শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভিয়েতনামে সেই ২৭ বাংলাদেশির ভাগ্যে কী ঘটছে?

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অবৈধভাবে ভিয়েতনামে যাওয়া এবং সেখানে বাংলাদেশ মিশন 'দখল করতে চাওয়া' সেই ২৭ বাংলাদেশিকে হ্যানয়ে দূতাবাসের সহায়তায় বিনা খরচে দুটি গেস্ট হাউসে রেখেছিল ভিয়েতনাম সরকার। কিন্তু দিনের পর দিন তাদের পক্ষে এসব বাংলাদেশিকে সেখানে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে নিয়মিত ফ্লাইট না থাকায় তাদের দেশে পাঠানোও সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ভাগ্য নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ওই ২৭ বাংলাদেশি।

ভিয়েতনাম পুলিশ বলছে, চলমান পরিস্থিতিতে যে কোম্পানির কাজে তারা দেশটিতে গিয়েছিলেন সেখানে আপাতত ফিরে যেতে। কিন্তু পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে বঞ্চনার শিকার হওয়া সেই ২৭ জন আর কথিত কোম্পানিতে ফিরতে চাইছেন না। যদিও এক্ষেত্রে পুলিশ পুরো দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে।

বাংলাদেশিরা বলছেন, তারা যে কোনো মূল্যে দেশে ফিরতে চান। কিন্তু ভিয়েতনাম পুলিশ এবং বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, এই মুহূর্তে দেশে ফেরানো সম্ভব নয়। আবার তাদের দিনের পর দিন গেস্ট হাউসে

রাখার ব্যবস্থাও করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে তাদের কাজে ফেরাই একমাত্র পথ। অন্যথায় তারা আবারও রাস্তায় নেমে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি হবেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হ্যানয়ে কূটনৈতিক জোনে ঢুকে বাংলাদেশ দূতাবাসে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি বা 'দখল করতে চাওয়া'র কারণে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অপরাধে অভিযুক্ত এই ২৭ বাংলাদেশি। তারা দেশটির নিয়ম ভঙ্গ করে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সমবেত হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশটির ভাবমূর্তি ক্ষণ্ন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

তবে এ ২৭ বাংলাদেশির অভিযোগ, গেস্ট হাউসে রাখা হলেও ভীষণ খাদ্যকষ্টে ভুগছেন তারা। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে। অন্যদিকে দেশে ফিরতে না পারার অনিশ্চয়তাও ভর করেছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রম্নত দেশে ফেরানোর আবেদন করেছেন তারা। তাদের অভিযোগ, এমন পরিস্থতিতে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের দায়িত্ব নিতে চাইছে না।

তবে কর্মকর্তারা বলছেন, দূতাবাসের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই ভিয়েতনামের মতো সমাজতান্ত্রিক দেশে কূটনৈতিক জোনে ঢুকে 'দূতাবাস দখল করার' চেষ্টার পরও ওই ২৭ জনকে গেস্ট হাউসে রাখা হয়েছে। মহামারির মধ্যে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাদের দেশে ফেরার কথা বলা হলেও তারা নিজ খরচে ফিরতে চাননি। যদিও সেই বিশেষ ফ্লাইটে ১১ জন বাংলাদেশি নিজ খরচে দেশে ফেরেন। একই ফ্লাইটে এই ২৭ জনের ফেরার কথা থাকলেও অর্থের যোগান না হওয়ায় ফিরতে পারেননি তারা।

এসব বাংলাদেশি ভিয়েতনাম থেকে জানান, লাখ লাখ টাকা খরচ করে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বু্যরোর (বিএমইটি) স্মার্টকার্ড নিয়েই আমরা এ দেশে আসি। কিন্তু আসার পরে জানতে পারি আমরা পাচারের শিকার। এখন আমাদের পকেটে একবেলা খাওয়ার মতো টাকাই নেই। অথচ দেশে ফিরতে বিমান ভাড়া দিতে বলা হচ্ছে। এটা অমানবিক।

নোয়াখালীর বাসিন্দা মো. মাহাবুবুর বলেন, সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, তারা যেন আমাদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করে। অন্যথায় আবারও দালালদের খপ্পরে অথবা ভিয়েতনামের জেল হবে আমাদের ঠিকানা।

তিনি বলেন, পুলিশ আবারও যেখানে কাজে পাঠাতে চাইছে, সেখানে আসলে কোনো কোম্পানি নেই। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ, কিন্তু ১০-১৫ দিন বসে থেকেও কাজ মেলে না। আর কাজ করলেও বেতন পাওয়া যায় না। সেখানে গিয়ে আমরা আবারও তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ব। এর চেয়ে ভিয়েতনামের জেলই ভালো।

মাহাবুবুর বলেন, আমরা এখানে শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখছি দূতাবাস আমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু তেমনটি নয়। আমরা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ বলেন, গত ২ জুলাই একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাদের দেশে পাঠানোর চেষ্টা আমরা করেছিলাম, কিন্তু তারা যেতে চাননি। ভিয়েতনাম সরকার তাদের নাগরিকদের ফেরত আনার জন্য ঢাকায় একটি বিশেষ ফ্লাইট পাঠিয়েছিল, আমরা ওই সুযোগ নিয়ে এখানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেছিলাম। তাতে নিজ খরচে ১১ জন ফেরতও গেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার সব খরচ সরকারকে বহন করতে হবে এবং দাবি পূরণ না হলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বাংলাদেশ মিশন আক্রমণ করা হবে- এমন বক্তব্য দিয়ে এ ২৭ জন দূতাবাসে দীর্ঘসময় অবস্থান নেন। একটি দেশের দূতাবাসে ঢুকে এ ধরনের আচরণ করা অত্যন্ত অন্যায়।

তিনি বলেন, তাদের ফেরত পাঠানোর মতো অর্থ দূতাবাসের কাছে নেই এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনার জন্য ঢাকাকে জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, এই ২৭ বাংলাদেশি গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে পর্যটক ভিসা নিয়ে ভিয়েতনামে প্রবেশ করেন। তারা হো চি মিন শহরে একটি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন, যেটা করা যায় না। আবার তারা এখানে থেকেই বিভিন্ন অনলাইন পস্নাটফর্মে ভিয়েতনাম সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন। ভিয়েতনাম সরকার বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না। এছাড়া ভিয়েতনাম সরকার তাদের বিমানবন্দর উন্মুক্ত না করা পর্যন্ত ওই ২৭ জনকে পাঠানোও সম্ভব নয়।

বিমানবন্দর কবে উন্মুক্ত হবে সেটা বলা যাচ্ছে না উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ফেরা ভিয়েতনামের ৬৩ নাগরিকের ১৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। ফলে শিগগির বাংলাদেশের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের কোনো অনুমতি দেবে না ভিয়েতনাম।

তিনি জানান, দালাল চক্রের কাছে থাকা এসব বাংলাদেশির পাসপোর্ট উদ্ধার করে ভিসার মেয়াদের বেশি অবস্থান করার কারণে হওয়া জরিমানা মওকুফ ও ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধসহ তাদের প্রত্যবাসনের অনুরোধ ভিয়েতনামের কাছে করা হয়েছে।

ভিয়েতনামে বাংলাদেশি দালাল চক্রের প্রত্যেকে স্থানীয় মেয়েদের বিয়ে করেছে এবং এর ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়টা কিছুটা জটিল হয়ে পড়েছে উলেস্নখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, দূতাবাসের অনুরোধে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে দেশটির পুলিশ।

উলেস্নখ্য, গত ৬ জুলাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন অভিযোগ করেন, অবৈধভাবে ভিয়েতনামে যাওয়া ২৭ বাংলাদেশি ওই দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন দখল করার চেষ্টা করেছেন। একটি অনলাইন পস্নাটফর্মের মাধ্যমে তাদের নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদ্যসাবেক ভিপি নুরুলহক নুর। যদিও এই অভিযোগ নাকচ করে দেন নুর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105833 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1