পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে লকডাউন ঘোষণা করায় পর্যটন খাতে বিনিয়োগকারীরা বিপাকে পড়েছেন। ১৮ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল টানা ১৮ দিনের লকডাউনে কুয়াকাটা পর্যটনশিল্পে ধস নামার কথা বলেছেন পর্যটন খাতে কয়েকশ বিনিয়োগকারী। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মোতালেব শরীফের দাবি, লকডাউনে প্রতিদিন তাদের লোকসান হচ্ছে অন্তত অর্ধ কোটি টাকা। ১৮ দিনের লকডাউনে লোকসানের পরিমাণ হবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। কুয়াকাটার শতাধিক হোটেল-মোটেলে দুই হাজার শ্রমিক কাজ করছেন, তাদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক আরও খরচ কয়েক লাখ টাকা। এ ছাড়া পর্যটন খাতে বিনিয়োগকারী টু্যর অপারেটরসহ আরও ২০০ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছে, তাদের প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। লকডাউনের সময় বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। ফলে পর্যটন খাতের এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে, ভ্রমণে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি করায় পর্যটকশূন্য হয়ে গেছে কুয়াকাটা। ১৮ কি. মি. দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের বেলাভূমে এখন কোনো পর্যটকের পদচারণা নেই। নেই স্থানীয়দের কোলাহলও। শনিবার সন্ধ্যার পর মানুষশূন্য কুয়াকাটা সৈকতে দেখা গেছে এক ভুতুরে পরিবেশ, দীর্ঘ সৈকতজুড়ে এখন বিরাজ করছে নীরবতা।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮ মার্চ পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কুয়াকাটায় পর্যটকদের বিচরণ নিষিদ্ধ করেছে টু্যরিস্ট পুলিশ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আবাসিক হোটেল-মোটেলসহ সব বিনোদনকেন্দ্র। পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করতে টু্যরিস্ট পুলিশ মাইকিং করছে। একই সঙ্গে সৈকতের অস্থায়ী সব দোকানপাট সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে কুয়াকাটা সমুদ্র উপকূলের জেলেরাও পড়েছেন বিপাকে। সমুদ্রে মাছধরা নিষিদ্ধ না থাকলেও ক্রেতা সংকটের কারণে মাছের দাম কমে গেছে। বাজারজাত করতে পারছেন না আড়ৎদাররা। যার কারণে কোনো সরকারি নির্দেশনা ছাড়াই অধিকাংশ জেলে সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ রেখেছেন। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন মৎস্যনির্ভর কয়েক হাজার শ্রমিক ও জেলে।
আবাসিক হোটেল সৈকতের মালিক জিয়াউর রহমান শেখ বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনার পর হোটেল বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত হোটেলের কর্মচারীদের ছুটি দেয়া হয়েছে। কুয়াকাটা টু্যর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, করোনাভাইরাসের কারণে পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীরা কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। টু্যরিস্ট গাইড, পর্যটননির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও টু্যর অপারেটররা সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, 'আমরা জেলা প্রশাসন ও টু্যরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরই আবাসিক হোটেল বন্ধ করে দিয়েছি। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কোনো পর্যটককে কুয়াকাটায় আবাসিক সুবিধা না দেয়ার বিষয়েও জেলা প্রশাসনের নির্দেশ রয়েছে।
\হনির্দেশের বিষয়টি কুয়াকাটার প্রায় দেড় শতাধিক আবাসিক হোটেল মালিকদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি বলে তিনি উলেস্নখ করেন।