শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির শঙ্কা

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ জুলাই ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০১ জুলাই ২০২০, ১৩:৪৮
গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বসতি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাটসহ পস্নাবিত হয়েছে নতুন নতুন গ্রাম। ছবিটি মঙ্গলবার গাইবান্ধার ফুলছড়ি থেকে তোলা - পিবিএ

দেশের কিছু অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হলেও ভারতীয় অংশে তা হচ্ছে না। ফলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানির স্তর স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা একই অবস্থায় থাকতে পারে। অন্যদিকে মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায় কমতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। সিলেট ও সুনামগঞ্জেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। মঙ্গলবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এসব তথ্য জানিয়েছে। তারা আরও জানায়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও উন্নতির দিকে থাকলেও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কিছু অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যে পদ্মার গোয়ালন্দ অংশে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর মুন্সিগঞ্জের ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর মানিকগঞ্জের আরিচা অংশেও পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি স্টেশনের মধ্যে ৬৩টির পানি বাড়ছে, ৩৬টির কমছে ও ২টির পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি বাড়তে থাকা স্টেশনগুলোর মধ্যে ১৫টি স্টেশনে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তার মধ্যে ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম অংশে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা অংশে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া অংশে ৫৯ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী অংশে ৭০ সেন্টিমিটার, যমুনার ফলছড়ি অংশে ৮৩ সেন্টিমিটার, যমুনার বাহাদুরাবাদ অংশে ৮৬ সেন্টিমিটার, যমুনার সারিয়াকান্দি অংশে ৬৬ সেন্টিমিটার, যমুনার কাজিপুর অংশে ৭০ সেন্টিমিটার, যমুনার সিরাজগঞ্জ অংশে ৪১ সেন্টিমিটার, আত্রাইয়ের বাঘাবাড়ি অংশে ২১ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরীর এলাসিন অংশে ১৯ সেন্টিমিটার, পদ্মার গোয়ালন্দ অংশে ২০ সেন্টিমিটার, সুরমার কানাইঘাট অংশে ১৩ সেন্টিমিটার, সুরমার সুনামগঞ্জ অংশে ১৫ সেন্টিমিটার এবং পুরাতন সুরমার দিরাই অংশে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আমাদের স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার সারিয়াকান্দির নিকট যমুনা নদীর পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার যমুনা নদীর সারিয়াকন্দি পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৬৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে চরাঞ্চলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। বিশেষ করে চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কাজলা, কামালপুর ও সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের পাট, ধানসহ বেশকিছু ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। আমাদের দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার দুর্গাপুরে টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেতাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতে বাঁধ না থাকায় উপজেলার গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের বন্দ উষান, ভাদুয়া, জাকিরপাড়া, শ্রীপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ? সোমবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্দ উষান গ্রামের জয়নাল আবেদীনের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বসতঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নৌকা ও কলার ভেলা তৈরি করে মানুষ প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন পানিবন্দি পরিবারগুলো। ঝুঁকিতে আছে বন্দ উষান বাজার, এলাকার বিদ্যালয়, মজজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা। চরম ঝুঁকির শঙ্কায় রয়েছেন অসংখ্যা ঘরবাড়ির বাসিন্দারা। আমাদের (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং ভারী বর্ষণে কাজীপুর পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে নদীর দু'কূল ছাপিয়ে চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নের বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে লক্ষাধিক মানুষ। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে পাট, আউশ ধান, ভুট্টা, বাদাম, সবজি খেত বীজতলা ও গোচারণ ভূমি। বিশেষ করে কাজীপুরের সিংহভাগ কৃষকের সোনালি স্বপ্নের ভিত গড়ে দেওয়া পাটখেত পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ.কে.এম. রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় কাজীপুরে যমুনায় বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে আশার কথা কর্তৃপক্ষ বুধবার থেকে কমার আশা করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে