শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শর্ত পূরণ ছাড়াই উপবৃত্তি পাচ্ছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা

নুর মোহাম্মদ
  ৩১ মে ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ৩১ মে ২০২০, ১০:৩১

করোনা প্রার্দুভাব ঠেকাতে ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত ছুটি বাড়ালেও জুন মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় সারাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি সুবিধাভোগী ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির কি হবে? কারণ উপবৃত্তি পেতে হলে শিক্ষার্থীর ৮৫% উপস্থিত থাকা, পরীক্ষার ৩৩ নম্বর পাওয়াসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। বন্ধের সময়কালে এসব শর্ত পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই উপবৃত্তি পাবেন কি-না এমন দুশ্চিন্তায় আছেন ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। তাদের জন্য সুসংবাদ দিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। উপবৃত্তি পাওয়ার যেসব শর্ত ছিল তা শীতিল করে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সবাইকে উপবৃত্তি আওতায় রাখা হবে। অর্থাৎ এ সময়কালে উপবৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো শর্তারোপ করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. ইউসুফ আলী যায়যায়দিনকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মার্চ থেকে শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় উপবৃত্তি পাওয়ার যেসব শর্ত রয়েছে তা কোনো শিক্ষার্থীই পূরণ করতে পারবে না। সেজন্য জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসের উপবৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শর্ত আরোপ করা হবে না। সবাই উপবৃত্তির আওতায় আসবে। প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে প্রাক-প্রাথমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংযুক্তি প্রাথমিক স্তর, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত প্রাথমিক স্কুল, ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম পর্যন্ত চালু করা সরকারি প্রাথমিক স্কুল, সরকার স্বীকৃতপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা এবং হাই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এ বৃত্তি পেয়ে থাকেন। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পেতে হলে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকে ৮টি শর্ত পূরণ করতে হয়। তারমধ্যে সব শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীকে (প্রাক-প্রাথমিক ও নতুন ভর্তিকৃত ১ম শ্রেণি ব্যতীত) বার্ষিক পরীক্ষায় প্রতি বিষয়ে নূ্যনতম ৩৩ নম্বর পাওয়া, প্রতি মাসে ৮৫% এবং পাহাড়ি এলাকায় ৭৫% পাঠদিবসে উপস্থিত থাকা এবং যে সকল শিক্ষার্থী যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া নির্ধারিত পরীক্ষা অংশ নেবে না তাদের পরবর্তী পরীক্ষা পর্যন্ত উপবৃত্তি বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য একইভাবে প্রতিষ্ঠানকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় কমপেক্ষ ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকা এবং মাদ্রাসার রেজিস্ট্রেশন হালনাগাদ থাকতে হবে। এছাড়া পরিদর্শনকালে যেসব প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক আবহাওয়ার দিনে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ৬০ শতাংশের কম পাওয়া যাবে সেসব প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর গড় উপস্থিতি কাঙ্ক্ষিত হারের চেয়ে কম হবে সেসব প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তি সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান পরবর্তী তিনমাসের মধ্যে উপস্থিতির হার বাড়াতে পারলে উপবৃত্তি পুনরায় চালু হবে। এছাড়াও একই পরিবারের একাধিক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এক বা একাধিক শিক্ষার্থী উপবৃত্তির শর্ত ভঙ্গ করলে বাকিদের উপবৃত্তি কর্তন করা হবে। যেমন এক পরিবারের তিনজন থাকলে একজন এবং চারজন থাকলে দুইজন উপবৃত্তি পাবে। কিন্তু করোনাকালীন সময় ও তার আগের তিন মাস এসব শর্ত পূরণ ছাড়াও উপবৃত্তি পাবে শিক্ষার্থী। এটাকে দারুণ সুসংবাদ হিসেবে দেখছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। তারা বলছেন, এর ফলে করোনা সময়ের ঝরে পড়ার যে আশংকা তৈরি হয়েছিল তা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ যায়যায়দিনকে বলেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এছাড়াও মুজিববর্ষ উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের ১০০০ টাকা করে দেয়ার ঘোষণা করোনার পরবর্তী গরিব শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এদিকে গত ডিসেম্বর শেষ হওয়া প্রকল্পটি আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সায় পাওয়ার পরই গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের বকেয়া উপবৃত্তির ২৯১ কোটি ৮৪ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া করোনাকালীন জানুয়ারি থেকে জুনের (দুই কিস্তি) উপবৃত্তি একসঙ্গে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রকল্পের নতুন সংশোধনীতে প্রধানমন্ত্রী প্রতি শিক্ষার্থীকে জামা, জুতা ও ব্যাগ কেনার জন্য এক হাজার করে 'অ্যালাউন্স' দেয়ার টাকাও ছাড় করেছে সরকার। এ টাকাও উপবৃত্তির সঙ্গে একসঙ্গে দেয়া হবে। সেজন্য এপ্রিল মাসে উপজেলার উপবৃত্তির চাহিদা চেয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের দেয়া প্রকল্প থেকে। গত ১৪ মের মধ্যে তথ্য দেয়ার সময়সীমার মধ্যেই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা চাহিদা পাঠিয়েছে। সে চাহিদার প্রেক্ষিতে টাকা ছাড়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে উপবৃত্তি প্রকল্প। জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ের ভর্তি ও উপস্থিতির হার বাড়ানো, ঝরেপড়া কমানো, প্রাথমিক শিক্ষাচত্রেম্নর সমাপ্তির হার বাড়ানো, শিশুশ্রম রোধ, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার এবং প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য ১৯৯৯ সালে উপবৃত্তি প্রকল্প শুরু হয়। বর্তমানে তৃতীয় মেয়াদ চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে