শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আম্পানে ক্ষতি, তবুও পূরণ হবে বোরোর লক্ষ্যমাত্রা

যাযাদি রিপোর্ট
  ৩১ মে ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাসের পরোক্ষ প্রভাবে এবং সুপার সাইক্লোন আম্পানের আঘাত ও কালবৈশাখীতে দেশব্যাপী বোরো ধানের ক্ষতি হলেও জাতীয় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদিত বোরো ধানে ২ কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার টন চাল উৎপাদন হবে। এ বছর মোট ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে।

তারা বলছেন- ঝড়, বৃষ্টি, সাইক্লোনসহ বিভিন্ন দুর্যোগে যে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা বাদ দিয়েই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সুতরাং করোনা, আম্পান ও কালবৈশাখীতে দেশব্যাপী বোরো ধানের যে ক্ষতি হয়েছে, এটা না হলে সেটা হতো লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত। তাই তারা জোর দিয়েই বলছেন, সরকার বোরো ধানের চালের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তা পূরণ হবে।

আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ধানচাষিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সুপার সাইক্লোন আম্পান আসার আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে নোটিশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, সেসব জমির ৮০ ভাগ ধান পেকে গেছে, সেগুলো কেটে ফেলার জন্য। এমন নির্দেশনা পাওয়ার পর, অনেকে ৭০ ভাগ পেকেছে এমন জমির ধানও কেটে ফেলেছেন। আম্পানের কারণে আগে যারা ধান কেটেছেন সেখানেও ২০ থেকে ৩০ ভাগ ফলন কম হয়েছে। যারা কাটতে পারেননি তাদের শতভাগই পানিতে ডুবে গেছে। এই ক্ষতি এবং এখন কালবৈশাখীতে ধানের যে ক্ষতি হচ্ছে, তাতে জাতীয় ফলনেও প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে চলতি বোরো মৌসুমে ২ কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন চালের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পূরণ হবে কি না সেটা নিয়েও অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, যেটা ক্ষতি হয়েছে সেটা সারপস্নাস (উদ্বৃত্ত) থেকে হয়েছে। সে কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোনো অসুবিধা হবে না।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বোরো মৌসুমে ২ কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এবার হাওড়ের সাত জেলায়- কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু হাওড়েই ৪ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমি। হাওড় অঞ্চলে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। সারা দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ২০ ভাগের জোগান দেয় হাওড় অঞ্চলের বোরো ধান। হাওড়ের ধান ঘরে ওঠায় লক্ষ্যমাত্রা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে।

আম্পান আঘাত হানার পরেরদিনই ২১ মে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'দেশে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে মোট এক লাখ ৭৬ হাজার ৭ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে।'

তিনি বলেন, ' আম্পানের আগে উপকূলীয় অঞ্চলের ১৭টি জেলার শতকরা ৯৬ ভাগসহ সারা দেশে ইতোমধ্যে ৭২ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। খুলনা অঞ্চলে প্রায় ৯৬ থেকে ৯৭ ভাগ ধান কাটা হয়। সাতক্ষীরাতেও ৯০ ভাগের বেশি ধান কাটা হয়েছে। পটুয়াখালীরও প্রায় সব ধান কাটা হয়। তবে ভোলাতে ধানের ক্ষতি হয়েছে। এর পরও আমাদের চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। খাদ্য ঘাটতিরও কোনো আশঙ্কা নেই।'

আম্পানে কৃষকের ধানের ক্ষতির বিষয়ে কথা হয় ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য (সচিব) ড. এম এ সাত্তার মন্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় আম্পানে অনেক কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে যেসব কৃষক ধান কেটেছেন তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে কালবৈশাখী হচ্ছে। আম্পান এবং কালবৈশাখীর কারণে কৃষকের ধান নষ্ট হলেও খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। এতে মোট ফলনে প্রভাব পড়বে ও কৃষক ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেটা আমাদের সারপস্নাস হওয়ার কথা ছিল, সেটা হবে না। সরকার উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সেটাও ঠিক থাকবে।'

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান ধানের উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে বলেন, 'ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যখন নির্ধারণ করা হয় তখন ঝড়, ঝঞ্ঝা, সাইক্লোন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি- এসব ধরেই নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু এবার হাওড়ের ফসলটা পুরোটাই এসেছে, সে কারণে অন্য কোনো ক্ষতি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বড় কোনো সমস্যা করবে না। এবার ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। সে কারণে সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা পূরণ হবে।'

তিনি বলেন, 'কৃষিকে টেকসই করতে হলে বাংলাদেশে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে শিল্প গবেষণা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা খুবই জরুরি।'

আরেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগ্রিকালচার অ্যান্ড সিড প্রোগ্রামের (সিসিডিবি) কো-অর্ডিনেটর সমীরণ বিশ্বাস বলেন, 'যেসব এলাকায় সুপার সাইক্লোন আম্পান আঘাত এনেছে, সেসব এলাকায় ধানের আবাদ খুব বেশি হয় না। যা হয়েছে তার ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ ধান আগেই কাটা হয়ে গেছে। আম্পানে যে ক্ষতি হয়েছে, তা জাতীয় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। এ ছাড়া খাদ্যে উৎপাদনে বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পন্নতায় কোনো ব্যত্যয় ঘটাবে না।'

তিনি বলেন, ' আম্পানে দক্ষিণাঞ্চলে ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে তরিতরকারিসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100784 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1