বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইসির সিদ্ধান্ত নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পরিপন্থি বিশিষ্টজনদের অভিমত

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

৩৩ শতাংশ নারী সদস্যপদ পূরণের সিদ্ধান্ত দলের ওপর ছেড়ে দিয়ে দল নিবন্ধনে নতুন আইন প্রণয়ন করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তটিকে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পরিপন্থি মনে করছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, দলগুলোকে সবপর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীপদ পূরণে বাধ্য করতে হবে।

মঙ্গলবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি।

সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন ফোরাম সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাহী সদস্য ওয়াহিদা বানু, পস্ন্যান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি কাশফিয়া ফিরোজ, বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সভাপতি অ্যাডভোকেট রাশিদা আক্তার শেলী, গুড নেইবারস'র নির্বাহী পরিচালক এমএম মাইনুল, ওয়াইডবিস্নউসিএ'র প্রতিনিধি বিনা অধিকারী, সুশাসনের জন্য নাগরিকের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।

গত ১৬ জুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন-২০২০ প্রণয়ন করার লক্ষ্যে একটি খসড়া অনলাইনে প্রকাশ করে নাগরিক সমাজ ও দলগুলোর কাছে মতামত চায় নির্বাচন কমিশন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে দল নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে দলের সবপর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীপদ পূরণের জন্য ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়া আছে। কিন্তু নতুন আইনের খসড়ায় সময়সীমা তুলে দিয়ে নারীপদ পূরণের বিষয়টি দলের ওপর ছেড়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

লিখিত প্রবন্ধে নাছিমা আক্তার জলি বলেন, আমরা জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ও বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে মনে করি, নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাব গৃহীত হলে তা হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ তথা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পরিপন্থি।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জনের বাধ্যবাধকতা ২০০৮ সালে নির্ধারিত হলেও প্রায় এক যুগেও রাজনৈতিক দলসমূহ এ ক্ষেত্রে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটিতে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২০ শতাংশ নারী রয়েছেন। শুধু 'গণফ্রন্ট' ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলই শতকরা ৩৩ ভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কাছাকাছি যেতে পারেনি।

এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি তো করেইনি, বরং ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণকে 'অবাস্তব' ও 'অকার্যকর' আখ্যা দিয়ে সময়সীমা তুলে দেওয়ার স্বপক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল যদি নিবন্ধনের শর্তসমূহ মেনে না চলে, তবে তা মানানোর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা করছে না।

তিনি বলেন, আমরা জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ও বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলতে চাই, বাংলাদেশ 'নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদে (সিডো সনদ)' স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। আমাদের নারী উন্নয়ন নীতিমালায় নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহকে তাদের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বাধ্য করতে হবে।

ওয়াহিদা বানু বলেন, যেখানে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষের অর্ধেক থাকা উচিত, সেখানে যদি ৩৩ শতাংশও না থাকে, তাহলে আমাদের এতদিনের অর্জন ভুলুণ্ঠিত হয়ে যাবে। সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করতে হলে সব দল যাতে মানদন্ড বজায় রাখে, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

কাশফিয়া ফিরোজ বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য নারী নেতৃত্ব একটি বড় জায়গা। সর্বস্তরে নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করা না গেলে এসডিজি অর্জন করা সম্ভব হবে না।

অ্যাডভোকেট রাশিদা আক্তার শেলী বলেন, এমনিতেই নারীদের মূল্যায়ন কম হয়, সেখানে ৩৩ শতাংশও তুলে দিলে নারীর মূল্যায়ন আরও কমে যাবে। এটা আমাদের জন্য আত্মঘাতী হবে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন কার স্বার্থে এই আইনটা করছে, তা আমার বোধগম্য নয়। তারা জনস্বার্থে কাজ করার কথা। জনগণের পক্ষ থেকে এ রকম কোনো দাবি ওঠেনি, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও নতুন আইন করার দাবি আমরা দেখিনি। তাহলে স্বপ্রণোদিত হয়ে কমিশন এই আইন কেন করছে? এই আইন সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমি কমিশনকে এই অপচেষ্টা থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105194 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1