শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারপতি জয়নুলের অথের্র সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রে চিঠি

যাযাদি রিপোটর্
  ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের দুনীির্ত অনুসন্ধানে অগ্রগতি হয়েছে। অথর্ পাচারের তথ্য জানতে ইতিমধ্যে মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা অনুরোধও (মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট-এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুনীির্ত দমন কমিশন (দুদক)।

সাবেক এই বিচারপতির বিরুদ্ধে আট বছরের বেশি সময় ধরে অনুসন্ধান করছে দুদক। অনুসন্ধানের বিষয়ে আদালতে যাওয়া-আসা নিয়ে দীঘির্দন কেটে গেছে। তবে দুদক সূত্র জানিয়েছে, তার দুনীির্ত ও অথর্ পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান অনেকটাই এগিয়ে গেছে।

এমএলএআর পাঠাতে হয় অ্যাটনির্ জেনারেলের মাধ্যমে। কমিশনের অনুরোধে অ্যাটনির্ জেনারেলের কাযার্লয় থেকে সংশ্লিষ্ট দেশে এ অনুরোধ পাঠানো হয়। দুদকের সংশ্লিষ্ট কমর্কতার্রা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ বিষয়ে নিভর্রযোগ্য তথ্য পেলে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া আরও এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে মঙ্গলবার দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, অভিযোগটির অনুসন্ধানে অগ্রগতি আছে। দুদক কমর্কতার্রা কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে এমএলএআর পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করতে পারেন অনুসন্ধান কমর্কতার্।

১৯৯১ সালে হাইকোটের্ বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান জয়নুল আবেদীন। আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান তিনি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তাকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল ওই সময়ের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। বিচারপতি জয়নুল আবেদীন এ ঘটনায় বহুল আলোচিত ১৬২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেনেড হামলার সঙ্গে একটি শক্তিশালী বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত। কিন্তু সুনিদির্ষ্টভাবে কোনো গোয়েন্দা সংস্থার নাম বলা হয়নি। পরে জজ মিয়া নাটকসহ বিভিন্ন কারণে বিতকির্ত ওই প্রতিবেদনটির সত্যতা প্রমাণিত হয়নি।

দীঘর্ বিচার শেষে ওই মামলার রায় হয়েছে ১০ অক্টোবর। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদÐ দিয়েছেন আদালত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, সাবেক সাংসদ কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। বাকি ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।

রায়ে বলা হয়েছে, বনানীর হাওয়া ভবনে তারেক রহমান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। হামলার আগে উপমন্ত্রী পিন্টুর বাসভবনে দফায় দফায় হামলার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক হয়। হামলার ব্যাপারে আথির্ক ও প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারেক, বাবর ও পিন্টু। আসামিদের জবানবন্দি, সাক্ষীদের জবানবন্দি এবং অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে আদালত এ রায় দেন।

কথিত আছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই হাওয়া ভবন। এখান থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বড় ছেলে ও বতর্মানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল বিচারপতি জয়নুল আবেদীন রাজধানীর শাহবাগ থানায় তার ব্যক্তিগত সহকারী লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় লোকমানের বিরুদ্ধে বাদীর (বিচারপতি) স্বাক্ষর জাল করে সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোটর্ শাখা থেকে ৬৯ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। জানা গেছে, ওই মামলার সূত্র ধরে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের সম্পদের উৎস অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

জ্ঞাত আয়বহিভূর্ত সম্পদ অজের্নর অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে নোটিশ দেয় দুদক। দুদকের দেয়া নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১০ সালের ২৫ জুলাই তিনি হাইকোটের্ একটি রিট আবেদন করেন।

রিটের ওপর শুনানি নিয়ে সে সময় বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহাব মিঞা ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের হাইকোটর্ বেঞ্চ বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি বিবেচনায় খারিজ করে দেন। পরে ওই বছরের ২৫ অক্টোবর দুদক তঁাকে আরও একটি নোটিশ দেয়। প্রয়োজনীয় তথ্যসহ ৩ নভেম্বর তিনি ওই নোটিশের জবাব দেন।

এর সাত বছর পর গত বছরের জানুয়ারিতে সাবেক এ বিচারপতির বিরুদ্ধে বিদেশে অথর্ পাচারের অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। এ বিষয়ে দুদক তার ব্যাখ্যা চাইলে বিচারপতি জয়নুল ব্যাখ্যাও দেন।

এরই মধ্যে অনুসন্ধানের কথা বলে সুপ্রিম কোটের্র কাছে সাবেক এই বিচারকের বিষয়ে কাগজপত্র চেয়ে গত বছরের ২ মাচর্ চিঠি দেয় দুদক।

এর জবাবে ওই বছরের ২৮ এপ্রিল আপিল বিভাগের তখনকার অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবতীর্ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুদকের কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন হবে না বলে সুপ্রিম কোটর্ মনে করে।

কোনো বিচার বিভাগীয় কমর্কতার্র বিরুদ্ধে অসদাচরণ, দুনীির্ত বা অন্য কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে সুপ্রিম কোটের্র পরামশর্ ছাড়া তার প্রাথমিক তদন্ত বা অনুসন্ধান না করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিদের্শ দেয়া হয় সুপ্রিম কোটের্র ওই চিঠিতে।

সুপ্রিম কোটের্র এ ধরনের চিঠি নিয়ে সংসদ অধিবেশনে কড়া সমালোচনা হয়। পরে জুনে একটি দৈনিক পত্রিকায় এ বিচারপতির জ্ঞাত আয়বহিভূর্ত সম্পদ অজের্নর অভিযোগ ও দুদকের অনুসন্ধান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ‘গ্রেপ্তার ও হয়রানির’ আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি হাইকোটের্ জামিন আবেদন করেন।

গত বছরের ১০ জুলাই হাইকোটর্ তাকে এ অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পযর্ন্ত জামিন দেন এবং নিয়মিত জামিন কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ বছরের ৩১ আগস্ট সেই রুল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এরপর আবার অনুসন্ধান কাজ শুরু করে দুদক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<19144 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1