আজকের যায়যায়দিন

যাযাদি রিপোটর্

জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) অধিকতর সতকর্ থাকার নিদের্শ দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে আগামী নিবার্চনের আগে বতর্মান সরকারের প্রতি দেশের মানুষের সমথর্ন আদায়ে সরকারের উন্নয়ন কমর্কাÐ পরিচালনা এবং তা ব্যাপক প্রচারেরও নিদের্শ দেয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কাযার্লয় থেকে এসব আদেশ সংবলিত চিঠি ও ই-মেইল বাতার্ দেশের সব ডিসি ও এসপিদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।

নভেম্বরের মধ্যে একাদশতম জাতীয় সংসদ নিবার্চনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছে বাংলাদেশ নিবার্চন কমিশন। সে অনুযায়ী চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে দেশে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নিবার্চন।

ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক / দুই কার্গো এলএনজি, সার ও ডাল কিনবে সরকার

সরকারের ওপর মহলের কাছ থেকে বিভিন্ন আদেশ সংবলিত চিঠি ও মেইল বাতার্ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে একাধিক জেলা প্রশাসক নাম প্রকাশ না করার শতের্ জানিয়েছেন, আসন্ন ১১তম জাতীয় সংসদ নিবার্চন ঘিরে জঙ্গি, সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা সুবিধাবাদী ও মাদক চোরাকারবারি গোষ্ঠী হয়তো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নিদের্শ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ডিসি ও এসপিদের জেলার বিভিন্ন উপজেলা পরিদশের্নরও নিদের্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতের জামিনে থাকা রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের গতিবিধি নজরে রাখারও নিদের্শ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কমর্কতার্রা জানান, জেলার স্পশর্কাতর অবকাঠামো, বিশেষ করে ডিসি-এসপির বাসভবন ও অফিস, জেলা কারাগার, জেলা সদর হাসপাতাল, জেলা ও দায়রা জজের বাসভবন ও আদালত, জেলার প্রধান স্কুল ও কলেজসহ গুরুত্বপূণর্ অবকাঠামোগুলো সাবর্ক্ষণিক নজরদারিতে রাখার কথা বলা হয়েছে। এসব স্থানে সাদা পোশাকে সাবর্ক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব পালনের কথাও বলা হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘাপটি মেরে থাকা সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা সুযোগ মতো নাশকতা বা অঘটন ঘটাতে পারেÑ এমন আশঙ্কা থেকেই অধিকতর সতকর্ থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের উত্তরবঙ্গের একজন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, ‘যদিও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সব সময় স্বাভাবিক রাখা সরকারের নিত্যনৈমিত্তিক দায়িত্ব। তবে নিবার্চনকে ঘিরে এ সতকর্তা আরও কিছুটা বাড়ানোর নিদের্শ দেয়া হয়েছে।’ প্রতি নিবার্চনের সময়ই এ ধরনের সতকর্তা অবলম্বনের নিদের্শ দেয়া হয় বলে জানান বরিশাল বিভাগের একজন জেলা প্রশাসক।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে

পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার চিঠিতে জঙ্গিগোষ্ঠী কতৃর্ক নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে এমন তথ্য উল্লেখ রয়েছে। সূত্র জানায়, ওই চিঠির পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের সব জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলা ও থানা পযাের্য় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কমর্রত দায়িত্বপ্রাপ্ত কমর্কতাের্দর যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এদিকে বতর্মান সরকারের উন্নয়নমূলক কমর্কাÐসমূহ জনগণের অবগতির জন্য ব্যাপক প্রচারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নিদের্শ দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাযার্লয় থেকে। এসব কাজ সম্পাদনের জন্য জেলা উপজেলা সংশ্লিষ্ট কমর্কতাের্দরও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার নিদের্শ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, নিদের্শ মতো কাজ হচ্ছে কিনা তা সরেজমিন পযের্বক্ষণ করতে স্বল্প সময়ের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট কমর্কতাের্দর জেলাওয়ারি পাঠানো হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, জনগণের জন্য দেয়া সরকারের সুযোগ সুবিধা, খাদ্যসামগ্রী, নগদ আথির্ক সহায়তা যাতে ঠিকমতো সুবিধাভোগীদের হাতে পৌঁছায় সে বিষয়টি কঠোর মনিটরিংয়ের নিদের্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কঠোর নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে। সরকারি কমর্কতার্-কমর্চারীরা নিবার্চনের পূবর্ মুহূতর্ পযর্ন্ত যাতে অহেতুক নিজ দপ্তরে অনুপস্থিত না থাকেন সে দিকেও নজর রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে সাবর্ক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য ডিসি এসপিদের বলা হয়েছে। নিয়মিতভাবে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানেরও নিদের্শ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে অপরাধ পযাের্লাচনা সভায় পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী আসন্ন জাতীয় সংসদ নিবার্চন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য মাঠপযাের্য়র পুলিশ কমর্কতাের্দর নিদের্শ দিয়েছেন। বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার রোধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া তথ্য প্রচার করে অথবা গুজব ছড়িয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে তৎপর ও সজাগ থাকার জন্য পুলিশ সুপারদের নিদের্শ দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু জানান, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কারও কোনো উদ্বেগ নেই। সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। দেশে নিবার্চনি পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, জনগণ এখন নিবার্চনমুখী। দেশবাসী মনে করে, এবার নিবার্চন সুষ্ঠু হবে। কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নাই, কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতকর্ অবস্থানে রয়েছে।’

কমিটির সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নিবার্চনকে ঘিরে কোনো মহল দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে এমন কোনো তথ্য আমাদের জানা নাই। এ ধরনের আশঙ্কার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নাই।’

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। শুধু নিবার্চন নয়, সারা বছরই দেশের আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখা ও মাদক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখা পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশ নিয়মিত সে কাজ করছে। আর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার পুলিশের সারা বছরের কাজ।’