শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
চিকিৎসকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

সব হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৯ মে ২০২০, ০০:০০

দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে কোভিড-১৯ এবং অন্য সব ধরনের রোগীকে আলাদা ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হাসপাতাল মালিকদের কাছ থেকে।

তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, এর মধ্য দিয়ে আরও বেশি কোভিড-১৯ রোগীকে হাসপাতালের সেবার আওতায় আনা যাবে। আর কোভিড-১৯ এর বাইরে অন্য রোগীদের যে ভোগান্তি এতদিন হচ্ছিল, তারও কিছুটা লাঘব হবে।

তবে লোকবল ও অন্যান্য সক্ষমতার বিবেচনায় সব হাসপাতালে আলাদা ইউনিট খুলে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া কতটা সম্ভব সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

সারাদেশে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতিমধ্যে ৩৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, গত এক সপ্তাহেই শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি রোগী। এ পর্যন্ত ৫৪৪ জনের মৃতু্যর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া রোগীদের বেশিরভাগই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনাভাইরাসের জন্য কিছু হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিয়ে সেখানে বাকিদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে অন্য রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল প্রায়ই। তাতে ভোগান্তিতে পড়ছিলেন ক্যানসার, হৃদরোগ, কিডনিসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগে আক্রান্তরা।

এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সুপারিশে সরকার সব হাসপাতালে সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ মে দেশের সব সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের সংগঠনকে চিঠি পাঠানো হয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে।

সেখানে বলা হয়, '৫০ শয্যা ও তার বেশি শয্যাবিশিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দেওয়া হলো।'

সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের গঠিত জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির একজন সদস্য তিনি।

তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে তারা একই হাসপাতালে তিনটি জোন করার পরামর্শ দিয়েছেন। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের রেড জোনে; উপসর্গ বা সংক্রমণের ঝুঁকি আছে, এমন রোগীদের ইয়েলো জোনে এবং বাকিদের গ্রিন জোনে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেখানে।

এ পদ্ধতি চালু করা গেলে যে কেউ যেকোনো হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন বলে মনে করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

'নন কোভিড পেশেন্টরা খুবই সাফার করছিল। চিকিৎসা পাচ্ছিল না তারা। সাধারণ রোগ নিয়েও হাসপাতালে গেলে বলা হচ্ছিল- 'কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে নিয়ে আস'। আমার মতে, এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। হাসপাতালে আসার সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের শ্রেণি অনুযায়ী ভাগ করে নির্দিষ্ট জোনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সংক্রমণ রোধে সবাই পিপিই পরবে।'

তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় একই হাসপাতালে কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া খুবই কঠিন বলে মনে করেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এবং নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করতে হলে হাসপাতালগুলোতে আলাদা ভবন, প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ, জনবলসহ অন্যান্য সুবিধা থাকতে হবে।

'সরকারি ছোট হাসপাতালগুলোতেও এ পদ্ধতিটি চালু করা কঠিন হবে। তাতে কোভিড-১৯ রোগীদের থেকে বাকিদের মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকবে।'

ডা. ইহতেশামুল হক বলেন, 'একটা কোভিড হাসপাতালে সার্ভিস দিতে হলে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেশি জনবল লাগে। আমাদের হাসপাতালগুলোতে তো এমনিতেই জনবল কম। সেখানে কোভিড-১৯ এবং নন-কোভিডের জন্য কীভাবে আলাদা ইউনিট করবে তা বুঝতে পারছি না। আমার মনে হয়, বিষয়টি লেজেগোবরে হয়ে যাবে।'

বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিএমএর মহাসচিব।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য আরটিপিসিআর মেশিন বসাতে হলে ল্যাবরেটরিতে বায়োসেইফটি লেভেল-২ নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে সেই অবকাঠামো, প্রশিক্ষিত জনবলের সংকট রয়েছে।

'কোভিড, নন-কোভিড আলাদা করবে- সেই সুযোগই তো তাদের নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো বড় বড় হাসপাতালই কোভিড ইউনিট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে ছোট হাসপাতাল কীভাবে করবে?'

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, তিনি সংগঠনের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তবে এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, সে বিষয়ে তিনি নিজেও নিশ্চিত নন।

\হ'এটা করতে গেলে তো কতগুলো প্রবলেম হবেই। সবাইতো ডিউটি করতে চাইবে না। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের বেতন বাড়ানোর দাবি করবে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে একইভাবে ডিল করানো হচ্ছে, এক্ষেত্রে কেউ প্রণোদনা পাবে কেউ পাবে না তা তো হতে পারে না।'

যেসব বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেবে সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীদেরও সরকারিভাবে পিপিই সরবরাহের অনুরোধ জানান তিনি।

'যতটুকু সম্ভব ততটুকু সেবা দেওয়া হবে। না হলে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। আমি ধারণা করছি, কিছু সমস্যা হবে। সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।'

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, বিশ্বের কোনো দেশে কোভিড হাসপাতাল বলে আলাদা বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল নেই।

'দেশে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে শুরুতে বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য ছিল। পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি দেখে সবাই এখন এ বিষয়ে একমত। কোভিড এবং নন-কোভিড দুই ধরনের রোগীর চিকিৎসাই এক হাসপাতালে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সব হাসপাতালকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।'

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বলেন, তারা ৫০ বা তার বেশি শয্যা আছে এমন হাসপাতালগুলোকেই কোভিড-১৯ এবং নন-কোভিড রোগীদের আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেছেন।

'হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে এটা সম্ভব। কোভিড রোগীদের জন্য বাড়তি একটু যত্ন নিতে হয়, সতর্কতা নিতে হয়। কঠিন কোনো চিকিৎসা দিতে হয় না। সুতরাং এটা সম্ভব বলে মনে করি। যারা সারা বছর ধরে মানুষকে সেবা দিচ্ছে তাদের সেই ধরনের সুবিধা আছে বলেই পারছে। আর না পারলে তারা হাসপাতাল বন্ধ করে দিক।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100567 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1