শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুষ্টিয়ায় লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ গম চাষ

জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া)
  ২৮ মার্চ ২০২০, ০০:০০
কুষ্টিয়ায় ভুট্রা খেত -ফাইল ছবি

কুষ্টিয়া জেলায় এক সময়ে বিপুল পরিমাণে গম চাষ হতো। তবে বস্নাস্ট রোগের আক্রমণ এবং তামাকের দাপটে পিছু হটতে বাধ্য হয় গমের আবাদ। বস্নাস্ট রোগের আক্রমণে ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হন গম চাষিরা। এর পরেই বেশ কয়েকবছর মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা। তবে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর কুষ্টিয়ায় রেকর্ড পরিমাণ গম চাষ হয়েছে।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তদরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় ১৬ হাজার ৬৮৮ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চাষ হয়েছিল প্রায় ১৬ হাজার ৭১০ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল ৫০ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৮৩০ হেক্টর। চাষ হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার ৩৭০ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল ১৫ হাজার ৭৩২ মেট্রিক টন। সে বছর বস্নাস্টের আক্রমণ দেখা দেয়। এর ফলে ২০১৭-১৮ মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় গম চাষে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৩৬৮ হেক্টর। চাষ হয়েছিল প্রায় ৯ হাজার ২৯৫ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল ৩৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। চলতি ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৫০৫ হেক্টর, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৭১৫ মেট্রিক টন। গমের আবাদ ভালো হওয়ায় উৎপাদন বলে আশা করছেন ৪৫ হাজার ৪০০ মেট্রিক টনের উপরে। গমখেত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৩৮৭ হেক্টর, ভেড়ামারায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর, মিরপুরে ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর, কুমারখালীতে ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর, কুষ্টিয়া সদরে ১ হাজার ১৫০ হেক্টর এবং খোকসা উপজেলায় ৪৬৮ হেক্টর জমিতে।

এ বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে আবারও গম চাষ করছেন কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় গমও ভালো হয়েছে। তবে এ বছর জেলায় কোথাও বস্নাস্টের আক্রমণ দেখা দেয়নি। তবে কিছু স্থানে দেখা দিয়েছে মরিচা রোগ। কৃষি অফিসের তৎপরতায় তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন কৃষকরা। বর্তমানে রোগটি কৃষি বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গমচাষি মোশারফ হোসেন জানান, গমে রোগ হওয়ার কারণে কয়েক বছর আগে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। কৃষি অফিসের লোকজন এসে গম চাষ নিষেধ করেছিল। এজন্য গম চাষ করিনি। জমি তামাকের জন্য বর্গা দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বছর আবারও গম চাষ করতে বলেছে সবাই তাই গম চাষ করেছি। এ বছর বেশ ভালো গম হয়েছে। দুইবছর এই জমিতে গম চাষ বন্ধ করে রেখেছিলাম। এত সুন্দর গম আগে কখনো হয়নি। এবার বেশ ভালো ফলন পাব বলে আশা করছি।

সামছুল হক জানান, গত বছর আমার জমিতে তামাক ছিল। এ বছর ৩ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। গম বেশ ভালো হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এলাকায় গম চাষ বেড়েছে।

কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, এ বছর মিরপুর উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ গমের চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মিরপুর উপজেলায় গম চাষ হয়েছে প্রায় ১৩৫০ হেক্টর জমিতে। ২০১৫ সালে এ অঞ্চলে গমে বস্নাস্টের আক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করে। সেসময় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে আমরা এ এলাকায় গম চাষে নিষেধাজ্ঞা জারি করি। এতে বস্নাস্টের প্রার্দুভাব কম হয়। গত বছর থেকে আমরা আবার গম চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। তারা পুনরায় গম চাষে আগ্রহ দেখিয়ে চাষ করছেন। কিছু কিছু জমিতে স্বল্প পরিমাণে গমের পাতায় মরিচা রোগ দেখা দেয়। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে তা প্রায় নিয়ন্ত্রণ করেছি ফেলেছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) রঞ্জন কুমার প্রামানিক জানান, এ বছর জেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। আমরা বস্নাস্ট রোগের আক্রমণ যাতে না হয় এজন্য কৃষকদের বীজ শোধন করে বপন করিয়েছি। জেলাজুড়ে কোথাও বস্নাস্টের কোনো আক্রমণ দেখা দেয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94331 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1