যশোরের ঝিকরগাছায় ভুয়া পুলিশ সন্দেহে তিন কনস্টেবলসহ চারজনকে গণপিটুনি দিয়েছে গ্রামবাসী। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার মাটিকুমড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গণপিটুনির শিকাররা হলেন তিন ডিবি কনস্টেবল মুরাদ হোসেন, শিমুল হোসেন ও মামুন আলী এবং প্রাইভেট কার চালক শাওন। আহতদের উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভতির্ করা হয়েছে।
ঘটনার জেরে শুক্রবার সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন ও তার ভাইপো আশাদুল ইসলামকে জখম অবস্থায় আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, পালাতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে তারা জখম হয়েছে। তবে তাদের দাবি, পুলিশ পিটিয়ে জখম করেছে। গণপিটুনির ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ ৪০ জন গ্রামবাসীকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করেছে। এদিকে গণগ্রেপ্তার আতংকে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে মাটিকুমড়া গ্রাম।
পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মাটিকুমড়া গ্রামে এক মাদক বিক্রেতাকে ধরতে অভিযানে যায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। কিন্তু ডিবি পুলিশকে ভুয়া মনে করে গ্রামের লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর ঝঁাপিয়ে পড়ে। গণপিটুনিতে আহত হন তিন ডিবি কনস্টেবল ও প্রাইভেট কারচালক। পরে পুলিশ খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভতির্ করে। পুলিশ সুপার আরও জানান, আইন-শৃঙ্খলা বিঘœ ঘটাতে কোনো চক্র পরিকল্পিতভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা পুলিশ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর দাবি, সম্প্রতি গ্রামের জহিরুল নামের এক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সখ্য হয় কয়েকজন ব্যক্তির। তারা পুলিশ পরিচয়ে নিরীহ লোকজনকে আটক করে অথর্বাণিজ্য করছিল। পরিস্থিতি এমন দঁাড়িয়েছিল যে, পুলিশ পরিচয়ধারীরা ওই মাদক ব্যবসায়ীর তথ্যমতে এলাকার নিরীহ মানুষকে মাদক দিয়ে আটক করে টাকা দাবি করতো। একপযাের্য় ওই মাদক ব্যবসায়ীর সুপারিশে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হতো। এ ছাড়াও গ্রামে ছিনতাই, চুরির ঘটনাও বেড়ে গিয়েছিল। এতে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ পরিচয়ে চার ব্যক্তি গ্রামে ঢুকলে গ্রামবাসী তাদের ঘিরে ফেলে। একপযাের্য় তাদের কাছে পরিচয় জানতে চায় গ্রামবাসী। কিন্তু তাদের সঙ্গে কোনো কমর্কতার্ ছিল না। গ্রামবাসীর সন্দেহ হয় তারা ভুয়া পুলিশ। এলাকাবাসীর সঙ্গে তারা বাকবিতÐায় জড়িয়ে পড়েন। একপযাের্য় পুলিশ সদস্যরা গুলি ছোড়ে। এতে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ওই চারজনকে গণপিটুনি দেয়। একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে। ওই মাইক্রোবাসে দেশীয় অস্ত্র, মাদকদ্রব্যও ছিল। খবর পেয়ে স্থানীয় ফঁাড়ি ও থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
এলাকাবাসীর দাবি, ভুয়া পুলিশ সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনার পর পুলিশ গ্রামে গণগ্রেপ্তার করছে। অন্তত ৭০/৮০ জনকে ইতোমধ্যে আটকও করা হয়েছে। এদের মধ্যে মাটিকুমড়া গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় হাজিরবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন ও তার ভাইপো আশাদুল ইসলামকে আটকের পর পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে পুলিশ। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশের গণগ্রেপ্তারের ভয়ে মাটিকুমড়া গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশের তৎপরতায় আতংক বিরাজ করছে পুরো এলাকায়। পুলিশের অভিযানে ২/৩টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও গ্রামবাসীর দাবি।