শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
স্কুল ও কলেজে আলাদা বরাদ্দ

নন-এমপিও শিক্ষকদের জন্য ১২৬ কোটি টাকা চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়

কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য ৮ হাজার অথবা ৫ হাজার, কর্মচারীদের জন্য ৪ হাজার অথবা আড়াই হাজার টাকা করে দুটি বিকল্প রেখে প্রস্তাব করা হয়েছে
নূর মোহাম্মদ
  ০৪ জুন ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় আড়াই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে সবচেয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি'সহ অন্যান্য খাত থেকে অর্থ আদায় করতে না পারায় অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বন্ধ রয়েছে। ঈদের বোনাসও হয়নি। এ অবস্থায় সারাদেশে ২ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অসহায় এসব শিক্ষকের আর্থিক সহায়তায় উদ্যোগী হয়ে এককালীন আর্থিক অনুদান দিতে ১২৬ কোটি টাকা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সায় পেলে অর্থ বিভাগের অনুমতি চাবে মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেনের স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় স্কুল ও কলেজের জন্য আলাদা আলাদা থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য ৮ হাজার অথবা ৫ হাজার, কর্মচারীদের জন্য ৪ হাজার অথবা আড়াই হাজার টাকা করে দুটি বিকল্প রেখে প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রথম প্রস্তাবে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য এককালীন ৮ হাজার এবং কর্মচারীদের জন্য ৪ হাজার টাকা করে চাওয়া হয়েছে। এতে কলেজ পর্যায়ে ৮৪ হাজার ৮১৮ জন শিক্ষকের জন্য প্রায় ৩৯ কোটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার টাকা এবং ৩৪ হাজার ৭৬২ জন কর্মচারীর জন্য প্রয়োজন ১৩ কোটি ৯০ লাখ ৮ হাজার। স্কুল পর্যায়ে ৬৬ হাজার ৫০৭ জন শিক্ষকের জন্য প্রয়োজন ৫৩ কোটি ২০ লাখ ৫৬ হাজার এবং ৫০ হাজার ৪৫৫ জন কর্মচারীর জন্য প্রয়োজন ২০ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রথম প্রস্তাবে মোট টাকা প্রয়োজন ১২৬ কোটি ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য এককালীন ৫ হাজার এবং কর্মচারীদের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে ৭৮ কোটি ৯৬ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা লাগবে। জানা গেছে, প্রস্তাব দুটির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যেটির অনুমোদন দিবেন সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি যায়যায়দিনকে বলেন, এমপিওভুক্ত হয়নি এমন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এ নগদ প্রণোদনা যাদের দেওয়া হবে, তারা সবাই নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের। পূর্বে এসব প্রতিষ্ঠান কোয়ালিফাইড বিবেচিত হয়নি বলেই এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। এরপরও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে খুবই ভালো। আরও কিছু মোটেও ভালো না। এজন্য সব মিলিয়ে একটা তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, যেন প্রকৃত শিক্ষকরা এর আওতায় আসতে পারেন। একটি ডাটাবেইজ তৈরির জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নাম্বার চাওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবে এ টাকা চাওয়ার যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। টেকসই উন্নয়নের জন্য সমগ্র বিশ্বে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ২৭৩০টি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক কর্মচারীকে এমপিওভুক্তির আওতায় এনে তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে অর্থ বছরে এ বিশাল সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্তির আওতায় নিয়ে আসায় দেশের বিশাল সংখ্যক শিক্ষকদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রায় ৭ হাজার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। যারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টিউশন ফি, অন্যান্য ফি এবং প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ফান্ড থেকে তদের বেতন ভাতা পেয়ে থাকেন। ঢাকাসহ বড় বড় শহরে কিছু প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে মফস্বল শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা সন্তোষজনক নয়। ফলে দেশের বর্তমান এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা নীরবে প্রচন্ড আর্থিক সংকটের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। তাদের পেশাগত কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে সহযোগিতা নিতে পারছেন না। সরকারের দেওয়া কোনো সহায়তা কর্মসূচিতেও তারা অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের বিশেষ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের আনা প্রয়োজন।

এদিকে, গত ২৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন দেশের সব জেলা প্রশাসকের কাছে নন-এমপিও স্কুল কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের নির্ধারিত ছকে তালিকা চেয়েছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে যাচাই করে ২৮ মের মধ্যে জেলা প্রশাসকদের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তথ্য চেয়ে পাঠানো নির্ধারিত ছকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিকাশ, রকেট, নগদ ও শিওর ক্যাশের নম্বরও চাওয়া হয়েছে। এছাড়া নামের বানানসহ এনআইডি নম্বর চাওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন আর্থিক অনুদান দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ সংকটকালীন অবস্থায় শিক্ষকদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান।

মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে রয়েছে ৭ হাজারের বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ২ লাখ ৫৪২ জন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<101215 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1