বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা উপসর্গে ৬ জেলায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু

যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০

করোনা উপসর্গ নিয়ে দেশের ছয় জেলায় ১৩ জনের মৃতু্য হয়েছে। শনিবার ও রোববার বরিশালে চারজন, কুমিলস্নায় পাঁচজন, সাতক্ষীরায় একজন, বাগেরহাটে একজন, চাঁদপুরে একজন এবং রাজশাহীতে একজন মারা যান। আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : বরিশাল : বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে চারজনের মৃতু্য হয়েছে। শনিবার বিকালে থেকে রোববার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালের আইসোলেশন ও আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃতু্য হয়। শেবাচিম হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ১০-৩০ মিনিটে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাসিন্দা কদম আলী (৬৫) শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতু্যবরণ করেন। তিনি ভোর ৪টার দিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। মৃতু্যর পর তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এর আগে সকাল ৭টায় ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার সুফিয়া বেগম (৬০) শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতু্যবরণ করেন। তিনি শনিবার রাত পৌনে ১টার দিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, শনিবার রাত পৌনে ১টায় শেবাচিম হাসপাতালের এক চিকিৎসকের স্বজন আ. গনি হাওলাদার (৭০) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতু্যবরণ করেন। তিনি গত ৭ জুলাই সকাল ৯টার দিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হলে রিপোর্টে করোনা নেগেটিভ আসে। এ ছাড়া শনিবার বিকালে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার পূর্ব সাতলা গ্রামের সন্তস কুমার রায় (৬৮) শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি ১১ জুলাই বিকাল ৩টার দিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, মৃত চারজনের মধ্যে একজনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। বাকি তিনজনের নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তাদের রিপোর্ট পেলে তারা করোনা আক্রান্ত ছিলেন কিনা, সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। কুমিলস্না : কুমিলস্না মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে স্থাপিত কুমিলস্না কোভিড-১৯ হাসপাতালে রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন পাঁচজন। এর মধ্যে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) তিনজন, আইসোলেশন ওয়ার্ডে একজন এবং করোনা ওয়ার্ডে একজন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং দুইজন নারী। হাসপাতালের পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান রোববার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় আইসিইউতে মারা যান কুমিলস্নার বরুড়া পৌর এলাকার ৬০ বছরের এক নারী, রাত সাড়ে ১১টায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৬৫ বছরের এক পুরুষ এবং রাত ৯-২০ মিনিটে কুমিলস্নার সদর দক্ষিণ উপজেলার ৯০ বছরের এক পুরুষ। রোববার ভোররাত ৪-৪০ মিনিটে করোনা ওয়ার্ডে মারা যান কুমিলস্নার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ২২ বছরের এক ৪ তরুণী। শনিবার সকাল ৭-৫০ মিনিটে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা যান কুমিলস্নার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ৮০ বছরের এক পুরুষ। হাসপাতালের পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে এই হাসপাতালে ১২০ জন রোগী ভর্তি আছেন। রোগীদের মধ্যে পুরুষ ৭৭ জন এবং নারী ৪৩ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে ১০ জন, করোনা ওয়ার্ডে ৬৫ জন এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৪৫ জন। সাতক্ষীরা : করোনা উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক বৃদ্ধার (৬০) মৃতু্য হয়েছে। রোববার ভোর ৫টার দিকে তিনি মারা যান। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শনিবার রাত ১২টার দিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন তিনি। এরপর রোববার ভোর ৫টার দিকে তার মৃতু্য হয়। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়ন্ত কুমার সরকার জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার মৃতদেহ দাফনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। বাগেরহাট : করোনা উপসর্গ নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় বাগেরহাট সদর হাসপাতালে জেলা সহকারী আনসার কমান্ড্যান্ট মো. মিজানুর রহমান (৫০) মারা গেছেন। তিনি ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। সব মিলিয়ে রোববার সকাল পর্যন্ত বাগেরহাট জেলায় স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক, সংবাদকর্মী, শিক্ষক ও সরকারি কর্মজীবীসহ মোট সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩১১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৯০ জন। বাগেরহাট সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমাউন কবির রোববার বলেন, খুলনা ও যশোর পিসিআর ল্যাব থেকে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হিসাবে সকালে জেলায় ২৩ জনের নতুন তালিকা প্রেরণ করেছে। ফলে রোববার পর্যন্ত জেলায় মোট ৩১১ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। চাঁদপুর : চাঁদপুরের শাহরাস্তির অ্যাডভোকেট এহসানুল হক গনি পাটোয়ারি (৫০) জ্বর সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শনিবার বিকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা তাকে দ্রম্নত হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই রাতেই তিনি মারা যান। তিনি সাবেক মেহের উত্তর ইউপির চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হক পাটোয়ারির জ্যেষ্ঠপুত্র। রাত ৯টায় জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। রাজশাহী : রাজশাহীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের মৃতু্য হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় নগরীর অভায়ার মোড় এলাকায় মেয়ের বাসায় হোম কোয়ারেন্টিনে তিনি মারা যান। মৃত ট্রাফিক পুলিশের নাম মোজাফ্‌ফর হোসেন (৫৫)। তিনি রাজশাহী মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের হাজি গোবিন্দপুর গ্রামের ফকিরপাড়ায়। তার বাবার নাম মৃত জাবান আলী। তার পরিবার গ্রামের বাড়িতে এবং তিনি পুলিশ লাইন্স ব্যারাকে থাকতেন। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, তিনি গত ৭ জুলাই জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তিনি পুলিশ হাসপাতালে যোগাযোগ করে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নগরের মেয়ের বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে চলে যান। সেখানে তিনি রোববার সকালে মারা যান। তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে