বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরাইলে দাফন, জীবিত উদ্ধার নারায়ণগঞ্জে

যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জীবনশঙ্কার কথা জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানায় জিডি করে ‘নিখেঁাজ’ হয়েছিলেন মো. আসাদুল্লাহ; একটি অধর্গলিত লাশ উদ্ধারের পর তাকে আসাদুল্লাহ হিসেবে শনাক্ত করে দাফন শেষে মামলা করেছিল পরিবার। সেই আসাদুল্লাহকে জীবিত অবস্থায় খুঁজে পেয়েছে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগঁা থানার ওসি মোরশেদ আলম বলেন, এক রিকশাওয়ালা বৃহস্পতিবার রাতে আসাদুল্লাহকে থানায় নিয়ে আসেন। আসাদুল্লাহর দাবি, তাকে কেউ নারায়ণগঞ্জে ফেলে রেখে গেছে।

ওসি বলেন, ‘তাকে ডাক্তার দেখিয়ে আমরা সরাইল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। তিনি সুস্থ আছেন। তাকে গুম করে হত্যা করার অভিযোগে সরাইল থানায় একটি মামলা আছে।’

ঘটনার শুরু গত ৫ আগস্ট। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের বাসিন্দা আসাদুল্লাহ সেদিন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখানে বলা হয়, অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহŸায়ক কাপ্তান মিয়ার সঙ্গে তার জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এর জেরে তারা তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।

এরপর ৯ আগস্ট সরাইলের উচালিয়াপাড়ার গ্যাসফিল্ড রাস্তা থেকে আসাদুল্লাহকে তুলে নিয়ে ‘গুম’ করা হয়েছে অভিযোগ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন তার মেয়ে মোমেনা বেগম। সেখানেও আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই দুইজনকে আসামি করা হয়।

পুলিশ ৬ সেপ্টেম্বর অরুয়াইল ও সরাইল থানার মাঝামাঝি এলাকার চুন্টা কৈবতর্পাড়ার একটি বিল থেকে অধর্গলিত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করলে সেটি আসাদুল্লাহর মরদেহ হিসেবে শনাক্ত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। ময়নাতদন্তের পর সেই লাশ নিয়ে গিয়ে তারা গ্রামের বাড়িতে দাফন করেন।

দাফনের পরদিন আসাদুল্লাহকে অপহরণের পর হত্যা এবং লাশ বিলে ফেলে দেয়ার অভিযোগ এনে সরাইল থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মোমেনা। সেখানে শফিকুল ইসলাম ও কাপ্তান মিয়াসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।

জিডি হওয়ার এক মাস ১০ দিন পর আসাদুল্লাহর খেঁাজ মিললে মোমেনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘শুনেছি নারায়ণগঞ্জে আব্বাকে নাকি পাওয়া গেছে। আব্বা এখন পুলিশের কাছে আছে। আমরা এখন গ্রামের বাড়িতেই আছি।’

সরাইল থানার ওসি মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আসাদুল্লাহ ধূতর্ প্রকৃতির লোক। তাকে নারায়ণগঞ্জে পাওয়া গেছে। তাকে আনার জন্য ফোসর্ পাঠিয়েছি।’

ওই মামলার তদন্ত কমর্কতার্ সরাইল থানার এসআই জাকির হোসেন খন্দকার বলেন, ‘সোনারগঁা থানা হেফাজতে থাকা আসাদুল্লাহর সাথে মোবাইলে আমার কথা হয়েছে, সে আসাদুল্লাহই। আমরা সেখানে যাচ্ছি।’

আসাদুল্লাহকে ‘গুমের’ মামলার প্রধান আসামি শফিকুল ইসলামের অভিযোগ, ‘নাটকীয়’ এ ঘটনার সঙ্গে তৃতীয়পক্ষ জড়িত।

তিনি বলেন, ‘অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ও তার সহযোগীরা মিলে আসাদুল্লাহকে নিয়ে নাটক সাজিয়েছে। বিল থেকে লাশ উদ্ধার করে আসাদুল্লাহ নামে দাফন করার সঙ্গেও তারা জড়িত।’

শফিকুল জানিয়েছেন, তিনি ‘দুনীির্তর’ প্রতিবাদ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে মোশাররফ তাকে ফঁাসানোর চেষ্টা করেছেন। একই ধরনের কথা বলেছেন মামলার আরেক আসামি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাপ্তান।

তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি, কিন্তু লাশের রাজনীতি করি না। আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে দমিয়ে রাখতে মোশাররফ এই নাটক করিয়েছে। হয়রানি করার জন্য আমরা দায়ীদের শাস্তি চাই।’

তাদের এই অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ বলেন, ‘কারও সঙ্গে আমার খারাপ সম্পকর্ নেই। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে আমি সবসময়ই সচেষ্ট। কেন তারা আমাকে জড়িয়ে কথা বলছে আমি বুঝতে পারছি না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12592 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1