নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ নিচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোট- ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ২০ দলীয় জোট প্রায় ১০ বছর পর জাতীয় নিবার্চনে যাচ্ছে। দুই জোটের নিবার্চনী প্রতীক নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিএনপি ও তাদের নিবন্ধিত শরিক দলগুলো ধানের শীষ মাকার্ নিয়েই প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দিয়েছে নিবার্চন কমিশনে। কিন্তু জোটের বড় শরিক জামায়াতের কী হবে?
দলটির আমির-সেক্রেটারি জেনারেল থেকে শুরু করে শীষর্স্থানীয় নেতারা মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফঁাসিতে ঝুলেছেন। স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতের নিবন্ধনও সম্প্রতি বাতিল হয়ে গেছে। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দল হিসেবে যেমন জামায়াতের নিবার্চনে যাওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি তাদের প্রতীক নিয়েও ভোটে দঁাড়ানোর উপায় নেই। রাজনৈতিক পরিমÐলে জামায়াতের কৌশল নিয়ে আলোচনার মধ্যে শোনা যাচ্ছে, তারা স্বতন্ত্র প্রাথির্তার কৌশলই নিচ্ছে।
জামায়াতের শীষর্ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আপাতত স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবেই প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এরইমধ্যে স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবে জামায়াতের তিন নেতা- চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম এবং বঁাশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম মনোনয়নপত্র সংগ্রহও করেছেন। যদিও চূড়ান্ত কৌশল এখনই প্রকাশ করতে চাইছেন না তারা। শেষ মুহূতের্ও দলটির কৌশল পরিবতর্ন হতে পারে ইঙ্গিত দিচ্ছেন নেতারা।
দলের শীষর্ নেতৃত্ব যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেপ্তার ও ফঁাসিতে ঝোলার পর থেকেই জামায়াত অনেকটা দুবর্ল হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের জাতীয় নিবার্চনের আগে ও পরে সহিংসতার দায় দলটির কঁাধে বতাের্ল কোণঠাসা হয়ে পড়ে দলটি। গণফোরাম-জেএসডি-নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে মিলে বিএনপি নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়লে অনেকটা ‘একঘরেই’ হয়ে পড়ে জামায়াত। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণায় বলা হয়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী কোনো দল ও ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। বিএনপির নতুন জোটের এমন ঘোষণায় ‘নীরব’ থাকার কৌশল নেয় তাদের ২০০১-২০০৬ মেয়াদের সরকারের অংশীদার জামায়াত। আগামী নিবার্চনও ‘কৌশলে’ই পার করে দিতে চায় স্বাধীনতাবিরোধী দলটি।
পরিবতির্ত পরিস্থিতি ও নিবন্ধন বাতিলের পর নিবার্চনে কৌশল কী হবে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক নেতা বলেন, ‘এখন পযর্ন্ত দলের সিদ্ধান্ত আছে স্বতন্ত্রভাবে আমাদের প্রাথীর্রা নিবার্চন করবেন।’
আরেক শীষর্ নেতা বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা মোট ৩৯টি আসনে নিবার্চন করেছিলাম। তখন বিএনপি জোট আমাদের ৩৪ আসন ছেড়ে দিয়েছিল। বাকিগুলো আমরা তাদের ছেড়ে দিয়েছিলাম। এবার অন্তত অধর্শত আসনে আমাদের ফাইটিং ক্যান্ডিডেট রয়েছেন। সেক্ষেত্রে জোটের কাছে আমরা ৫০-৬০ আসন চাইব। কতটা দেবে সেটা দেখতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।’
জামায়াতের সবোর্চ্চ নীতি নিধার্রণী ফোরাম কেন্দ্রীয় নিবার্হী পরিষদের সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাথীর্রা নিবার্চনে অংশ নেবে। তবে কী কৌশলে অংশ নেবে সেটা এখনই বলা কঠিন। আসন ভাগাভাগির বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ২০০৮ সালে বিএনপি আমাদের ৩৪ আসন দিয়েছিল। এবার তারচেয়ে বেশি আসন প্রত্যাশা করছি। দুই-একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’