প্রত্যাহার করা যাবে ৯ ডিসেম্বর পযর্ন্ত। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রাথীর্রা। ভোট হবে ৩০ ডিসেম্বর।