শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিজিবি ও বিজিপির বৈঠক

শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

কক্সবাজার প্রতিনিধি
  ২৯ জুন ২০১৮, ০০:০০

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা শরণাথীের্দর ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে মিয়ানমার।

বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজারে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি (বডার্র গাডর্ বাংলাদেশ) ও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির (বডার্র গাডর্ পুলিশ) মধ্যে রিজিয়ন কমান্ডার পযাের্য়র যৌথ সৌজন্য বৈঠক হয়। বৈঠকে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে থাকা চার হাজার রোহিঙ্গাকে দ্রæত ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিজিপি। এ ছাড়া বৈঠকে দুই দেশের সীমান্ত চোরাচালান, ইয়াবাসহ মাদক পাচার বন্ধে নাফ নদীতে যৌথ টহল এবং সন্ত্রাসীদের ধরতে সীমান্তে যৌথ অভিযানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।

বিজিবি কক্সবাজার অ্যাডহক রিজিয়ন সদর দপ্তরে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয়ে বিকেল চারটা পযর্ন্ত বৈঠক চলে। বৈঠকে নয় সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রাকিবুল্লাহ।

উপস্থিত ছিলেন বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কনের্ল আবদুল খালেক, লে. কনের্ল মো. আনোয়ারুল আজিম, লে. কনের্ল মনজুরুল হাসান খান, লে. কনের্ল আসাদুদ-জামান চৌধুরী, লে. কনের্ল মোহাম্মদ খালিদ আহমদ প্রমুখ। ১২ সদস্যবিশিষ্ট মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের মংডু জেলার বিজিপি ১ নম্বর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পুলিশ মায়েন্ট টু।

বিজিবি সূত্র জানায়, সকালে রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসে টেকনাফ স্থলবন্দরে। সেখান থেকে সড়কপথে তাদের আনা হয় ৯৫ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার শহরের বিজিবি সদর দপ্তরে। বিকেলে বৈঠক শেষ করে তারা পুনরায় নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমার ফিরে গেছেন।

বিজিবি জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে এখন ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী সঁাড়াশি অভিযান চলছে। কিন্তু এর মধ্যেও মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ইয়াবাসহ মিয়ানমারের নাগরিকেরাও ধরা পড়ছে। অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা শরণাথীের্দর ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও মিয়ানমারের তেমন সাড়া মিলছে না।

জবাবে বিজিপি কমান্ডার বলেন, ইয়াবা চোরাচালান ঠেকাতে মিয়ানমারেও অভিযান চালানো হচ্ছে। ইয়াবাসহ লোকজন ধরাও পড়ছে। সেখানকার কিছু সন্ত্রাসী ও চোরাচালানি বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নিচ্ছে। মিয়ানমারের বহু পলাতক আসামি বাংলাদেশে থাকছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হলে মাদক চোরাচালান কমে আসবে। এ ক্ষেত্রে সীমান্তে বিজিবি ও বিজিপি যৌথ টহল দরকার। বিজিবি কমান্ডার বলেন, মিয়ানমারের কোনো চোরাচালানি কিংবা সন্ত্রাসীর ঠঁাই নেই বাংলাদেশে। এরপরও সুনিদির্ষ্টভাবে তালিকা দিলে ব্যবস্থা নেবে সরকার।

বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রাকিবুল্লাহ বলেন, বৈঠকে নাইক্ষ্যংছড়ির শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে থাকা চার হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে বিজিপি। তবে তা কখন নিদির্ষ্ট করে বলেনি তারা। এ ছাড়া ইয়াবাসহ মাদক চোরাচালান বন্ধ, সন্ত্রাসী কাযর্কলাপ বন্ধে সীমান্তে বিজিবি-বিজিপি যৌথ টহল, তথ্য বিনিময়, শূন্যরেখা বরাবর নিয়মিত যৌথ টহল পরিচালনা, বডার্র লিয়াজেঁা অফিস (বিএলও) স্থাপন, পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে।

এ সময় বিজিপি কমান্ডার মায়েন্ট টু পাশে থাকলেও তিনি কিছু বলেননি।

বিজিবি কমান্ডার বলেন, ২০১৭ সালে দক্ষিণ-পূবর্ রিজিয়ন-চট্টগ্রাম থেকে পৃথক হয়ে অ্যাডহক রিজিয়ন কক্সবাজার সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সে ক্ষেত্রে এই রিজিয়নের সঙ্গে এটি বিজিপির প্রথম নিয়মিত সৌজন্য বৈঠক। এতে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ঊধ্বর্তন কমর্কতাের্দর সঙ্গে পরিচিতি এবং সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সমপযাের্য়র দ্বিতীয় বৈঠকটি হবে আগামী ডিসেম্বর মাসে মিয়ানমারের মংডুতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে