শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ মৌসুমে দর্জিপাড়ায় এমন খরা দেখেনি কেউ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ মে ২০২০, ০০:০০
পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত দুই দর্জি -ফাইল ছবি

ঈদ সামনে রেখে রমজানের শেষ দিনগুলোতে বছরের ব্যস্ততম সময় কাটে বাংলাদেশের দর্জিদের। কিন্তু কাজের চাপে হিমশিম খাওয়া সেই চিরচেনা চিত্র এবার দর্জিপাড়ায় নেই। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের মধ্যে ভরা মৌসুমেও অলস ও কর্মহীন অভূতপূর্ব সময় পার করছেন দর্জিরা।

কয়েক দশক ধরে এই পেশায় থাকা রাজধানীর দর্জিরা বলছেন, এমন সময় কখনই আসেনি তাদের। বছরজুড়ে কাজ কম থাকলেও ঈদে প্রচুর কাজ পেতেন তারা।

কাজ না থাকায় দোকান ভাড়া দিতে না পারার কথা বলছেন তারা, চলতেও হচ্ছে ধার করে; কর্মহীন হয়ে পড়ায় ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত তারা।

রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, গাউসিয়া, এলিফ্যান্ট রোডের দর্জিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাতে গুণে দুই-চারটি কাজ পাচ্ছে টেইলার্সগুলো।

পোশাক ও টেইলার্সের ব্র্যান্ড টপ টেন টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিক্সের এলিফ্যান্ট রোড শাখার ব্যবস্থাপক ইমরান শেখ বলেন, এ রকম ঈদ আসবে, কখনো ভাবেননি তিনি।

'আমরা কেন, কেউই এমনটা দেখেনি। প্রতি ঈদেই প্রত্যাশা থাকে, কিন্তু এবার পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা ধরেই নিয়েছি কাজ একেবারেই কম হবে। টুকটাক কাজ হচ্ছে। মার্চে যাদের অর্ডার ছিল, সেগুলো ডেলিভারি দিচ্ছি। আর যাদের খুব জরুরি দরকার, তারা অর্ডার দিচ্ছে।'

এক দশকের বেশি সময় টপ টেনে কর্মরত ইমরান বলেন, 'নিজেদের ও কর্মচারীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা কিছু কাজ করছি। একেবারে কাজ না করলে স্যালারি দেয়াটাই কঠিন হয়ে পড়ে।'

কাটিং মাস্টার শ্যামল মিয়া ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রয়েছেন পোশাক তৈরির এই পেশায়। গাউসিয়ার শতরূপা লেডিস টেইলার্সের এই কর্ণধার কর্মহীন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি আগে কখনো।

তিনি বলেন, 'এইবারের ঈদটা এভাবে কাটবে, স্বপ্নেও ভাবি নাই। উল্টা আশা কইরা রইছিলাম, এইবার আগের বারের চেয়ে বেশি কাজের অর্ডার নিব। কাউকে ফিরায় দিব না। বছরের সবচেয়ে বেশি ইনকাম তো এই সময়টায়ই।'

লকডাউনের কারণে দোকান বন্ধ থাকায় জমানো টাকাও ফুরিয়ে এসেছে তার। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে চলবেন, তা নিয়ে আশঙ্কায় শ্যামল।

'অনেকে তো বাসায় কাজ করে। কিন্তু আমার ঘরে কোনো মেশিনও নেই, বাসার আশপাশের কয়েকজন কাপড় বানায় দেয়ার কথা বলছে। কিন্তু সেই উপায়ও তো নাই। এমন দিন দেখতে হবে কোনদিন ভাবি নাই। খুব কষ্টে চলতে হচ্ছে। সামনে কী হবে, কে জানে?'

এই মার্কেটের আরেক দর্জি সাত্তার মার্কেট খুলে দেয়ার কয়েকদিন পর দোকান খুললেও ক্রেতা না পাওয়ায় দোকান বন্ধ রেখেছেন।

তিনি বলেন, 'মার্কেট খুলে দেয়ার পর অনেক আশা করে দোকান খুলছি, ঈদে তো কিছু কাজ পাব। কিন্তু কোনো কাজই পাই নাই। কাস্টমার আসে না। তাই বন্ধ করে দিছি।'

বাসায় সেলাই মেশিনসহ পোশাক তৈরির সরঞ্জাম থাকায় কিছু কাজ করতে পারছেন সাত্তার।

ধানমন্ডি লেডিস টেইলার্সের এই স্বত্বাধিকারী বলেন, 'পরিচিত যেসব কাস্টমার আছে, তারা ফোনে যোগাযোগ করে বাসায় এসে অর্ডার দিয়ে যায়। আবার বাসা থেকেই নিয়ে যায়। একেবারে কাজ না করতে পারলে তো না খেয়ে মরতাম।'

দোকানের তিন মাসের ভাড়া বাকি থাকলেও নিজের কর্মচারীকে টাকা দিয়ে চালাতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মিরপুরের উত্তর কাজীপাড়ার বিসমিলস্নাহ টেইলার্সের মালিক হাসানুজ্জামান নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দোকান বন্ধ রেখেছেন।

তিনি বলেন, 'এখন দোকান খোলা থাকলে কিছু কাজ হয়ত পেতাম, কিন্তু কাস্টমাররা একেকজন একেক মার্কেট থেকে কাপড় কিনবে। যে কারও মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। আর আমি আক্রান্ত হলে আমার পরিবারও আক্রান্ত হবে। সে কারণে একেবারে অফ রাখছি।

'এক বছর কাজ না করে কম খাই, কিন্তু সুস্থভাবে বেঁচে থাকি। করোনাভাইরাসের কারণে যদি জান নিয়ে টানাটানি হয়, সেটার চেয়ে তো এটাই ভালো।'

জমানো টাকা না থাকলেও আত্মীয়দের সহায়তায় চলছেন বলে জানান তিনি।

তবে শপিংমল বা মার্কেটের তুলনায় পাড়া-মহলস্নার দর্জিরা কিছুটা কাজ পেয়েছেন। মিরপুর ১২ নম্বরের আধুনিক টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী ইদ্রিস আলী বলেন, অন্যান্য ঈদের তুলনায় অনেক কম কাজ পেয়েছেন এবার।

তিনি বলেন, লকডাউনের প্রথম থেকে দোকান একেবারে বন্ধ রেখেছিলাম। ঈদে কিছু কাজ পাব, তাই আবার খুলছি। কিন্তু আমি যে ধারণা করেছিলাম, এর চেয়ে অনেক বেশি কাজ পাইছি।

'আমাদের তো বাড়ি ভাড়া, দোকান ভাড়া দিয়ে চলতে হবে। তাই কাজ না করে উপায় নাই। যদি চলতে পারতাম, তাহলে ঘর থেকে বেরই হতাম না।'

শপিং কমপেস্নক্স বা বড় দর্জি দোকানগুলো বন্ধ থাকায় বেশি কাজ পেয়েছেন বলে মনে করেন তিনি।

'ঈদে তো অন্যবার দামি দামি ড্রেস বড় টেইলারে অর্ডার দিত। এবার সবাই সাধারণ পোশাকই বানাচ্ছে। বাচ্চাদের পোশাকই বেশি।'

নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই কাজ করার চেষ্টা করছেন তারা, মাস্ক ব্যবহার করছেন সব সময়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100370 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1